গতানুগতিক রাজনৈতিক সংগঠনের বাইরে জনসাধারণের অকৃত্রিম ভালোবাসায় সিক্ত একটি অনন্য সংগঠন আওয়ামী লীগ। বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে কখনও সরকারে, কখনও বিরোধী দলে থেকে দেশ গঠনে অনন্য অবদান রেখে চলেছে মাটি ও মানুষের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বাংলা ও বাঙালির যা কিছু অর্জন তার সবকিছুর সঙ্গেই রয়েছে আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার আগে ও পরে বাঙালির প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে– সেটা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক যাই হোক না কেন, আওয়ামী লীগ আছে অগ্রভাগে।
বাঙালির আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ ও বাস্তবায়ন করার দিক থেকে আর কোনও রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাথে তুলনীয় নয়। পঞ্চাশের দশকে অন্যান্য রাজনৈতিক দলেও অনেক ত্যাগী নেতা ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধুর মতো স্পষ্ট, দৃঢ় ও সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান কেউ গ্রহণ করতে পারেননি। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯-এ ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হয়। ’৭০-এর জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের মাধ্যমে মাধ্যমে বাঙালির একমাত্র মুখপাত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে আওয়ামী লীগ। ’৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া ও স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় গৌরবময় অধ্যায়। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের আন্দোলন-সংগ্রাম ও সরকার পরিচালনায় আলোচনা-সমালোচনার নানা মাত্রিকতা রয়েছে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রতিপক্ষ সরকারের রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নে আওয়ামী লীগ কখনও কখনও অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগকে বিরোধী পক্ষের গতানুগতিক বিরোধিতা বা সমালোচনা নয়, গৃহযুদ্ধের মতো ভয়ংকর বৈরিতা-শত্রুতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে আওয়ামী লীগ। অবর্ণনীয় নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়েছে দলের নেতাকর্মীরা। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে দেশ স্বাধীন করার পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। স্বভাবতই প্রত্যাশা ছিল সবাই মিলে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলবে। সবাই মিলে দেশ পুনর্গঠনের কাজ দূরে থাক, দায়িত্ব গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে বিভ্রান্ত একটি গোষ্ঠী। তাদের সাথে হাত মেলায় মুক্তিযুদ্ধে সদ্য পরাজিত দেশি-বিদেশি শক্তি। পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে বঙ্গবন্ধু যখন স্বাধীন বাংলাদেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের রাস্তাঘাট, রেল, নৌ-যোগাযোগ, স্কুল-কলেজসহ প্রায় সব অবকাঠামোই ছিল ধ্বংসস্তূপ। বন্দরে ছিল মাইন পোঁতা। বাণিজ্য ও শিল্পে বাঙালির হিস্যা ছিল খুবই সামান্য। অন্যদিকে যারা পূর্ব বাংলায় ব্যাংক ও শিল্প পরিচালনা করতেন তারা চলে যান পাকিস্তানে। পাকিস্তানি হায়েনারা নিশ্চিত পরাজয় জেনে ব্যাংকের নোটগুলো পর্যন্ত জ্বালিয়ে দিয়েছিল। যুদ্ধের সময় শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নেওয়া এক কোটিরও বেশি মানুষ দেশে ফিরে আসছিল। দেশের ভেতরে প্রায় দুই কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। ২০ লাখ মানুষের কোনও ঘরবাড়িই অবশিষ্ট ছিল না। ছিল ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি। তখনও বেসামরিক প্রশাসন পুরোপুরি পুনর্গঠিত ছিল না। স্বাধীন বাংলাদেশের তখন মাথাপিছু আয় ছিল ৫০-৬০ ডলারের মতো এবং তা ছিল প্রায় স্থবির। মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫০ বছরেরও কম। বেকারত্বের হার ছিল ২০-৩০ শতাংশ। শিক্ষার হার ২০ শতাংশ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার মাইনাস ১৪ শতাংশ। স্বাধীনতার অব্যাহতি পরেই ১৯৭২-৭৩ সালে বহির্বিশ্বের পরিস্থিতিও ছিল চরম প্রতিকূল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই মার্কিন প্রশাসন ‘স্মিথসোনিয়ান অ্যাগ্রিমেন্ট’ গ্রহণ করে, যার ফলে গোল্ড থেকে ডলারকে পরিবর্তন করার যে পরিমিত সমীকরণ (ইকুয়েশন) ছিল, সেটাকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। ফলে ৩ ডলারের তেলের ব্যারেল হয়ে গেলো ১১ ডলার।
আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন গমের মূল্য ৮০ ডলার থেকে বেড়ে হয়ে গেলো ২৪০ ডলার। ৮০ ডলারের প্রতি টন সারের মূল্য বেড়ে হলো ২০০ ডলার। পুরো বিশ্বে এবং উন্নত অর্থনীতিগুলোর অনেকগুলোয় নজিরবিহীন মূল্যস্ফীতি দেখা দিলো। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারত ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ছাড়া দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াবার মতো বন্ধুর বড়ই অভাব ছিল। সব মিলিয়ে দেশটির টিকে থাকা নিয়েই শঙ্কা ছিল। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো ও বড় পরাশক্তির ধারণা হয়েছিল যে সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারবে না। হেনরি কিসিঞ্জারের নেতৃত্বাধীন এক কমিটি মনে করেছিল, এটি হবে আন্তর্জাতিক এক তলাবিহীন ঝুড়ি। এখানে যতই সাহায্য ঢালা হোক না কেন, তা কোনও কাজেই লাগবে না। দেশটিতে দ্রুতই দুর্ভিক্ষ ও মহামারি দেখা দেবে। ওই সময়ে সিআইএ’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এত অল্প জায়গায় এত মানুষের বাস এবং এত দারিদ্র্যের কারণে দেশটি তার প্রতিবেশী এবং বিশ্বের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হতে পারে। এমনই এক চ্যালেঞ্জিং সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেন বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধু অতি অল্প সময়ের মধ্যে দেশটির ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ করে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার শক্ত পাটাতন তৈরি করতে মনোযোগী হলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ যখন মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে ঠিক তখনই কিছু মানুষ পরিকল্পিতভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। তথাকথিত বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য মানুষ হত্যা, অরাজকতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের মতো অবৈজ্ঞানিক পন্থা বেছে নেয়। পাঁচ জন সংসদ সদস্যসহ কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করে, ঈদের জামাতে হামলা করে, থানায় আক্রমণ করে, পাটের গুদামে আগুন ধরিয়ে দেয়, রেললাইন ধ্বংস করে, সার কারখানা ধ্বংস করে, জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। হেনরি কিসিঞ্জার বঙ্গবন্ধুর সরকারের বিরুদ্ধে খাদ্যাস্ত্র ব্যবহার করে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুবিরোধী রাজনৈতিক দল-উপদলকে বঙ্গবন্ধুর সরকারকে উৎখাতের জন্য অর্থ ও অস্ত্র সাহায্য দেন। Stanley Wolpert তাঁর ‘Zulfi Bhutto of Pakistan’ গ্রন্থে দালিলিক প্রমাণসহ লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের কয়েকটি বামপন্থি দল ও স্বাধীনতাবিরোধীদের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো অর্থায়ন করতেন।’
অন্যদিকে ১৯৭৩ সালে গোলাম আযম পূর্ব-পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি গঠন করে সোনার বাংলা পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে মুজিব সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু করে। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য ভুট্টো ও তার এজেন্টরা উঠে পড়ে লাগে। ভয়ানক প্রতিকূলতা ও ষড়যন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে অর্থনীতি সবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। ১৯৭৫ সালের শুরু থেকে কৃষি উৎপাদন ও রফতানি বাড়ছিল, মূল্যস্ফীতি কমে আসছিল। সত্যি কথা বলতে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার পথে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ঠিক তখনই সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টাকে সপরিবারে হত্যা করা হলো। সোনার বাংলার স্বপ্নকে সমূলে উপড়ে ফেলতে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ছায়াসঙ্গী স্বপ্নের সারথী রাষ্ট্রীয় হেফাজতে থাকা জাতীয় চার নেতাকে কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহযোদ্ধাদের হারিয়ে সোনার বাংলার স্বপ্নরাই কেবল নয়, বাংলাদেশ নিজেও পথ হারিয়ে ফেললো। খুনি ও তাদের দোসরদের চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ ছিল না। তাদের মননে বাংলাদেশ নয়; ছিল পাকিস্তানের ছায়া। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে হত্যা করে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। একীভূত করা সম্ভব না হলে কনফেডারেশন গঠন করে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের আশ্রিত রাষ্ট্রে পরিণত করা হত্যার উদ্দেশ্য ছিল।
খুনিদের উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষের প্রমাণিত মিত্রদের জন্য নিরাপত্তা ও রাজনীতির সুযোগ সৃষ্টি করা। আর তাই সামরিক ফরমান বলে সংবিধান সংশোধন করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়, দালাল আইনে দণ্ডিতদের ভোটার হওয়ার অযোগ্য ঘোষণা সংক্রান্ত সংবিধানের ১২২ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়। যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দালাল আইনে চলমান বিচার বন্ধ করা হয়। দালাল আইন রহিতকরণ করে ট্রাইব্যুনাল বাতিল করা হয়। মৃত্যুদণ্ডসহ নানা মেয়াদে কারাদণ্ডে দণ্ডিত ৭৫২ জন অপরাধীকে মুক্ত করে দেওয়া হয়। স্বাধীনতাবিরোধীদের মন্ত্রী বানানো হয়।
১৯৭৫ সালের আগস্ট ও নভেম্বর মাসে আওয়ামী লীগের ওপর নৃশংস আঘাত হেনে একে অস্তিত্ব সংকটের মুখে ফেলা হয়। দলের সর্বোচ্চ ও রাষ্ট্রের প্রধান জাতির জনককে বর্বরভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ৩ মাস পর প্রথম বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদসহ চার নেতাকে কারাগারে হত্যা করা হয়। এভাবে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে। খুনি ও তাদের দোসররা এখানেই ক্ষান্ত হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার বিচার করা যাবে না মর্মে দায়মুক্তি আইন করে খুনিদের বাঁচাতে সাংবিধানিক রক্ষাকবচ তৈরি করা হয়। পঁচাত্তরের ঘাতকরা এবং পরবর্তীতে ২ সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান ও জেনারেল এইচ এম এরশাদ আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ন্যক্কারজনক অপপ্রচার চালায়।
আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে শুরু হয় অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন। অধ্যাপক আবু সাইয়িদ তার জেনারেল জিয়ার রাজত্ব গ্রন্থে লিখেছেন, ‘গ্রাম বাংলার তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে সংগঠনের কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ৬২ হাজার নেতাকর্মীকে ৭৫-৭৬ সালের মধ্যেই গ্রেফতার করা হয়। দৈহিক অত্যাচারে অনেককে হত্যা করা হয়। গুম করা হয় লাশ। জিয়াউর রহমানের নির্দেশিত লেলিয়ে দেওয়া সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা বাহিনী অনেক নেতাকর্মীকে এত নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে দৈহিক অত্যাচার চালায়, যার ফলে অনেক নেতাকর্মী পঙ্গু হয়ে পড়েন। অনেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। হিটলারের গোপন বাহিনীর মতো এদের অত্যাচারের পন্থাও ছিল ভিন্ন ও নিষ্ঠুরতায় পূর্ণ। সামরিক শাসনের নিগড়ে শৃঙ্খলিত বাংলাদেশ। মৌলিক অধিকার নেই। বিচার নেই। শাসনতন্ত্র স্থগিত। মুখ বন্ধ। টুঁ-শব্দটি করার উপায় নেই। সামরিক শাসকগোষ্ঠীর এই নির্মম নিষ্ঠুর অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যাবে না।
সামরিক ফরমানে ঘোষণা করা হয়েছে, কথাবার্তা, আকার ইঙ্গিত, চিহ্ন দ্বারা সামরিক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কিছু করলে বা বললে তার শাস্তি ৫ বছর কারাদণ্ড থেকে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত। জাতির জনক টুঙ্গিপাড়ার কবরে, সেখানে চব্বিশ ঘণ্টা সশস্ত্র পাহারা। কেউ গেলে ধমকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। না মানলে গ্রেফতার করে। মোনাজাত করতে গিয়ে গ্রেফতার হন হাজী গোলাম মোরশেদ। বঙ্গবন্ধুর কবরে এই পাহারা ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বলবৎ ছিল। (১৯৮০ সাল পর্যন্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কবর পাহারা দিয়ে রাখা হতো যাতে কেউ জিয়ারত না করতে পারে (সাপ্তাহিক রোববার, ২১ জুন, ১৯৮১)। ঢাকার ৩২নং বাড়ি ছিল তালাবদ্ধ। বাড়ির সামনে যেতে দেওয়া হতো না। বাড়ির সামনে দাঁড়ালে ধমক খেতে হতো।’
