সাকিবের কাঁকড়া খামারের শ্রমিকদের বেতন বুধবার

ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের কাঁকড়া খামারের প্রবেশ গেট

নিজের গড়ে তোলা কাঁকড়া খামারের কর্মীদের বেতন বকেয়া থাকার বিষয়টি জানা ছিল না দেশের খ্যাতিমান ক্রিকেটার ও সাবেক ওয়ানডে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের। খামারটি যারা দেখাশোনা করতেন তারা এ তথ্য তাকে জানাননি। সোমবার (২০ এপ্রিল) রাতে বিষয়টি জানার পর দ্রুতই শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) তার পরিবার ও খামারটির অপর উদ্যোক্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ফার্মের জেনারেল ম্যানেজার মো. সালাউদ্দিন নিশ্চিত করেছেন, আগামীকাল (২২ এপ্রিল) বুধবার শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা হবে।

এ বিষয়ে সাকিব আল হাসানের কাঁকড়া খামার প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক ক্রিকেটার সগীর হোসেন পাভেল বলেন, সুন্দরবনের কোলঘেঁষা ঘূর্ণিঝড় আইলায় বিধ্বস্ত এলাকা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী। এই এলাকার মানুষ খুব অবহেলিত। এখানকার মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ২০১৬ সালে এই খামারটি করার সিদ্ধান্ত নেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। বিগত চার বছর ধরে এসব শ্রমিকের সঙ্গে কাজ করছি। কখনও কোনও সমস্যা হয়নি। তারপর হঠাৎ কেন তারা আন্দোলনে গেলো সেটা বুঝতে পারলাম না। বিষয়টিতে আমি হতবাক হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর ও আমেরিকাসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে আমাদের অনেক অর্ডার ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সেগুলো বাতিল করেছে তারা। এ কারণে আমরা একটু সমস্যায় পড়েছি। ৩০ তারিখের মধ্যে বেতন শোধ করার ব্যাপারে শ্রমিকদের সঙ্গে আগেই কথা বলেছিলাম এবং তারা এতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু তারা কেন হঠাৎ ২০ তারিখে আন্দোলন করলো বুঝতে পারলাম না।

ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের কাঁকড়া খামারের নিজস্ব ভ্যান (ফাইল ছবি)

তিনি বলেন, জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সব শ্রমিকের বেতন পরিশোধ আছে। বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতির কারণে ফেব্রুয়ারি থেকে ফার্মের কাজ সীমিত করি। এখান থেকে কাঁকড়া প্রসেসিং করে বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়। পণ্য রফতানি করে বেতন পরিশোধের টার্গেট নিয়েছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে রফতানি করা সম্ভব হচ্ছিল না। সে কারণে আগে যেখানে ২শ’ শ্রমিক কাজ করতো সেখানে মাত্র ৩০ জন নিয়ে কাজ করছিলাম।

তিনি আরও বলেন, বেতন বকেয়ার বিষয় সাকিব জানতেন না। তবে তিনি জানতেন আমাদের অনেক প্রডাক্ট রফতানির অপেক্ষায় পড়ে আছে। সাকিবই বলেছিলেন করোনার কারণে ফেব্রুয়ারি থেকে ফার্ম বন্ধ করতে। তবে এই ঘটনার পরে বিষয়টি সাকিবকে জানিয়েছি। তিনি দ্রুত সমাধান করতে বলেছেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সুনাম ক্ষুণ্ন করতে কেউ এটা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছি। ৩০ তারিখ পর্যন্ত সময় নিলেও আগামীকালই (বুধবার) শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করে দেবো। এই খামারটি সাকিব আল হাসানেরই। আমরা কয়েকজন বিষয়টি দেখাশোনা করি। করোনা পরিস্থিতির কারণে আশপাশের অনেকে খামার বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা এখনও ধরে ছিলাম। তার মধ্যে এই পরিস্থিতি।

সাকিব আল হাসান

সাকিব আল হাসানের হ্যাচারির শ্রমিক রাজু ইসলাম বলেন, দুই বছর ধরে সাকিব আল হাসানের হ্যাচারিতে কাজ করছি। এর আগে বেতন নিয়ে কোনও সমস্যা হতে দেখিনি। প্রতি বছর ঈদ বোনাসও ঠিকমতো পেয়েছি। কিন্তু, এবার ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বেতন পাচ্ছি না। বেশ কয়েকবার বেতন দেওয়ার তারিখ দিলেও আমাদের বেতন দেওয়া হয়নি। করোনার কারণে বাইরেও কোনও কাজ নেই। আমরা বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছিলাম। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।

সাকিব আল হাসান এগ্রো ফার্মের জেনারেল ম্যানেজার সালাউদ্দিন বলেন, করোনার কারণে আমরা অনেক প্রডাক্ট রফতানি করতে পারিনি। সে কারণে শ্রমিকদের বেতন দিতে একটু দেরি হয়েছে। আমাদের টার্গেট ছিল ৩০ তারিখে প্রক্রিয়া করা মালগুলো রফতানি হয়ে যাবে এবং পেমেন্টে পেয়ে যাবো। এরপর শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করে দেবো। সে জন্য বিষয়টি সাকিব ভাইকে জানানো হয়নি। এরমধ্যেই হঠাৎ শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করলো।

তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের বিক্ষোভের বিষয়টি সাকিব ভাইয়ের নজরে পড়েছে। তিনি দ্রুত বেতন পরিশোধ করে দিতে বলেছেন। শ্রমিকদের বেতন আগামীকাল (বুধবার) পরিশোধ করে দেওয়া হবে।

ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের কাঁকড়া খামারের সামনে বেতনের দাবিতে কর্মীদের বিক্ষোভ (২০ এপ্রিলের ছবি)

সাকিব আল হাসানের বাবা মাসরুর রেজা বলেন, সাকিবের কাঁকড়া খামারের কোনও বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।

প্রসঙ্গত, সোমবার সকালে চার মাসের বেতন না পেয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনীতে অবস্থিত সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেডের প্রায় দুই শত শ্রমিক আন্দোলন শুরু করেন। তবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে আন্দোলন করায় র‌্যাবের একটি টহল টিম শ্রমিকদের হটিয়ে দেয়।