জানা যায়, নগরীর কাছারি সংলগ্ন শশীলজ ছিল মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজ সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর ছেলে মহারাজ শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর বসতভিটা। শুরুতে সুরম্য দ্বিতল ভবন থাকলেও ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে তা ধসে পড়ে। পরে বর্তমানের একতলা ভবনটি গড়ে তোলা হয়। মহারাজ শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী নিজ বসতভিটাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে দ্বিতল ভবন থাকাকালেই এর সামনে ফোয়ারা স্থাপন করেন। আর সেই ফোয়ারার মাঝখানে ঠাঁই পায় শ্বেতপাথরের স্বল্পবসনা নারী ভাস্কর্যটি। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা শশীলজের ওই ভাস্কর্য এবং স্থাপত্যশৈলীতে মুগ্ধ হয়েছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ জমিদারবাড়িটির দায়িত্ব নিয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন তা সকাল থেকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
সম্প্রতি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শশীলজের নারী ভাস্কর্য নিয়ে অপপ্রচার শুরু হয়। বিভিন্ন ফেসবুক আইডি থেকে ভাস্কর্যটির ছবি পোস্ট করে বলা হচ্ছে এমন ভাস্কর্যের জন্য দেশে ধর্ষণ বেড়ে যাচ্ছে। ওইসব আইডি থেকে ধর্মীয় মূল্যবোধের দোহাই দিয়ে ভাস্কর্যটি উৎখাতেরও আহ্বান জানানো হয়।
নারী ভাস্কর্য উৎখাতের আহ্বানের পর শশীলজ এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশকে চিঠিও দিয়েছে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।
জাদুঘরের সহকারী কাস্টডিয়ান সাবিনা ইয়াসমিন জানান, ‘শশীলজের দৃষ্টিনন্দন নারী ভাস্কর্যটি নিয়ে ফেসবুকে দেওয়া বিভিন্ন পোস্ট জাদুঘর কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। আমরা বিষয়টি আমলে নিয়ে যেকোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের জন্য পুলিশ প্রশাসনকে ১৭ এপ্রিল চিঠি দিয়েছি।’
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মাহমুদুল ইসলাম জানান, শশীলজ এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের অংশ হিসেবে পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি কে বা কারা, কোন উদ্দেশ্যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তবে ময়মনসিংহের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শেখ মো. বেলায়েত হোসেন শশীলজের নারী ভাস্কর্য নিয়ে অপপ্রচারের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারী ভাস্কর্য নিয়ে প্রচারণার বিষয়টি আমার জানা নেই।’
এদিকে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান বলেন, ‘শশীলজ এবং এর সৌন্দর্য নারী ভাস্কর্যটি দেখতে বিভিন্ন এলাকার পর্যটকরা ছুটে আসেন। এটি ইতিহাসের অংশ। এটা সরাতে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে পাঁয়তারা করে আসছে।’ তবে কারা এই অপপ্রচারের সঙ্গে যুক্ত সে ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন তিনি। এ বিষয়ে সচেতন ময়মনসিংহবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।