এমনি ভয়াবহ অবস্থায় ১৯৭৬ সালের ২৮ জুলাই গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রচনার কথা বলে এক সামরিক ঘোষণায় রাজনৈতিক দলবিধি (পলিটিক্যাল পার্টি রেগুলেশন পিপিআর) জারি করা হয়। ফরমানে বলা হয়, যারা বাংলাদেশে রাজনীতি করতে চায়, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়, দল গঠন করতে চায়, তাদের রাজনৈতিক দলবিধির আওতায় দল গঠনের অনুমতি চেয়ে দরখাস্ত জমা দিতে হবে। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ গোপন বৈঠকে বসে দল গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির গঠনতন্ত্রের ক্রম অনুসারে সিনিয়র সহ-সভাপতি জনাব মহিউদ্দিন আহমদ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং বেগম সাজেদা চৌধুরীর ওপর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। পিপিআর-এ বলা হয়, দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র জমা দিয়ে দল গঠনের অনুমতি নিতে হবে। চার মূলনীতি বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র যা ছিল স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের দর্শন, তার আলোকেই আওয়ামী লীগ গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র জমা দেওয়া হয়। মুখবন্ধে বঙ্গবন্ধুর নাম উল্লেখ করে ৯ অক্টোবর ১৯৭৬ সালে দল গঠনের অনুমতি চেয়ে আবেদন দায়ের করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা মুছে ফেলতে এরইমধ্যে সামরিক ফরমান জারি করে বলা হলো, কোনও জীবিত বা মৃত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে দল গঠন করা যাবে না। দল গঠনের আবেদন জমাদানের কয়েক দিন পরেই আইন, বিচার ও সংসদ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হলো, “The very word ‘Bangabandhu’ should be omitted.” ১৮ অক্টোবর ’৭৬ সালে বেগম সাজেদা চৌধুরী এই পত্র হাতে পেলেন। আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই চিঠিতে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের দাখিলকৃত গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রের বক্তব্য ১৯৭৬ সালের রাজনৈতিক দলবিধির ১০নং ধারার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। দলে সংকট সৃষ্টি হলো। মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে দলের একাংশ বললেন, নামে কী আসে যায়। মুজিব অনুসারীদের বিভক্ত ও দুর্বল করার যে চক্রান্ত শুরু হয়েছিল সেই কুটিল ষড়যন্ত্র আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হয়ে বিচারপতি সায়েম জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেন, ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য পার্লামেন্ট নির্বাচন ১৯৭৬ সালের ২১ নভেম্বর অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়। সামরিক শাসকগোষ্ঠী গণআন্দোলনের ভয়ে আবদুল মালেক উকিল, বেগম সাজেদা চৌধুরী, আবদুল মমিন তালুকদার, সালাহউদ্দিন ইউসুফসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ব্যাপকভাবে গ্রেফতার করে। কিন্তু মিজান চৌধুরী গ্রুপের কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। মিজান চৌধুরী আওয়ামী লীগের অন্যদের সঙ্গে আলোচনা না করে গোপনে দল গঠনের অনুমতি চেয়ে আবেদন জমা দেন। তিনি অনুমতিও পেয়ে যান। ইতোমধ্যে প্রায় এক ডজন দল অনুমতি নিয়ে নিয়েছে।
