চিকিৎসা বিজ্ঞানে হিপোক্রেটিসের শপথনামা

স্বাস্থ্যযোগাযোগ কোর্সের একটি ক্লাসে বহুমাত্রিক আলোচনা শেষে আমরা একটি বিষয়ে একমত হই। আর তা ছিল আমাদের রোজকার জীবনে যোগাযোগ আসলে বৈচিত্র্যময় অর্থময়তার উৎপাদন, বণ্টন ও বিনিময়ের সমষ্টি। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এই অর্থময়তার উৎপাদন ও বিনিময়ে খুবই শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে দেশীয় ও বহুজাতিক নানা কিসিমের ওষুধ কোম্পানিগুলো, গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, পরিবার-পরিজন, সংস্কৃতি, ধর্ম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক স্বার্থ ও ব্যবসায়িক গোষ্ঠী। ক্লাসের আলোচনা যখন শেষ করবো ঠিক তখনই এক শিক্ষার্থী হাত তোলে। আমি তাকে বক্তব্য পেশ করার জন্য বলি। আমার সেই শিক্ষার্থীটি পড়াশোনা, চিন্তা ও যুক্তিতে তুলনামূলক এগিয়ে।

বুদ্ধিবৃত্তিক বিভিন্ন বিষয়ে বেশ কৌতূহলীও বটে। সে প্রায় সব ক্লাসে এমন সব প্রশ্ন করে, যার তাৎক্ষণিক জবাব আমার কাছে থাকেও না। সেদিন ক্লাসে তার প্রশ্ন ছিল দুটি। প্রথম প্রশ্নটি হলো, ডাক্তারেরা শিক্ষাজীবন শেষে হিপোক্রেটিক শপথ কেন নেন। হিপোক্রেসি মানে তো আমরা জানি ভণ্ডামি। তাহলে ডাক্তারেরা ভণ্ডামির শপথ নেন?

দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিল বিভিন্ন হাসপাতাল ও ওষুধ কোম্পানির লোগোতে একটি পেঁচানো সাপের ছবি কেন ব্যবহার করা হয়। সাপ মানে তো ক্ষতিকর। মানুষের জন্য বিপজ্জনক। এই সাপের মানে কী? ডাক্তার আমাদের আরোগ্য নয়, আহত করেন? তার এই প্রশ্নের তাৎক্ষণিক জবাব আমার জানা ছিল না। পরবর্তীকে এ বিষয়ে আলোচনা করবো বলে ক্লাস শেষ করি।

আপাত অপ্রাসঙ্গিক এসব প্রশ্ন আমার মাঝেও বেশ কৌতূহল জাগায়। তৈরি হয় বেশ কিছু প্রশ্নের। যেমন, সাপ ও চিকিৎসাবিদ্যার সাথে সম্পর্ক কী? আমরা কেন হাসপাতাল ভবনে, অ্যাম্বুলেন্সে, চিকিৎসা সরঞ্জামের দোকানে, ডাক্তারের সাদা অ্যাপ্রোনে সেই দণ্ড প্যাঁচানো সাপের প্রতীক দেখি? কোনও কোনও দণ্ডে একটি সাপ আবার কোনও দণ্ডে দুটি সাপ কেন থাকে?  সাধারণত আমরা তো জানি সাপ মানেই বিপজ্জনক, বিষধর ও বিরক্তিকর।

সবচেয়ে বড় কথা সাপ সুযোগ পেলেই দংশন করে। তাহলে সাপকে রোগ নিরাময় বা আরোগ্যের প্রতীক হিসেবে কেন ব্যবহার করা হয়? যাহোক, পরবর্তী ক্লাসের প্রস্তুতি নিতে একটু জানার চেষ্টা করি আমি। আজকের এই লেখাটি আমার সেই পড়াশোনা ও জানার চেষ্টারই অংশ। সেই শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাবে পরবর্তীতে যা আলোচনা করেছিলাম তারই একটি রূপ আজকের এই আলোচনাটি।

