অচল দুই হাত, দুর্বল পায়ে লিখে শাহজাহানের এসএসসি জয়

জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহজাহান শেখ। হাঁটাচলার সামর্থ্য কিংবা দুই হাতে কিছু ধরার শক্তি নেই তার। তবে দুর্বল পায়ে কলম ধরে লিখতে পারে। হুইল চেয়ারে আবর্তিত শাহজাহানের জীবন। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তার পড়াশোনায় বাধা হতে পারেনি। পা দিয়ে লিখে সে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে।

শাহজাহানের বাড়ি কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের নয়াচর ফকিরপাড়া গ্রামে। ওই গ্রামের ফরিদুল হক-রাশেদা বেগম দম্পতির তৃতীয় সন্তান সে। মোহনগঞ্জের চরনেওয়াজী বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শাখা থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪.৫০ পেয়েছে। পেশায় কাঠমিস্ত্রি বাবার এই প্রতিবন্ধী সন্তান পা দিয়ে লিখেই লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চায়।

শাহজাহানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুদি দোকানদার বড় ভাই আশরাফের সহযোগিতায় পড়ালেখার সুযোগ হয় শাহজাহানের। প্রাইমারির গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হয় বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরের চরনেওয়াজী বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ে। হুইল চেয়ার থাকলেও তা চালানোর মতো শক্তি নেই শাহজাহানের দুই হাতে। তাই বড় ভাই আশরাফের সহযোগিতায় স্কুল ও প্রাইভেটে যাতায়াত করতো সে। এসএসসিতে তার সাফল্যে তাই ভাই আশরাফের খুশির কমতি নেই।

ছোট ভাইয়ের এই সফলতায় আশরাফ বলেন, ‘পাঁচটি বছর আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। দোকান ছেড়ে প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যাওয়া এবং নিয়ে আসা ছিল অনেক কষ্টসাধ্য। তবুও আজ আমি খুশি। ছোট ভাই পা দিয়ে লিখে ভালো রেজাল্ট করে আমার কষ্ট সার্থক করেছে, ওর নিজের ইচ্ছা পূরণ করেছে।’

শাহজাহানের বাবা মো. ফরিদুল হক বলেন, ‘আমাদের অভাবের সংসারে ছেলেদের পড়ালেখা করানোর কথা চিন্তা করতে পারিনি। তার ওপর শাহজাহান প্রতিবন্ধী। ওর ইচ্ছা আর ওর বড় ভাইদের চেষ্টায় পরীক্ষায় পাস করেছে। ওর স্যাররাও অনেক সহযোগিতা করেছেন।’

শাহজাহান বলে, ‘আমার দুই হাতে কোনও শক্তি নেই। পায়ের শক্তি সামান্য। হাঁটতে পারি না। পা দিয়ে কোনও রকম কলম ধরে লিখতে পারি। জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী হলেও মনের শক্তি দিয়ে লেখাপড়া করার পণ করেছি। আমার জন্য দোয়া ও সহযোগিতা করবেন। আমি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই।’

চরনেওয়াজী বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিউল আলম বলেন, ‘শাহজাহান অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছে। ওর ইচ্ছা দেখে ওর বড় ভাই অনেক সহযোগিতা করেছে। স্কুল থেকে আমরা সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। পা দিয়ে লিখে সে জিপিএ ৪.৫০ পেয়েছে। আরেকটু সুযোগ ও সহযোগিতা পেলে শাহজাহান তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে। আমরা সবাই সেই দোয়া করি।’