জুমাতুল বিদার কি বিশেষ মর্যাদা আছে?

আজ রমজানুল মোবারকের ২৯ তারিখ। পঞ্চম শুক্রবার। সাধারণত রমজান মাসে ৪টি জুমা হয়ে থাকে। এবছর পাঁচটি জুমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৪৪৪ হিজরির রমজানুল মোবারকের আজ শেষ জুমা। রমজানুল মোবারকের শেষ জুমা আমাদের কাছে জুমাতুল বিদা বা বিদায় জুমা নামে পরিচিত।

আল্লাহ তায়ালার অসীম অনুগ্রহ তিনি আমাদেরকে রমজানের মতো বরকতময় মাস দান করেছেন। রমজান মাস এমন একটি মাস যে মাসে আল্লাহ তায়ালার করুণা অঝরে বর্ষিত হতে থাকে। আল্লাহ’র দয়া, অনুগ্রহ মানুষের ক্ষমা প্রত্যাশায় ব্যাকুল হয়ে ওঠে। বান্দার ক্ষমার জন্য উপলক্ষ খুঁজে ফিরে। এ মাসের ছোট ছোট আমলের প্রতিদানে আল্লাহর পক্ষ থেকে অসীম রহমত ও মাগফিরাতের অঙ্গীকার রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা মেহেরবানী করে আমাদেরকে রমজান মাস দান করেছেন। আজ বরকতময় মাসের শেষ জুমা।

জুমাতুল বিদার কোনও বিশেষ আমল নেই

জুমাতুল বিদা হিসেবে ইসলামের কোনও স্বতন্ত্র অনুষ্ঠান নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামের জন্য কোনও বিশেষ বিধি-বিধানও দেননি। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য কোনও বিশেষ ইবাদত বা কোনও বিশেষ পদ্ধতির ও নির্দেশ করেননি। এই দিনের জন্য বিশেষ কোন আমল রয়েছে এমন কথাও রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেননি। বরং এটি অন্যান্য জুমার মতো একটি জুমা।

জুমাতুল বিদার বিশেষ মর্যাদা

রমজানের সর্বশেষ জুমাটি বিশেষভাবে এই কারণে অধিক তাৎপর্যপূর্ণ যে এ বছরে এই দিনটি আর পুনরায় ফিরে আসবে না। রমজান মাসে আমরা এবছর পাঁচটি জুমা পেয়েছি।

 

আলহামদুলিল্লাহ। তন্মধ্যে এটি সর্বশেষ জুমা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে অনুগ্রহ করে এই নেয়ামত দান করেছেন। যদি আল্লাহ তায়ালা আমাদের হায়াতকে দীর্ঘায়িত করেন তাহলে হয়তো আগামী বছর পুনরায় নিয়ামত প্রাপ্ত হবো। এই নিয়ামত আমাদের হাত থেকে চলে যাচ্ছে, তাই এর কদর করা বিশেষ প্রয়োজন।

জামাতুল বিদা আনন্দে ও ভয়ের

আজকের এই দিনটি একদিকে খুশির এবং কৃতজ্ঞতা আদায়ের দিন অন্যদিকে ভয় করার দিনও। আনন্দ ও খুশি এ কারণে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দয়া করে আমাদেরকে রোজা, তারাবি, ইফতার, সেহরি, কোরআন তেলাওয়াত এবং সর্বশেষ জুমা পড়ার তৌফিক দান করছেন। ভয় এই কারণে যে, হাদিস শরিফে এসেছে একবার হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুক্রবারে জুমার নামাজে খুতবা দেওয়ার জন্য মসজিদে তাশরিফ আনলেন। হজরত রাসুল (সা.) মসজিদে নববির মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিম্বরটি ছিল তিনটি সিঁড়ি বিশিষ্ট। তিনি সর্বশেষ সিড়িতে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন। সেদিন সাহাবায়ে কেরাম এক বিস্ময়কর দৃশ্য অবলোকন করলেন নবী করিম (সা.) যখন প্রথম সিঁড়িতে পা রাখলেন বললেন আমিন। যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন বললেন আমিন। অতঃপর যখন তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন তখনও বললেন আমিন। সাহাবায়ে কেরাম খুবই বিস্মিত হলেন। সাহাবিগণ হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন– ইয়া রাসুলুল্লাহ আজ আপনি সিঁড়িতে পা রাখার সময় তিনবার আমিন বললেন? এর রহস্য কী? জোরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যখন মিম্বরে আরোহন করি তখন হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম আমার কাছে আসলেন একটি দোয়া করলেন, তার ওপর আমি ‘আমিন’ বললাম। অবশ্যই আল্লাহপাক এই তিনটি দোয়া কবুল করেছেন। কিন্তু এখানে ভয়ের বিষয় হলো এই, এই দোয়াটি মূলত ‘বদদোয়া’ ছিল। হজরত জিবরাইল (আ.) বদদোয়া করেছেন এবং আমাদের নবী তার পিঠে আমিন বলেছেন।