এমতাবস্থায় মূলধারার আওয়ামী লীগ কেবল বঙ্গবন্ধু নয়, পুরো মুখবন্ধ বাদ দিয়ে দল গঠনের আবেদন পুনরায় জমা দেয়। সামরিক শাসকের কুটিল খেলায় তবু আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়ে গেলো। ছয় বছর বিদেশে নির্বাসন শেষে দেশের এক ক্রান্তিলগ্নে ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন এবং দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগকে একত্রিত করেন। এর আগে ১৯৮১ সালের ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। দেশমাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব অর্পণ করা হয় বঙ্গবন্ধুকন্যার হাতে। জিয়াউর রহমানের সরকার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করতে না দেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। গঠিত হয় শেখ হাসিনা প্রত্যাবর্তন প্রতিরোধ কমিটি। সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রিয় স্বদেশভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা যখন দেশে ফিরে আসেন আওয়ামী লীগের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ বাঙালি জাতির বিপন্ন অস্তিত্বকে রক্ষা করা। সামরিক স্বৈরশাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট বাঙালি জাতির জীবনে নেমে এসেছে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। আওয়ামী লীগের সামনে অত্যন্ত দুরূহ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ভয়ংকর রকম চ্যালেঞ্জিং সময় তখন। অবিশ্বাস্য শোনালেও পরিস্থিতি এমন অদ্ভুত ছিল যে হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিরা অপরাধী আর খুনিরা 'সূর্য সন্তান'। পঁচাত্তরের হত্যাকারীরা একের পর এক ক্ষমতাসীন শাসকের পৃষ্ঠপোষকতা ও আনুকূল্য দ্বারা পুরস্কৃত হয়েছে। যারা স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার অপরাধে নির্বংশ করতে চেয়েছিল সেই খুনিরা দম্ভভরে হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততার ঘোষণা দিয়েছে। খুনিরা তৎপর বেঁচে থাকা বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে হত্যা করতে। বিচারহীনতার সংস্কৃতির পাশাপাশি শুরু হয়েছিল রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের। উত্থান ঘটে স্বাধীনতাবিরোধীদের। শুরু হয় সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পের রাজনীতি। এমন শ্বাপদসংকুল পরিস্থিতিতে দেশকে সামরিক শাসনের নিগড় থেকে মুক্ত করা, বিচারহীনতার অবসান ঘটানো, মুক্তিযুদ্ধে মানবাধিকারবিরোধী অপরাধের বিচার পুনরায় শুরু, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের প্রতিষ্ঠা, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ পুনর্বহাল এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার বাস্তবায়নের জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংগ্রাম শুরু করে।
সফল সংগ্রামে সামরিক শাসনের অবসান ঘটেছে। সব শঙ্কা-সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে বিচারিক আদালতে বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জেল হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত মূল অপরাধীদের বিচার শেষে দণ্ডও কার্যকর হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রের জন্য নতুন বিপদ আসে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর। বিএনপি-জামায়াত জোটের ক্ষমতা অভিশাপ হয়ে আসে বাংলাদেশের জন্য। সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি শত শত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী খুন-জখম-ধর্ষণের শিকার হয়। তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কেড়ে নিয়ে এলাকা-ছাড়া করা হয়। রাষ্ট্রীয় মদতে জঙ্গিবাদের ভয়ংকর উত্থান ঘটে। দেশের ৬৩টি জেলার ৪৩৪টি স্থানে জঙ্গিরা একযোগে বোমা হামলা করে। অন্ততপক্ষে ১০টি আত্মঘাতী হামলা চালানো হয় তিন মাসের ব্যবধানে। এতে বিচারক, পুলিশ, আইনজীবী, সরকারি কর্মকর্তা, সংস্কৃতিকর্মী, পথচারীসহ ৩০ জন নিহত এবং কয়েক শত আহত হয়।
শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ, দক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ দমনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ক্ষমতার মেয়াদান্তে বিশেষ ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার জন্য বিএনপি-জামায়াতের একরোখা আচরণের ফলে ২ বছরের জন্য অরাজনীতিকদের কাছে ক্ষমতা চলে যায়। বিরাজনীতিকরণের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের আন্দোলনের ফলে দেশ রাজনীতির ধারায় ফিরে আসে। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ পুনর্নির্মাণের কাজ অব্যাহত রয়েছে। সোনার বাংলা নির্মাণের পথে দেশ এগিয়েছে অনেক দূর। আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরে উন্নয়ন-অর্জনে অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ। নিজ অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বড় বড় মেগা প্রকল্প দৃশ্যমান হয়েছে।
