প্রতিবন্ধী অনিকের ডিজাইন করা টি-শার্ট পরছেন বিদেশিরা

সহকর্মী সাগরের সঙ্গে কাজ করছেন অনিক

নিজের মেধা আর ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধতাকে জয় করেছেন অনিক মাহমুদ (২২)। শুধু টি-শার্টের ডিজাইন করে তিনি আয় করেন মাসে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এসব টি-শার্ট পরেন বিদেশিরা। হুইল চেয়ারে বসেই নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলেছেন ও নিজ প্রতিষ্ঠানে আরও কয়েকজন তরুণ বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করেছেন অনিক।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ এলাকার এই অদম্য তরুণের বাবার নাম মো. মোজাহার আলী। স্থানীয় হালসা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক তিনি। দুই ভাইয়ের মধ্যে অনিক ছোট। বড় ভাই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। জন্মগতভাবেই তার দুই পা অনেক চিকন ও ছোট। চলাচলে অক্ষম হাওয়ায় হুইল চেয়ারই তার একমাত্র ভরসা।

অনিক মাহমুদ বলেন, 'কম্পিউটারের প্রতি অনেক আগ্রহ ছিল। ২০১২ সালের দিকে বাড়ি থেকে হুইল চেয়ারে করে কম্পিউটার শিখতে যেতাম আধা কিলোমিটার দূরে। তারপর বাবাকে অনুরোধ করে পোড়াদহ হাইস্কুল মার্কেটে একটা কম্পিউটার কম্পোজ ও স্টেশনারির দোকান দিলাম। নিজে কিছু একটা করবো এমন সিদ্ধান্ত থেকেই আমার এগিয়ে যাওয়ার শুরু। ২০১৪ সালে এসএসসির পর পড়ালেখা করা হয়নি। তবে দোকানে বসেই সব সময় কম্পিউটারে গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতাম। এরপর ২০১৮ সালের শুরু থেকে ই-লার্নিংয়ের মাধ্যমে অনলাইনে গ্রাফিক্স ডিজাইনের ওপর তিন মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। একই সঙ্গে বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল থেকে ভিডিও দেখে ফ্রিল্যান্স্যারের ওপর কাজ শুরু করি। পাশাপাশি অনেক বড় বড় ফ্রিল্যান্সারের পরামর্শ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাই। এভাবেই আমি প্রতিদিন ১৫-১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কম্পিউটারে কাজ করেছি।'

অনিক আরও জানান, ২০১৯ সাল থেকে মোটামুটি কাজ পাওয়া শুরু হয় মার্কেটপ্লেসে। টি-শার্টের ডিজাইন নিয়েই মূলত তার কাজ শুরু। আপওয়ার্ক থেকে মাত্র ২৫ ডলারের প্রথম কাজ পান। এরপর সর্বোচ্চ একটা প্রজেক্ট থেকে প্রায় ৪ হাজার ডলারের কাজ করেন। এখন আর বায়ার খুঁজে পেতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না। প্রচুর কাজের অর্ডার পাচ্ছেন। তার ডিজাইনের টি-শার্ট বিদেশিরা ব্যবহার করছেন তা তার ভালো লাগার কারণ বলেও জানান তিনি।

এই কাজের অনুপ্রেরণা সম্পের্কে অনিক বলেন, '২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে ফাহিম উল করিম নামের একজন শারীরিক প্রতিবন্ধীকে দেখে আমি প্রেরণা পাই। সে যদি
বিছানায় থেকে সফলতা লাভ করতে পারে, তবে আমি কেন হুইল চেয়ারে বসে পারবো না।'

বড় একটা আইটি ফার্ম গড়ে আগামীতে আরও তরুণ ও বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চান বলে জানিয়েছেন অনিক।

অনিকের বাবা মো. মোজাহার আলী বলেন, 'আমার দুই ছেলের মধ্যে এই ছোট ছেলেকে নিয়ে আমরা চিন্তায় ছিলাম। কিন্ত এখন আমি আমার এই প্রতিবন্ধী ছেলের জন্য গর্ব করি। সবাই এখন অনিকের বাবা বলেই আমাকে চেনেন।'

মিরপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জামসেদ আলী বলেন, 'কিছুদিন আগে স্মার্ট কার্ড (প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পরিচয়পত্র) দিতে গিয়ে তার সম্পর্কে জানতে পেরেছি। তিনি প্রতিবন্ধীদের রোল মডেলে পরিণত হয়েছেন।'