২০২২-২৩ অর্থবছরে কর ফাঁকি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা: সিপিডি

২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে কর ফাঁকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখ ২৬ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা—যা আগের এক দশকের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। কর ন্যায্যতা ও রাজস্ব আহরণে চরম দুর্বলতার এই চিত্র তুলে ধরেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

সোমবার(২১ এপ্রিল) ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে ‘করপোরেট আয়কর সংস্কার ও কর ন্যায্যতার দৃষ্টিকোন’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী তামিম আহমেদ এবং আলোচনা করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

সিপিডির গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০২৩ সালে কর ফাঁকির ৫০ শতাংশই করপোরেট খাতে হয়েছে— যার আর্থিক পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। গবেষণা অনুযায়ী, কর ফাঁকির প্রবণতা ২০১১ সালের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০১২ সালে যেখানে কর ফাঁকি ছিল ৯৬ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা, তা ২০১৫ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৭৩ কোটিতে এবং ২০২৩ সালে তা দ্বিগুণ ছাড়িয়ে যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চ করহার, জটিল আইন-কানুন, দুর্বল প্রশাসনিক নজরদারি এবং কর ব্যবস্থায় দুর্নীতিই কর ফাঁকির প্রধান কারণ। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৪৫ শতাংশ কোম্পানি অভিযোগ করেছে, কর প্রদানের সময় তাদের ঘুষ দিতে হয়েছে এবং ৮২ শতাংশ কোম্পানি করহারকে ‘অন্যায্য’ বলে মন্তব্য করেছে।

ঢাকা ও চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত মোট ১২৩টি কোম্পানির ওপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়। পাশাপাশি তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক, তথ্যপ্রযুক্তি, ব্যাংকিং ও চামড়া খাতের ব্যবসায়ীদের মতামতও নেওয়া হয়েছে।

সিপিডি বলছে, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বহুজাতিক কোম্পানির বিনিয়োগ বাড়বে— যা কর ফাঁকি ও কর পরিহারের ঝুঁকিও বাড়াবে। এ প্রেক্ষিতে সিপিডি কর ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো, নীতিগত সংস্কার এবং ডিজিটাল অবকাঠামোর উন্নয়নের সুপারিশ করেছে।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, শুধু কর ফাঁকি নয়, অযৌক্তিক প্রণোদনা ও কর ছাড়ের কারণেও সরকার প্রতি বছর বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে। বিনিয়োগের নামে খাতভিত্তিক কর ছাড় দেওয়া হচ্ছে, যা পুরোপুরি রাজনৈতিক বিবেচনায় নির্ধারিত। তার মতে, এই প্রণোদনা কাঠামো থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

সিপিডির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কর ফাঁকি ও দুর্নীতির কারণে সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হন এবং সাধারণ জনগণের ওপর করের বোঝা বেড়ে যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হতে পারে।