হিপোক্রেটিক শপথ আর আজকে অভিধানে শব্দ হিপোক্রেসির মানে এক নয়। বরং পুরোপুরি উল্টো। পশ্চিমা চিকিৎসা পেশার নৈতিক আদর্শ ও লক্ষ্যের অন্যতম ভিত্তি হলো হিপোক্রেটিক শপথ। এই শপথটি প্রথম আনুমানিক ৪০০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে প্রচারিত হয়েছিল। তখন থেকে এটি যেকোনও চিকিৎসা পেশাদারের জন্য এই শপথ গ্রহণ করা একরকম বাধ্যতামূলক। গত প্রায় ২৫০০ বছর ধরে এই শপথটি চিকিৎসক, গবেষক, ইতিহাসবিদ এবং এমনকি সাধারণ মানুষের কাছে আগ্রহের বিষয়। অন্যদিকে বর্তমানে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো চিকিৎসক-রোগীর সম্পর্ক। আর এই শপথটি রোগী ও চিকিৎসকদের মাঝে যোগাযোগ ও আচরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো হিসেবে কাজ করে। চিকিৎসা সেবায় কার্যকর যোগাযোগের এই বিষয়টি যুগ যুগ ধরে আলোচনা ও বিশ্লেষণের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সেই আলোচনার ও বিশ্লেষণের মধ্যে রয়েছে চিকিৎসকের শিষ্টাচার, গর্ভপাত, ইচ্ছামৃত্যু ও মৃত্যুপথযাত্রী রোগীর জীবনের শেষ দিকে সেবার মতো বিষয়গুলো।

এসব বিষয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দার্শনিক ও নৈতিক আচরণের মতো গভীর প্রশ্নসমূহ। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে যুগে যুগে।

আশ্চর্যজনকভাবে, এই পরিবর্তনের ভালো ও মন্দ উভয় দিকই হিপোক্রেটিক শপথে এবং এর ভাষাগত বিবর্তনে পাওয়া যায়।

তবে দণ্ড প্যাঁচানো সাপ ও হিপোক্রেটিক ওথের সঙ্গে সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। উভয়ই রোগীদের সেবা ও কল্যাণের প্রতি চিকিৎসকদের অঙ্গীকারকে নির্দেশ করে। গ্রিক মিথোলজি মতে, যে দণ্ডটিতে সাপ প্যাঁচানো থাকে সেটিকে বলা হয় রড অব অ্যাসক্লেপিয়াস। এই রড অব অ্যাসক্লেপিয়াস হলো প্রাচীন গ্রিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার প্রতীক। অ্যাসক্লেপিয়াস ছিলেন চিকিৎসা ও আরোগ্যের দেবতা। গ্রিক পুরাণে, অ্যাসক্লেপিয়াস রোগীদের সুস্থ করে তোলার এবং মৃতদের জীবিত করার ক্ষমতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। এখানে  দণ্ডটি ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের প্রতীক। এটি চিকিৎসকের কর্তৃত্ব ও রোগীদের সুস্থ করার ক্ষমতাকে নির্দেশ করে। আর সাপ পুনর্জন্ম, রূপান্তর ও নিরাময়ের প্রতীক। সাপের চামড়া পরিবর্তন করার ক্ষমতাকে নতুন জীবন ও স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। গ্রিক পুরাণে, সাপকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার প্রতীক হিসেবেও গণ্য করা হতো। বর্তমান যুগেও রড অব অ্যাসক্লেপিয়াস বহু শতাব্দী ধরে চিকিৎসা পেশার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অনেক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান, যেমন- হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ওষুধ কোম্পানিগুলোর লোগোতে দেখা যায়। এই প্রতীকটি চিকিৎসকদের দক্ষতা, তাদের রোগীদের প্রতি অঙ্গীকার ও স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্বের প্রতিনিধিত্ব করে। নির্দেশ করে চিকিৎসা পেশার প্রতিশ্রুতি ও রোগ নিরাময়কে।

