চুক্তি বাতিলে হঠাৎ কেন তৎপর এক্সিলারেট এনার্জি

চুক্তি বাতিলে হঠাৎ তৎপর হয়ে উঠেছে এক্সিলারেট এনার্জি। মার্কিন এই কোম্পানিটি কক্সবাজারের মহেশখালীতে একটি এলএনজি টার্মিনাল পরিচালনা করছে। বিগত সরকার একই কোম্পানিকে পায়রাতে আরও একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কার্যাদেশ দিতে যাচ্ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার ‘বিদ্যুৎ-জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি বিশেষ বিধান ২০১০’ বাতিল করায় আগের সরকারের সেই উদ্যোগটি বাদ পড়েছে। মার্কিন কোম্পানিটি চাইছে, বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র বলছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আরও দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য দেশীয় প্রতিষ্ঠান সামিট এবং মার্কিন প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে চুক্তি করার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে। এর মধ্যে সামিট এলএনজির সঙ্গে সরকারের চুক্তিও হয়। গত ৭ অক্টোবর সামিটের এই চুক্তি বাতিল করা হয়। এটি নির্মাণে সামিটের সঙ্গে চুক্তি হয় গত ৩০ মার্চ। এ সিদ্ধান্ত আবারও বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে ইতোমধ্যে আপিল করেছে সামিট।

অপরদিকে গত নভেম্বরে এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে বিগত সরকার একটি টার্মশিট সই করে। মূলত চুক্তিতে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে, তা ওই টার্মশিটে উল্লেখ ছিল। কিন্তু বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করাতে গত সপ্তাহে এ চুক্তি বাতিলের বিষয়টি এক্সিলারেট এনার্জিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্কিন কোম্পানিটি সরকারের সঙ্গে দূতিয়ালি ঠিক রাখতে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে তাদের উপদেষ্টা নিয়োগ করেছে। বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে পিটার হাসের তৎপরতা এবং পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বিবেচনা করে মনে করা হচ্ছে—এক্সিলারেট এনার্জির ব্যবসা সম্প্রসারণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন।

এর মধ্যে এক্সিলারেট এনার্জির প্রতিনিধিরা মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন। ওই সাক্ষাতে কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্টিভেন কোবোস অধ্যাপক ইউনূসকে বলেন, ‘বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে ও কার্বন নিঃসরণ প্রক্রিয়ায় আরও বিনিয়োগের পরিকল্পনা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সরবরাহ বৃদ্ধি এবং তা নির্বিঘ্ন রাখতে তার কোম্পানি বিনিয়োগ বাড়াতে চায়।’ একইসঙ্গে তিনি মুহাম্মদ ইউনূসকে বলেন, ‘তার নেতৃত্বের সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মার্কিন কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে।’

মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে চুক্তি বাতিলের পর স্টিভেন কোবোস বাংলাদেশ সফরে আসেন। এই সফরে তিনি বুধবার (১৬ অক্টোবর) পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানের সঙ্গেও দেখা করেন। সেখানে তার কোম্পানির উপদেষ্টা পিটার হাসও উপস্থিত ছিলেন।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার অবশ্য ওই বৈঠকের পর জানিয়েছেন, সরকার প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করতে আগ্রহী। দরপত্র আহ্বান করা হলে সেখানে মার্কিন কোম্পানিটিকে অংশগ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

যদিও সরকার ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণের চেয়ে স্থায়ী টার্মিনাল নির্মাণের ওপর জোর দিচ্ছে। বাংলাদেশে বঙ্গোপসাগরে মহেশখালী এবং পায়রা দুই জায়গাতেই সাইক্লোনের প্রভাব রয়েছে। একবার ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে পড়লে টার্মিনালগুলো পুনরায় উৎপাদনে আসতে মাঝে মধ্যেই বেগ পেতে হয়। সম্প্রতি সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অন্তত চার মাস পর ফের উৎপাদনে আসে।

এই পরিস্থিতির মধ্যে জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এর আগে জানিয়েছেন, সরকার ভাসমানের বদলে স্থায়ী টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহী।

এ ধরনের টার্মিনাল স্থলভাগে নির্মাণ করাতে ব্যয় বেশি হলেও ঘূর্ণিঝড় বা অন্য কোনও দুর্যোগে সরবরাহে কোনও সমস্যা সৃষ্টি হয় না।