মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শেখ আবির হোসেনের (৩৮) মরদেহ ১২ দিন পর তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার কলারোয়ায় পৌঁছায়। এ সময় সেখানে অবতারণা হয় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের। ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন মা আঞ্জুয়ারা বেগম। ছেলের শোকে তার আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।
বুধবার (১০ জানুয়ারি) দিবাগত গভীর রাতে তার মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে তীব্র শীত উপেক্ষা করে এক নজর দেখতে সেখানে শত শত মানুষের ভিড় জমে। বৃহস্পতিবার সকালে জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে আবিরকে দাফন করা হয়। সে সময় শোকের মাতম চলে তার গোটা পরিবারে।
নিহতের মা আঞ্জুয়ারা বেগম ছেলের জন্য কেঁদে কেঁদে বুক ভাসান। তিনি বলেন, ‘ছিনতাইকারীদের বাধা দেওয়ায় ছেলেকে জীবন দিতে হয়েছে।’
গত ২৯ ডিসেম্বর টেক্সাসের ক্রিস ফুড মার্ট নামে একটি রেস্টুরেন্টে গুলিবিদ্ধ হয়ে শেখ আবির হোসেন নিহত হন।
নিহত আবির কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের ঝাপাঘাট গ্রামের মৃত শেখ আজিজুল হাকিমের ছেলে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকল্যাণ ও গবেষণা বিষয়ে স্নাতকোত্তর পাস করে স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লামার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে যান। পরিবারের ৫ ভাই ৩ বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট।
নিহতের ভাই শেখ জাকির হোসেন জানান, এক বছর আগে ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তার ভাই আবির। স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে পিএইচডি শেষ করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ছয় মাস পরে স্ত্রী সানজিদা আলম মজুমদার ও শিশু কন্যা আরশিয়াকে সেখানে নিয়ে যান আবির। গবেষণা কাজের পাশাপাশি টেক্সাসের স্থানীয় ক্রিস ফুড মার্ট নামে একটি রেস্টুরেন্টে খণ্ডকালীন কাজ করতেন আবির। আবিরের স্ত্রী সানজিদা দুই বছরের শিশুকন্যা আরশিয়াকে নিয়ে নিউইয়র্কে মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন। আর আবির থাকতেন টেক্সাসে। আবির যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার দুই মাসের মধ্যে বাবা আজিজুল হাকিম মারা যান।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আগে ২০১৪ সালে আবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হয়ে স্নাতকোত্তর পাস করেন। এরপর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেখান থেকে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি।