৭২ লাখ টাকার চেক নেওয়ার অভিযোগ ২ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকার আবু জাফর ওরফে ঠান্ডু চোকদার নামে এক ব্যবসায়ীকে নির্যাতন করে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ওই ব্যবসায়ী গত ২ জুন এ ঘটনার বিচার চেয়ে পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে আবেদন করেছেন।

এ ঘটনার তদন্ত করার জন্য পুলিশ সুপার একটি কমিটি গঠন করেছেন। শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ বদিউজ্জামান অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করছেন।

অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন– নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির এবং পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোস্তাফিজুর রহমান।

এদিকে, অভিযোগের পর বুধবার (৭ জুন) ওসি শেখ মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা সূত্র জানায়, জাজিরার আহাদী বয়াতিকান্দি গ্রামের শাহীন আলম শেখ নামে এক ব্যক্তি এবং তার সহযোগী ছোট কৃষ্ণনগর গ্রামের সেকান্দার মাদবরের কাছ থেকে গত ২১ মে ১৭ হাজার ডলার, নগদ টাকা ও ফোন ছিনতাই হয়। এ ঘটনায় ২১ লাখ ১৫ হাজার ২৫০ টাকা খোয়া গেছে এমন অভিযোগ এনে নয় ব্যক্তিকে আসামি করে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় ২৩ মে মামলা দায়ের করেন শাহীন আলম। ওই মামলায় নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী ঠান্ডু চোকদারের চার আত্মীয়কে আসামি করা হয়।

ঠান্ডু চোকদার পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন, ৩১ মে গভীর রাতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পুলিশ তাকে বাড়ি থেকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে  অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে চাপ দেন ওই ছিনতাই মামলার আসামি সাদ্দাম চোকদার, তার বাবা বাদশা চোকদার, বকুল চোকদার ও বকুল চোকদারের বাবা রশিদ চোকদারের পক্ষে ৭২ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য। বিনিময়ে নাওডোবা বাজারে থাকা ওই ব্যক্তিদের দুটি দোকান তাকে লিখে দেওয়া হবে। পুলিশের এমন কথায় ঠান্ডু রাজি হননি। তখন দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে মারধর করেন। ওসির কক্ষে আটকে চোখ বেঁধে তাকে দুই ঘণ্টা ধরে পেটানো হয়। একপর্যায়ে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে দিতে রাজি হলে চাচা রশিদ চোকদারের জিম্মায় ভোররাতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরের দিন সকালে ন্যাশনাল ব্যাংক নাওডোবা শাখার হিসাব নম্বরে পাঁচটি চেকের মাধ্যমে ৭২ লাখ টাকা লিখে দেন ঠান্ডু। ওই চেকগুলো ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে দেওয়া হয়। অভিযুক্তরা মো. শহীদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির নামে চেক লিখে রাখেন।

আবু জাফর ঠান্ডু চোকদার বলেন, ‘ছিনতাই মামলার বাদীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল ব্যাপারী আমার চাচাতো ভাই ও চাচাদের কাছ থেকে ৭২ লাখ টাকা নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল। আমি বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলাম। ওইদিন রাতেই বাড়ি থেকে পুলিশ আমাকে তুলে থানায় নিয়ে যায়।’

নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনিরের কাছে আসামির আত্মীয়কে নির্যাতন করে চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে আর কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগের বিষয়ে বলেন, ‘আমরা কোনও ব্যক্তিকে উঠিয়ে এনে নির্যাতন করিনি। কারও চেক সই করে আমরা কেন নেবো। সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। পুলিশ কি কারও চেক নিতে পারে?’

জানতে চাইলে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল হক বলেন, ‘পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা এলাকার এক ব্যক্তি একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ করেছেন। ঘটনাটি তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।’