উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ভোটে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ছয়টি কেন্দ্রে স্থানীয় সংসদ সদস্যের (এমপি) বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তুলে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানী সরকার। এ নিয়ে তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানী সরকার নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তার দেওয়া অভিযোগপত্রের রিসিভ কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বরাবর দেওয়া অভিযোগের অনুলিপি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ মে উপজেলা পরিষদের তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এজাহার আলী ঘোড়া প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সরকার। তার প্রতীক ছিল মোটরসাইকেল।
পুনর্নির্বাচনের দাবিতে দেওয়া অভিযোগপত্রে সদ্য সাবেক এই উপজেলা চেয়ারম্যান উল্লেখ করেছেন, ‘কুড়িগ্রাম-২ আসনের (সদর, ফুলবাড়ী ও রাজারহাট উপজেলা) সংসদ সদস্য মো. হামিদুল হক খন্দকার প্রতিপক্ষের প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য ভোটের দিন ফুলবাড়ী উপজেলায় অবস্থান করে তার লোকজনসহ ভোটকেন্দ্র দখল করেন। এ সময় গোলাম রব্বানীর এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়। সংসদ সদস্যের দুই ছেলে ও ব্যক্তিগত সহকারীসহ তার লোকজন ওতপ্রোতভাবে জড়িত থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে ব্যালট ছিনতাই করেন এবং নির্বাচনকে কলুষিত করেন।’
অভিযোগপত্রে দুই দফায় নির্বাচিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সরকার দাবি করেছেন, ভোটের দিন উপজেলার গোরকমণ্ডপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সংসদ সদস্য ও তার ছেলে উপস্থিত ছিলেন। বালারহাট আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে সংসদ সদস্যের ছেলে উপস্থিত ছিলেন। ফুলমতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী এবং ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও ফুলবাড়ী জছিমিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সংসদ সদস্যের ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’ উপস্থিত থেকে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছেন। অভিযোগ তদন্ত করে এসব কেন্দ্রে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন এই মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিক।
জানতে চাইলে অভিযোগকারী গোলাম রব্বানী সরকার বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি মহাজোটের প্রার্থী পনির উদ্দিন আহমেদের সমর্থনে কাজ করেছি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হামিদুল হক খন্দকার বিজয়ী হন। তার পক্ষে কাজ না করায় তিনি আমার উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। এজন্য উপজেলা নির্বাচনে তিনি আমার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনও সুরাহা পাইনি। নির্বাচনের দিনেও সংসদ সদস্য এলাকায় থেকে তার লোকজনসহ ছয়টি কেন্দ্রে ভোটে কারচুপি করেছেন। আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে লিখিত অভিযোগ দিয়ে ওই ছয়টি কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়েছি। আমি আশা করবো, তারা আমার অভিযোগের তদন্ত করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।’
নির্বাচনে সংসদ সদস্যের প্রভাব বিস্তার নিয়ে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ দেওয়ার প্রশ্নে পরাজিত এই সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, ‘দফায় দফায় অভিযোগ দিয়েছি। কোনও কাজে আসেনি।’ অভিযোগ নিয়ে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার প্রশ্নে ফল পেতে দীর্ঘসূত্রতার কথা জানিয়ে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।
নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার নিয়ে সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে গোলাম রব্বানী সরকারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা ফুলবাড়ী ইউএনও রেহেনুমা তারান্নুম বলেন, ‘তিনি মৌখিক অভিযোগ দিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে মাননীয় সংসদ সদস্যকে জানানোর পর তিনি আর আসেননি।’
নির্বাচনে সংসদ সদস্যের কোনও প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়া প্রশ্নে ইউএনও বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনারা এলাকায় খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে সংসদ সদস্য মো. হামিদুল হক খন্দকার বলেন, ‘ভোট নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এটি সবাই দেখেছেন। ভোটে হারলে মানুষ অনেক কিছুই বলে। আমি কোনও ক্যাম্পেইনে অংশ নিইনি। ভোটের দিন আমি ভোট দিয়ে কেন্দ্র থেকে চলে গিয়েছি। তার (গোলাম রব্বানীর) অভিযোগ ভিত্তিহীন। আর আমার ছেলেদের এলাকায় থাকতে বাধা নেই। তারা কেন্দ্রের আশেপাশে থাকতেই পারে।’