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সামাজিক কর্মসূচির আওতায় পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী, অসহায়, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, স্বামী নিগৃহীত নারী, অটিজম, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা প্রদান, ১৭ হাজার ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে দরিদ্র মানুষ বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ প্রদান করা হচ্ছে। চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা শতভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিনামূল্যে বই বিতরণ, কৃষি, স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। বিনামূল্যে ভূমি ও গৃহহীনদের ঘরবাড়ি তৈরি করে ৫৮ জেলার ৪৬৪ উপজেলা ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। শতভাগ বিদ্যুতায়ন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে ইন্টারনেট সংযোগ। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে এখন উন্নয়নশীল দেশের তালিকায়। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন হয়েছে। ছিটমহল সমস্যা নিয়ে ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক সমঝোতা ও সীমান্ত সমস্যা সমাধান আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। সমুদ্র জয় থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে মহাকাশ বিজয় ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন হয়েছে। লক্ষ্য এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন।
দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী তথা প্লাটিনাম-জয়ন্তী আজ। ৭৫ বছরের মধ্যে প্রায় ৫০ বছরই আওয়ামী লীগকে থাকতে হয়েছে রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে, রাজপথ, আন্দোলন-সংগ্রামে। এই সুদীর্ঘ পথপরিক্রমায় আওয়ামী লীগকে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। অনেক চড়াই-উতরাই এবং ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে এগোতে হয়েছে। কখনও নেতৃত্বশূন্যতা, কখনও দমন-পীড়ন, কখনও ভাঙনের মুখে পড়তে হয়েছে দলটিকে। জন্মলগ্ন থেকে জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন তথা শত সংকট মোকাবিলা এবং দীর্ঘ সংগ্রামের পথ অতিক্রম করে এগিয়ে চলছে আওয়ামী লীগ। বাঙালিকে কেবল একটি স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ উপহারই নয়; প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া, কর্মসংস্থান ও বিশ্বের বুকে নতুন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃত অর্জনে অভাবনীয় সাফল্যও এসেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই। তারপরও স্বস্তি নেই আওয়ামী লীগের।
টানা নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা নির্বাচনি ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ও দেশবাসীকে রাজনীতিবিমুখ করার চেষ্টা করছে। বিরাজনীতিকরণের আরেকটি ষড়যন্ত্র দৃশ্যমান। আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে পরিকল্পিতভাবে অনুপ্রবেশ ঘটেছে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শবিরোধী শক্তির। আওয়ামী লীগের নীতি ও আদর্শকে ভিতর থেকে খুবলে খাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর এসব মেয়াদি ভক্তরা। চরমভাবে বিতর্কিত করছে দেশের সবচেয়ে পুরাতন, ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় এই রাজনৈতিক দলটিকে। অত্যন্ত কঠোরভাবে মোকাবিলা করতে হবে এদের। রাজনীতিতে যে দুর্বৃত্তায়ন ঘটেছে তা যেকোনও মূল্যে বন্ধ করতে হবে। প্রচলিত আছে, আওয়ামী লীগ হারলে একা হারে না; সেই সঙ্গে দেশ ও জনগণও হারে। মুক্তিযুদ্ধ নির্বাসিত ও গণতন্ত্র পথবিচ্যুত হয়।
লেখক: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
ই-মেইল: zhossain1965@gmail.com