ফেরির সঙ্গে যেন পদ্মায় ডুবে গেলো হুমায়ুনের পরিবারের স্বপ্নও

পদ্মায় রজনীগন্ধা ফেরি ডুবে যাওয়ার পাঁচ দিন পর উদ্ধার হয়েছে ওই ফেরির নিখোঁজ ইঞ্জিনমাস্টার হুমায়ুন কবিরের (৪৫) মরদেহ। পরিবারের একমাত্র আশার আলো ছিলেন তিনি। সবাই ভরসা করতেন তার ওপর। ফেরিডুবির সঙ্গে তার পরিবারের সব স্বপ্নও যেন পদ্মায় বিলীন হয়ে গেলো!

জানা গেছে, পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়ার মাটিভাঙ্গা গ্রামের মৃত লতিফ পাহলানের ছেলে হুমায়ুন কবীর। ২০১১ সালে হুমায়ুনের চাকরি হয় ফেরি সেক্টরের গ্রিজার পদে। এরপর ফেরির তৃতীয় শ্রেণির মাস্টার এবং পরে দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার পদে পদোন্নতি হয়। হুমায়ুন কবীর বিআইডব্লিউটিসি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের আরিচা আঞ্চলিক কমিটির দক্ষিণ (পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া) শাখার সভাপতি ছিলেন।

হুমায়ুনের ভাই রফিকুল ইসলাম বললেন, ‘তাকে ঘিরেই আমাদের সব স্বপ্ন আবর্তিত হতো। সেই ভাই এভাবে পৃথিবী থেকে চলে যাবে তা ভাবতেও পারিনি।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রফিকুল বলেন, ‘দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা হুমায়ুনের মৃত্যুতে স্ত্রী, দুই মেয়ে, ছেলে এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। পরিবারের সবাই বাকরুদ্ধ। হুমায়ুনের স্ত্রী ও সন্তানরা এখন পরনির্ভরশীল হয়ে পড়লো।’

আরিচা ফেরি সেক্টরের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শাহ মোহাম্মদ খালেজ দেওয়াজ জানান, দুর্ঘটনার পরপরই ফেরিতে থাকা স্টাফকে আত্মরক্ষার জন্য সজাগ করলেও হুমায়ুন কবীর নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি। দুর্ঘটনার ছয় দিনের মাথায় সোমবার বিকালে ঘটনাস্থল থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে হরিরামপুরের বাহাদুরপুর এলাকায় পদ্মা নদীতে তার মরদেহের সন্ধান পাওয়া যায়।

দীর্ঘদিনের সহকর্মী স্থানীয় ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘হুমায়ুন কবীর একজন ভালো সংগঠক ছিলেন। তিনি নিজের জীবমের মায়া ত্যাগ করে ফেরি রজনীগন্ধার সব স্টাফকে রক্ষা করে গেলেন।’

গত ১৭ জানুয়ারি মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটের অদূরে পদ্মা নদীতে ঘন কুয়াশার কারণে নোঙর করা অবস্থায় নয়টি যানবাহন নিয়ে ডুবে যায় ইউটিলিটি ফেরি রজনীগন্ধা। ঘটনার দিন থেকেই নিখোঁজ ছিলেন হুমায়ুন কবির।

আরও খবর: পদ্মায় ফেরিডুবির পাঁচ দিন পর মিললো ইঞ্জিন মাস্টারের মরদেহ