আর রড অব অ্যাসক্লেপিয়াস ও হিপোক্রেটিক শপথ উভয়ই নিরাময়, নৈতিকতা এবং চিকিৎসকদের দায়িত্বেও ওপর জোর দেয়। রড অব অ্যাসক্লেপিয়াস চিকিৎসার শিল্প ও বিজ্ঞানকে প্রতীকায়িত করে। আর হিপোক্রেটিক শপথ চিকিৎসকদের নৈতিক ও নৈতিক নীতিমালা নির্ধারণ করে। রড নিরাময়ের প্রতীক, অন্যদিকে শপথ চিকিৎসকদের রোগীর কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়ার অঙ্গীকার করে। সাপ জ্ঞানের প্রতীক, যা শপথের আজীবন শিক্ষা ও নৈতিক অনুশীলনের সাথে সম্পর্কিত। উভয় প্রতীক রোগীদের চিকিৎসকদের প্রতি আস্থাকে শক্তিশালী করে।

হিপোক্রেটিস ও তাঁর শপথ

হিপোক্রেটিস ছিলেন একজন প্রাচীন গ্রিক চিকিৎসক। যিনি খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ ও পঞ্চম শতকের কোনও একসময় জন্মগ্রহণ করেন। তাকে ‘পশ্চিমা চিকিৎসাবিদ্যার জনক’ বলা হয়। তিনিই প্রথম রোগীদের পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চিকিৎসা করেন। তার সময়কালে গ্রিসের সাধারণ লোকেরা বিশ্বাস করত রোগ দেবতাদের অভিশাপ বা অপদেবতাদের কারণে হয়। কিন্তু তিনি জোর গলায় বলেন রোগ প্রাকৃতিক ঘটনার অঙ্গ আর প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চলে। তিনি বলেছেন যে পথ্য নির্দেশে রোগীর বয়স, রোগীর স্বাস্থ্য এবং ঋতুর কথা বিবেচনা করতে হবে। তার জ্ঞানের ভিত্তিতে চিকিৎসাশাস্ত্রকে পৃথক ডিসিপ্লিন হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা ইতিপূর্বে অলৌকিকতা ও দর্শনের অন্তর্গত করে রাখা হয়েছিল।

তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রে দর্শন ও ধর্মীয় রীতিনীতি থেকে পৃথক করে একটি পেশা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ ও প্রাকৃতিক পদ্ধতির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি রোগের নিরাময়, লক্ষণ পর্যবেক্ষণ এবং চিকিৎসকের দায়িত্ব ও নৈতিকতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি রোগের কারণ হিসেবে অতি প্রাকৃত ব্যাখ্যার পরিবর্তে প্রাকৃতিক কারণ অনুসন্ধানের ওপর জোর দেন। তাঁর শিক্ষণ ও প্রয়োগে বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল পদ্ধতি ও অভিজ্ঞতার মেলবন্ধন লক্ষ করা যায়। তার রচিত ‘হিপোক্রেটিক কর্পাস’ চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়।

একজন চিকিৎসকের পেশাগত ব্যক্তিগত জীবনের উদ্দেশ্য, দায়িত্ব, কর্তব্য, নৈতিক আইন বা আদর্শ ও সঠিক আচার-ব্যবহার কেমন হতে হবে, এ বিষয়ে তিনি চিকিৎসক সমাজের জন্যে একটা শপথনামা প্রণয়ন করেন। এটা চিকিৎসা জগতে বিশ্ববিখ্যাত ‘হিপোক্রেটিসের শপথনামা’ নামে পরিচিত। প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে এটা চিকিৎসা বিজ্ঞানকে দিশা দিয়ে আসছে। এটা আদিমকাল থেকে আজ পর্যন্ত চিকিৎসাবিদ্যা বিষয়ক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলের ডিগ্রিপ্রাপ্তি অনুষ্ঠানে অত্যন্ত মর্যাদার সাথে উচ্চারিত ও ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
উল্লেখ্য, একদল পণ্ডিত ধারণা করেন হিপোক্রেটিসের এই শপথ হিপোক্রেটিস নিজেই অথবা তার কোনও শিষ্য লিখেছেন। আবার আরেক দল পণ্ডিত মনে করেন যে হিপোক্রেটিসের জন্মের বহু আগেই পিথাগোরিয়ানরাই এই শপথবাক্য লেখেন। হিপোক্রেটিসের জন্মের আগে থেকেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের শপথ বাক্য পাঠ করানোর নিয়ম প্রচলিত ছিল।

