প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের মাসে প্রতি লাখে দুই হাজার টাকা করে মুনাফা দিতো। আর এমন সব লোভনীয় অফারে সাধারণ মানুষ নিজের জমি বিক্রি করেও এখানে আমানত রেখেছেন। মুসলিম আমানতকারী বাড়াতে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক ব্যবসা পরিচালনা করা হয় এমন কথা বলা হতো। তাছাড়া গত কয়েক বছর নিউ বসুন্ধরা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি অনুমোদন নিয়ে সেখানেও আমানত সংগ্রহ করা হতো।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক তদন্ত প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এসব অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। এরপর থেকে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের তাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখে। প্রতিষ্ঠানটির এমডি স্বপরিবারে আত্মগোপনে চলে যান। দীর্ঘদিন পর গত ২৪ জানুয়ারি তিনি আবার তার বাগেরহাট নিজের ব্যবসায়ীক অফিসে আসেন।
এদিকে ২৪ জানুয়ারি ‘সাবেক পিওন ৪ হাজার কোটি টাকার মালিক’ শিরোনামে বাংলা ট্রিবিউনে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকরা গ্রাহকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
আবদুল মান্নান তালুকদার তার বিরুদ্ধে আনা নানা অভিযোগ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেন।
আপনি তো বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মচারী ছিলেন, ব্যবসা করার আইডিয়া কবে মাথায় এলো?
আমি ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান। আমি পরিবার থেকেই ব্যবসা করার ধারণাটি পাই। তাছাড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকরিরত অবস্থায়ও ছোট পরিসরে ব্যবসা করতাম।
সমবায় সমিতি ও নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেটর মধ্যে কোনটি আগে করেছেন?
আগে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশন নিয়ে কাজ শুরু করি।
নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট একক নাকি যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান? দ্বিগুণ লভ্যাংশের কথা বলে যাদের কাছ থেকে আমানত নিয়েছেন তারা কি আপনার প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হোল্ডার?
এটি যৌথ মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। সেভাবেই লাইসেন্স নেওয়া। যারা এখানে বিনিয়োগ করেছেন তারা সবাই প্রতিষ্ঠানের অংশীদার।
নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট কি নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান? বর্তমানে এর সম্পদের পরিমাণ কত? সদস্য বা শেয়ার হোল্ডারের সংখ্যা কত?
নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড জয়েন্ট স্টক থেকে রেজিস্ট্রেশন পাওয়া একটি প্রতিষ্ঠান। এটির সম্পদের বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানে আমানতকারীর সংখ্যা ২০ হাজার।
নয় বছরে এই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ও আয় বেড়েছে কী পরিমাণ? লভ্যাংশ কি আমানতকারী বা শেয়ার হোল্ডাররা যথাযথভাবে পেয়েছেন?
নয় বছরে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ ও আয় বেড়েছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্প থেকে আয় করছে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট। এর উল্লেখযোগ্য অংশ এসেছে জমি বিক্রি থেকে। এ পর্যন্ত কোনও গ্রাহক লভ্যাংশের টাকা থেকে বঞ্চিত হননি। এ বিষয়ে কোনও গ্রাহকের অভিযোগও নেই।
নিউ বসুন্ধরা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতিতে আপনার পদ কী?
এ বছর আমি নিউ বসুন্ধরা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
সমবায় সমিতির টাকা কি রিয়েল এস্টেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়? সমবায় সমিতির টাকা দিয়ে আর কী কী করেন?
সমবায় সমিতির টাকা রিয়েল এস্টেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা হয় না। এটি সম্পূর্ণ একটি আলাদা প্রতিষ্ঠান। সমবায় সমিতির টাকা শুধুমাত্র সদস্যদের মধ্যে ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়।
নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেটের এখন সম্পত্তির পরিমাণ কত?
নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেটের সম্পত্তির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।
বর্তমানে আপনাদের কয়টা প্রতিষ্ঠান রয়েছে?
বর্তমানে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেটের বারোটি প্রকল্প রয়েছে। যার মধ্যে তিনটি প্রকল্প চলমান। এই তিনটি হলো– সাবিল প্রিন্টার্স, সাবিল মৎস্য প্রকল্প, বাগেরহাট ট্রেডিং।
আপনার ও আপনার পরিবারের মালিকানাধীন কতটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে?
আমি ও আমার ভাইয়ের নামে বাগেরহাটে ও গোপালগঞ্জে দুটি মৎস্য প্রকল্প রয়েছে। এছাড়া আমার ও আমার পরিবারের নামে আর কোনও প্রকল্প নেই।
আগে আপনি জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের কর্মচারী ছিলেন, এখন এতগুলো প্রতিষ্ঠানের মালিক। কীভাবে করলেন?
এই সব প্রতিষ্ঠান ও সম্পদের আমি একক মালিক নই। প্রতিষ্ঠানের সকল বিনিয়োগকারী এর অংশীদার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে বলা হয়েছে, দুর্নীতি আর প্রতারণা করে আপনি প্রায় চার হাজার কোটি টাকার সম্পদ বানিয়েছেন। আপনার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কেউ যাতে লেনদেন না করে সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
অবৈধভাবে সম্পদ বানানোর কোনও প্রশ্নই ওঠে না। আর বাংলাদেশ ব্যাংক আমার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আপনার প্রতিষ্ঠানে তো এর আগেও অভিযান চালিয়েছিল। তখন আপনি পালিয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এবার কী করবেন?
আমার প্রতিষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতোপূর্বে কোনও অভিযান চালায়নি। আর আমিও পালিয়ে যাইনি।
শোনা যায়, দেশের বাইরেও আপনি বিপুল সম্পদ গড়েছেন।
দেশের বাইরে আমার কোনও সম্পদ নেই। আর এর কোনও প্রমাণও নেই।
আপনার জমিজমা ও সম্পদের তথ্য গণমাধ্যমকে জানাবেন কি?
আমি ব্যবসার মাধ্যমে ১৫-২০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। তাও দান করার ফলে কমে গেছে। আমার আয়করের বাইরে কোনও সম্পদ নেই।
গ্রাহকদের উদ্দেশে আপনার বক্তব্য কী?
আমি গণমাধ্যমের মাধ্যমে গ্রাহকদের বলতে চাই, তারা যেন ধৈর্য ধারণ করেন। কোনও গুজবে কান না দেন। প্রতিষ্ঠানের যে সম্পদ আছে তা গ্রাহকদের পাওনার চেয়ে অনেক বেশি। সুষ্ঠুভাবে এটি বিক্রি করলে সকলের পাওনা সহজে বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।
কতদিনের মধ্যে গ্রাহকদের পাওনা টাকা পরিশোধ করবেন?
এ বছরের (২০১৯) জুন থেকে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করা শুরু হবে।
আরও পড়ুন: সাবেক পিয়ন চার হাজার কোটি টাকার মালিক!