কক্সবাজারে দশটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ৪ সন্ত্রাসী গ্রেফতার

কক্সবাজারে অভিযান চালিয়ে চিংড়ি ঘের দখল, অপহরণসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মূল হোতাসহ চার জনকে দেশে তৈরি ১০টি অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার। সোমবার রাতে চকরিয়া উপজেলার চিংড়ি ঘের এলাকার কোরালখালীতে এই অভিযান চালানো হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার র‌্যাব কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান র‌্যাব সদর দফতরের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ আরাফাত।

প্রেস ব্রিফিংয়ে মোহাম্মদ আরাফাত জানান, সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারের চকরিয়ার বিলুপ্তপ্রায় সুন্দরবন তথা চিংড়ি জোনে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব ও লুটপাটের কয়েকটি ঘটনা ঘটে। গত ১৯ জুন দিবাগত রাতে চিরিঙ্গা ইউনিয়নের চরণদ্বীপ মৌজার গোলদিয়ায় ১০ একর বিশিষ্ট সাতটি চিংড়ি ঘেরে হানা দেয় একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল। এ সময় তারা শতাধিক ফাঁকা গুলি ছুড়ে এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে। অস্ত্রের মুখে ঘের কর্মচারীদের জিম্মি ও হাত-পা বেঁধে ফেলে করা হয় মারধর ও বিভিন্নভাবে নির্যাতন। এরপর একে একে ঘেরগুলো দখলে নেয় সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সশস্ত্র সন্ত্রাসী ও ডাকাত দলকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব।

এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার দিবাগত রাতে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৫-এর একটি দল চকরিয়া থানার কোরালখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও ডাকাত দলের প্রধান বেলাল হোসেন (৪৫), কামাল আহমেদ (৪২) ও আব্দুল মালেককে (৩২) গ্রেফতার করে। তারা তিন জনই ওই এলাকার আকবর আহমেদের ছেলে। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে তাদের সহযোগী মৃত জহির আহমেদের ছেলে নুরুল আমিনকে (৩৫) গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয় ১০টি দেশে তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা ডাকাতি, চিংড়ি ঘের দখল ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।

র‌্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাতচক্র। গ্রেফতারকৃত বেলাল, কামাল এবং মালেক তিন ভাই। তারা অস্ত্রধারী ডাকাতদের নিয়ে ‘বেলাল বাহিনী’ গড়ে তুলে মাছের ঘের দখল, লুটতরাজ, অপহরণসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছিল। এই বাহিনীর সশস্ত্র ডাকাত সংখ্যা ১৮ থেকে ২০ জন। গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন যাবৎ কক্সবাজারের চকরিয়াসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জমি দখল, চিংড়ি ঘের দখল, লবণের মাঠ ও আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। গ্রেফতারকৃতরা দেশি ও বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য দেশি অস্ত্র দ্বারা সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখাতো এবং এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করতো।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা আধিপত্য বিস্তার ও এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির লক্ষ্যে ভাড়া করে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের নিয়ে তাদের দলের শক্তি বৃদ্ধি করে। তারা মৌসুমের পর মৌসুম মাছের ঘের মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতো। ঘের মালিকরা চাঁদা দিতে না চাইলে বেলালের নেতৃত্বে ডাকাতি করে নিয়ে যেত ঘেরের মাছ ও মাছ চাষের নানা উপকরণ। এ ছাড়াও মাছের ঘের তাদের দখলে নিয়ে নিতো এবং কর্মচারীদের মারধর করে তাড়িয়ে দিতো। এমনকি ঘের মালিক ও কর্মচারীদের অপহরণ করেও নিয়ে যেতো এবং মুক্তিপণ আদায় করতো।

গ্রেফতারকৃত বেলালের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় দুটি হত্যা ও একটি বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলাসহ বিভিন্ন অপরাধে মোট ৯টি মামলা, কামালের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় একটি পুলিশ অ্যাসল্ট ও একটি অপহরণসহ মোট ছয়টি মামলা, মালেকের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় তিনটি মামলা এবং নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় মারামারির একটি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।