বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি স্থগিত

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলবিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের বিতর্কিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে কেন্দ্রীয় কমিটির দফতর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়। কমিটি স্থগিতের পাশাপাশি বরিশাল জেলায় অন্যান্য সংগঠনের মতো স্বেচ্ছাসেবক দলের দুটি ইউনিট কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বরিশাল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহিন এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু স্থগিত হওয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আমিনুল ইসলাম লিপনের দাবি, কমিটি স্থগিত হয়নি, কমিটির কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত হয়েছে।

গত ৬ অক্টোবর আমিনুল ইসলাম লিপনকে সভাপতি ও রফিকুল ইসলাম জনিকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শফিউল বারী বাবু এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল। কমিটিতে সভাপতি, সম্পাদক ছাড়া একজন সিনিয়র সহ-সভাপতি, ১৬ জন সহ-সভাপতি, সাত জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ৩৪ জনকে সহ-সাধারণ সম্পাদক, ২৭ জনকে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়।

বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া কামরুজ্জামান টুলু ঢাকার যুবলীগ নেতা খালেদের একান্ত সহযোগী ছিলেন। রাজধানীর ফকিরাপুল ইয়ংম্যান্স ক্লাব থেকে গ্রেফতার হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ছয় মাসের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

আকবর হোসেন মাসুদ আকন কয়েক বছর যাবৎ ইতালি প্রবাসী। সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন নয়ন প্রায় দশ বছর ধরে জাপান প্রবাসী। দলীয় নিয়ম অনুযায়ী কোনও প্রবাসী পদ না পাওয়ার বিধান থাকলেও তাদের পদ দেওয়া হয়।

এছাড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি লিপন ও সাধারণ সম্পাদক জনির বিরুদ্ধে কমিটি গঠনের নামে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম শাহিন বলেন, ‘অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি করতে হলে বিএনপি নেতাদের মতামত নিতে হবে। তিন মাস আগে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু মহাসচিবের নির্দেশনা না মেনে নিজেদের ইচ্ছেমতো কমিটি গঠন করার অভিযোগ রয়েছে সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে। তারা জেলা বিএনপির সঙ্গে আলোচনা না করে কমিটি কেন্দ্রে পাঠান অনুমোদনের জন্য। এছাড়া কমিটিতে বিদেশে অবস্থানরতদেরও রাখা হয়, যা দলের সংবিধান পরিপন্থী।’

জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁন বলেন, “কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সর্বশেষ একটি নির্দেশনা রয়েছে। সেখানে বলা আছে, ‘অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন করতে হলে বিএনপি নেতাদের মতামত নিতে হবে’। কিন্তু জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনের ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। সভাপতি ও সম্পাদক তাদের ইচ্ছেমতো কমিটি করে তা কেন্দ্রে জমা দেন।”

এ ব্যাপারে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আমিনুল ইসলাম লিপন বলেন, ‘কমিটি স্থগিত করা হয়নি। কমিটির কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। এক মাস আগে কেন্দ্র থেকে চিঠি আসে জেলা নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কমিটি দেওয়ার বিষয়ে। কিন্তু সেই চিঠি আমাদের দেওয়া হয়নি। যে কারণে আমরা বিষয়টি জানতামও না। তারপরও জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক চান ও উত্তর জেলা বিএনপি’র সভাপতি সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কমিটি জমা দেওয়া হয়। ওই সময় তারা আমাদের কমিটিকে বাহবা পর্যন্ত দিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে জেলা নেতৃবৃন্দ বিরোধিতা করায় কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।’

বিদেশিদের দলে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যারা বরিশাল জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে জাতীয় সংসদে নির্বাচন করেন তাদের সুপারিশ রাখতে গিয়ে বিদেশে অবস্থানরতদের কমিটিতে নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে টাকা লেনদেনের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। বরিশাল জেলায় স্বেচ্ছাসেবক দল শক্তিশালী হওয়ায় ছাত্রদল ও যুবদলের হিংসায় আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যাচার করা হচ্ছে। আমরা আশা করি স্বল্প সময়ের মধ্যে এর সমাধান হবে।’

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৭ জুন আমিনুল ইসলাম লিপনকে সভাপতি, আতাউর রহমান আউয়ালকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, রফিকুল ইসলাম জনিকে সাধারণ সম্পাদক, আজিজুর রহমানকে যুগ্ম সম্পাদক এবং জাবের আব্দুল্লাহ সাদীকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। একই সময় মাহাবুবুর রহমান পিন্টুকে সভাপতি, জাহিদুল ইসলাম সমীরকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, মশিউর রহমান মঞ্জুকে সাধারণ সম্পাদক, খান মো. আনোয়ারকে যুগ্ম সম্পাদক এবং রাশেদুজ্জামান রাশেদকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে মহানগর কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়।