এখানে আরও উল্লেখযোগ্য যে ১৯৪৮ সালে হিপোক্রেটিসের শপথনামা অবলম্বনে চিকিৎসকদের একটা বিশ্বব্যাপী শপথনামা তৈরি করা হয়। বিশ্ব চিকিৎসা সংস্থা কর্তৃক তৈরি এই শপথনামার নাম ‘জেনেভা ঘোষণা’।

যাহোক, হিপোক্রেটিসের শপথ চিকিৎসকদের জন্য একটি ঐতিহাসিক দলিল, যা চিকিৎসা পেশার নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধকে সংজ্ঞায়িত করে। তার এই শপথ ও নৈতিক নীতির মাঝে আধুনিক চিকিৎসা ক্ষেত্রের ভিত্তি ও আদর্শগত দিকগুলো নিহিত। এর মূল নীতিগুলো এখনও চিকিৎসকদের পেশাগত দায়িত্ববোধ, মানবিকতা ও নৈতিকতার গুরুত্বকে তুলে ধরে। এটি চিকিৎসকদের রোগীর কল্যাণ, গোপনীয়তা রক্ষা ও পেশাগত আচরণবিধি মেনে চলার অঙ্গীকারনামা হিসেবে বিবেচিত হয়। এই শপথে রোগীদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাদের সর্বোত্তম স্বার্থে কাজ করার প্রতিজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কাজেই হিপোক্রেটিসের শপথ ও তার চিকিৎসা দর্শন আজও চিকিৎসা পেশার নৈতিক ও পেশাগত মানদণ্ড নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা এখানে তিনি চিকিৎসকদের রোগীর কল্যাণ নিশ্চিত, গোপনীয়তা রক্ষা, নৈতিকতা বজায় রাখা, কোনও ক্ষতি না করা, গর্ভপাতে সহায়তা না করা, চিকিৎসাশাস্ত্রে নিজের জ্ঞান দক্ষতা ক্রমাগত উন্নত করা, সহকর্মী চিকিৎসকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং কোনও প্রকার অন্যায় বা দুর্নীতিতে জড়িত না হওয়ার অঙ্গীকার ও প্রতিজ্ঞার কথা বলেছেন। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তবে রোগীদের প্রতি নৈতিক দায়িত্ব এবং পেশাদারিত্বের গুরুত্ব একই রয়ে গেছে। এই শপথ চিকিৎসকদের মনে করিয়ে দেয় যে তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো রোগীদের সেবা প্রদান ও তাদের সুস্থতা নিশ্চিত করা। ফলে এই শপথ চিকিৎসকদের মাঝে দায়িত্ববোধ ও নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমান চিকিৎসাবিদ্যার অনেক ক্ষেত্রেই হিপোক্রেটিসের শপথের প্রভাব স্পষ্ট দেখা যায়।

সুতরাং বলা যায়  চিকিৎসা সেবাকে সঠিকভাবে প্রয়োগের প্রশ্নে হিপোক্রেটিসের শপথ একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা ও দলিল। এই শপথ চিকিৎসকদের জন্য একটি পেশাগত মৌলিক নীতি ও দায়িত্বের নির্দেশিকা। এতে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। এই শপথনামা অনুসরণ করে চিকিৎসকরা রোগীদের সুচিকিৎসা প্রদান করতে পারেন, যা একটি সুস্থ সমাজ গঠনে সহায়তা করে।

