তিতাসের সিন্ডিকেট ভাঙার চেষ্টায় জ্বালানি বিভাগ

তিতাস গ্যাস কোম্পানির সিন্ডিকেট ভাঙার চেষ্টা করছে জ্বালানি বিভাগ। তিতাসে দুর্নীতি কমিয়ে ও স্বচ্ছতা আনতে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, তিতাসে একটি বড় সিন্ডিকেট আছে বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ। তাদের প্রভাবে সরকারের অনেক ভালো উদ্যোগও বাধাগ্রস্ত হয়। এরা সরকারের বিভিন্ন আদেশেরও বিরোধিতা করে। কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে গেলে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

গ্যাস বিতরণ কোম্পানিটির সূত্র জানিয়েছে, মূলত এ সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছে তিতাস গ্যাস কর্মচারী ইউনিয়ন (সিবিএ)। এরা কর্মকর্তাদের নির্বাচন থেকে শুরু করে কর্মচারীদের বদলিও ঠেকিয়ে দেয়।

তিতাসের কোনও কর্মচারীকে শাস্তি হিসেবে এক জোন থেকে অন্য জোনে বদলি করা হলে কয়েকদিনের মধ্যেই দেখা যায় ওই কর্মচারী আবার আগের জায়গা ফিরে এসেছেন। একই জায়গায় বছরের পর বছর কাজ করায় সিন্ডিকেটটি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে বাড়ছে ঘুষ-দুর্নীতি, নিচে নামছে সেবার মান।

এ বিষয়ে জ্বালানি সচিব আনিছুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তিতাসের ইউনিয়ন এত শক্তিশালী যে, মাঝে মাঝে কাউকে বদলি করা হলেও চাপে পড়ে আবার ফিরিয়ে আনতে হচ্ছে। অবশ্য নারায়ণগঞ্জের মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনার পর ওই জোনের পুরো সেটআপ বদলেছি। সবসময় এমনটা করা যায় না। আমরা নতুন করে তিতাসকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছি। তিতাসের দুর্নীতি কমানোই আমাদের মূল লক্ষ্য।’

এর আগে মে মাসে জ্বালানি বিভাগ থেকে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। তাতে বলা হয়, কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন একই এলাকায় চাকরি করতে পারবেন না। তারও আগে দুদকের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে তিতাসের প্রায় তিন শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করা হয়। তখন দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অনেকে ২০ বছর ধরে একই এলাকায় আছে। তখন মাঝপথেই তিতাসকে শুদ্ধি অভিযান প্রক্রিয়া থামিয়ে দিতে হয়। তিতাস ফিরে যায় পুরনো ধারায়। তাই আবারও একটি আদেশ জারি করে জ্বালানি বিভাগ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিতাসের এক কর্মকর্তা বলেন, সিবিএ কর্মকাণ্ড শুধু কর্মচারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তারা কর্মকর্তাদের বিষয়েও হস্তক্ষেপ করে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে সিবিএ নেতারা চিঠি দিয়ে কর্মকর্তাদের দুটি সংগঠনের নির্বাচন আটকে দেয়। সংগঠন দুটি হলো ‘তিতাস গ্যাস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ ও ‘তিতাস ক্লাব কাযনির্বাহী পরিষদ’।

এদিকে তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের ৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চলতি সপ্তাহের ২৩ আগস্ট সোমবার ১০ জন কর্মকর্তাকে দুদক কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বাকি ২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবার মো. নুরুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুদক যে কাউকেই সম্পদের হিসাবের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। সেক্ষেত্রে তাদের অপরাধী ভাবার সুযোগ নেই। সিন্ডিকেটের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গেই কাজ করতে চাই। দুর্নীতি কমাতে ও সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য বদলি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছি। সবসময় করা যায় না। ইচ্ছে না থাকা স্বত্ত্বেও অনেকে এসবে (সিন্ডিকেটে) জড়িয়ে যান। পরে আর বের হতে পারেন না ।’

এদিকে তিতাসের সিবিএ নেতা কাজিম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও মোবাইলে তাকে পাওয়া যায়নি।