‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন’

‘আগে ভাঙা ঘরে থাকতাম মাথা গোঁজার কোনও ঠাঁই ছিল না। রোদে পুড়তাম বৃষ্টিতে ভিজতাম। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন। এখন সুখে শান্তিতে পরিবার পরিজন নিয়ে থাকবো।’ ঘরের দলিল পাওয়ার পর সদর উপজেলার গৌরাং গ্রামের আশি বছরের বৃদ্ধা জয়গুন নেছা এভাবে তার অনুভূতির কথা বলছিলেন। 

একই গ্রামের মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘বাঁশ দিয়ে ঘর তৈরির ক্ষমতা আমার নেই, এখন আমি পাকা ঘরে থাকবো। তা স্বপ্নেও দেখিনি। শেখ হাসিনা আমাদের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিয়েছেন আমি আর কিছু চাই না।’

সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের বিরামপুর গ্রামের বুদু মিয়া বলেন, ‘দিনমজুরি কইরা সংসার চালাই নিজের কোনও জায়গা জমি নেই। পরের জায়গায় ছাপড়া ঘরে এতোদিন পরিবার নিয়ে ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী পাকাঘর দিয়েছেন। আজ থেকে আমার দুর্দশার জীবন শেষ হলো।’

রঙ্গারচর গ্রামের রিনা বেগম বলেন, ‘পরের জায়গায় ঘর তৈরি করে বসবাস করতাম। গেল ১৫ বছরের পাঁচবার জায়গা বদল করে ঘর তৈরি করেছি। এখন নিজের জায়গায় নিজের ঘরে থাকবো। এটি আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন।’
 
হরিণাপাটি গ্রামের মোছাম্মৎ ছালেমা বেগম বলেন, ‘কতো রইদে পুড়ছি বানে ভিজছি। দিনমজুর স্বামীর আয়ে সংসার চলে না। জায়গা কিনে ঘর তৈরি করার সামর্থ্য আমাদের নেই। আজ থেকে আমি জায়গাসহ একটি ঘরের মালিক। এটি সবচেয়ে খুশির বিষয়।’
 
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীর হাত থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার জায়গাসহ ঘরের দলিলপত্র পাওয়ার পর এভাবে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। বুধবার (৯ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার উপজেলা পরিষদের হল রুমে দলিল হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। 

মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার ৬৮৩টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে দুই শতাংশ জায়গাসহ বসতঘরের দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। সকাল ১০টার দিকে জেলা প্রশাসক দিদারের আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের সদস্যদের মধ্যে জায়গার দলিল হস্তান্তর করেন। 

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের স্থায়ীভাবে আবাসনের উদ্যোগ নেন। পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নিয়ে যান। দেশের একজন মানুষও গৃহহীন ভূমিহীন থাকবে না সেই লক্ষ্যে তিনি কাজ করছেন। জেলা প্রশাসন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শুভ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি চলতি বছরের অক্টোবর মাসে পুরো সুনামগঞ্জ জেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।’ 

জেলা প্রশাসক উপকারভোগীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এখন আপনারা ঘর ও জায়গার মালিক হয়েছেন। এটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা আপনাদের দায়িত্ব। আপনারা ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে লেখাপড়া করাবেন। সরকার বিনামূল্যে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছেন। এই সুযোগকে কাজের লাগিয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে।’

সদর উপজেলার ৪৫টি পরিবারের মধ্যে ঘর ও জায়গার দলিল হস্তান্তর করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাল্লা ও ধর্মপাশা উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করেন। মুজিব পল্লীর এসব এলাকায় বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি, কমিউনিটি সেন্টার, পুকুর, শিশুদের পার্ক, খেলার মাঠ রয়েছে। দুই কক্ষের প্রতিটি ঘরে রান্নাঘর ও স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন রয়েছে। জেলার ৮ হাজার ৪৪৬টি পরিবারের মধ্যে ৭ হাজার ৭১৭টি গৃহহীন পরিবারকে ঘরসহ জায়গা দেওয়া হয়েছে।