সঠিকভাবে অনুশীলন করলে এটি রোগীদের অপচিকিৎসা ও বাণিজ্যিক শোষণ থেকে রক্ষা নিশ্চিত করতে পারে। সংক্ষেপে, হিপোক্রেটিসের শপথ অনুযায়ী চিকিৎসককে মানবিক, নৈতিক ও উত্তম চিকিৎসা প্রদান করতে হবে, যা সমাজে সুস্থতা ও ন্যায় বজায় রাখবে। এই শপথনামার মূল সারমর্ম হলো, চিকিৎসা ও নৈতিকতা নির্দেশ অনুযায়ী একজন ডাক্তারকে রোগীর কল্যাণে তার সমস্ত জ্ঞান ও ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে।  রোগীর ভুল চিকিৎসা ও ক্ষতি করা যাবে না। থাকতে হবে নৈতিকতায় অবিচল। এতে উল্লেখ আছে যে, একজন নতুন চিকিৎসক দৈবশক্তির নামে শপথ গ্রহণ করবেন।

চিকিৎসাবিদ্যা লাভ করার পর গুরুর প্রতি সম্মান ও দায়িত্ব পালন করবেন। চিকিৎসা শিক্ষার প্রসার ও রোগীর কল্যাণে জ্ঞান প্রয়োগ করবেন। এখানে বলা হয়েছে একজন চিকিৎসক অবশ্যই অনৈতিক চিকিৎসা থেকে বিরত থাবেন। প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসাবিদ্যা লাভ করার পর তিনি শুধু চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত থাকবেন। নিজেকে নিবেদিত রাখবেন রোগীর সেবায়। আর অবশ্যই রোগীর সব তথ্য গোপন রাখবেন। বজায় রাখবেন পেশাগত নৈতিকতা। পেশাগত জীবনের শুরুতেই একজন নবীন চিকিৎসক তার রোগীকে প্রাণনাশক ওষুধ বা গর্ভপাতের জন্য সাহায্য করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

চিকিৎসকরা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবেন। এখানে বলা হয়েছে একজন চিকিৎসককে অবশ্যই রোগীর কল্যাণ ও সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। কখনোই ক্ষতির উদ্দেশ্যে কোনও চিকিৎসা বা ওষুধ সরবরাহ করা যাবে না। চিকিৎসককে তাঁর জ্ঞান, দক্ষতা ও অস্ত্র শুধু সুরক্ষা বা চিকিৎসা সেবায় ব্যবহার করতে হবে। এবং চিকিৎসার বাইরে অন্য কোনও কাজে যুক্ত হওয়ার অনুমোদন নেই। চিকিৎসকরা রোগীর কল্যাণের জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করবেন, কখনও আঘাত বা ক্ষতি করার জন্য নয়। তারা কখনও প্রাণনাশক ওষুধ বা বিষ সরবরাহ করবেন না, বিশেষ করে গর্ভপাতের জন্য সাহায্য করবেন না। তারা চিকিৎসা বিজ্ঞানের বাইরে অন্য কোনও পেশায় নিয়োজিত হবেন না। তারা রোগীর গোপনীয়তা রক্ষা করবেন এবং যা দেখেছেন বা শুনেছেন তা প্রকাশ করবেন না।

এই শপথনামা মেনে চললে চিকিৎসকদের জীবন ও পেশায় উন্নতি ও সুনাম আসবে, অন্যথায় ক্ষতি হতে পারে। এভাবে হিপোক্রেটিসের শপথনামা চিকিৎসকদের জন্য একটি আদর্শ আচরণ নির্দেশিকা হিসাবে কাজ করে।

লেখক: সিনিয়র লেকচারার, মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)।