তিনটি বদদোয়া হচ্ছে এই, প্রথম সিঁড়িতে পা রাখার সময় হজরত জিবরাইল আলাইহি সালাম বললেন, যাদের ঘরে বৃদ্ধ মা বাবা আছে। তারা থাকা সত্ত্বেও গুনাহ মাফ করতে পারে নাই তারা ধ্বংস হোক। দুই– প্রিয় নবীজির নাম উচ্চারণ হওয়ার পরও যারা দুরুদ শরিফ পড়ে না, তারা ধ্বংস হোক। তিন নম্বর বদদোয়াটি করেছিলেন তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখার সময় যারা রমজানুল মোবারক পেয়েও গুনাহ মুক্ত হতে পারেনি তারাও ধ্বংস হোক।

আজ রমজানের শেষ জুমা

আজকের এই দিনটি রমজানের শেষ জুমা। শেষ জুমাটি খুবই ভয়ের জুমা। ভয়ের কারণ, যদি আমরা আমাদের গুনাহগুলো মাফ করাতে অক্ষম হয়ে থাকি তাহলে আমরা ওই হুশিয়ারির আওতায় পড়ে যাবো। কারণ আল্লাহ তাআলা রমজান মাসটি যে কারণে দান করেছিলেন যে রমজান মাসের রহমত ও মাগফেরাতের ঝরনায় ধুয়ে মুছে আমরা আমাদের পাপের ক্লেদ থেকে পরিপূর্ণরূপে মুক্ত হয়ে উঠবো। পাপ মোচনের খুবই সহজতম পথ হলো রমজান মাস। আল্লাহ তায়ালা অঙ্গীকার করেছেন তোমরা যদি রোজা রাখো তাহলে তোমাদের পেছনের গুনাহগুলো মাফ করে দেব। তোমরা যদি নিয়মিত যত্নসহ তারাবির নামাজগুলো আদায় করো তা হলে তোমাদের পেছনের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেব। আল্লাহর কোন বান্দাকে তোমরা ইফতার করাও তাহলে তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিবো। এক কথায় আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের মাগফিরাতের জন্য অসংখ্য বাহানা তৈরি করে রেখেছেন। তাই এটা মাগফেরাত লাভের এক মহা মৌসুম। সুবর্ণ সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও যে ব্যক্তি পাপ মুক্ত হতে পারলো না তার জন্য হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম এর বদ দোয়া রয়েছে। আমরা মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া করি আল্লাহ যেন আমাদেরকে জিবরাইল আলাইহিস সালামের এই বদ দোয়ার অন্তর্ভুক্ত না করেন।

আমরা আশাবাদী

আল্লাহ পাক যেহেতু অঙ্গীকার করেছেন আমাদের গুনাহ মাফ করে দেওয়ার আমরা আশাবাদী আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন। আল্লাহ পাক আমাদের জীবনে বার বার রহমত বরকত ও মাগফিরাতের রমজান দান করেন।

লেখক: মুফতি; খতিব, পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদ, গুলিস্তান, ঢাকা