সার আমদানি ও মজুতপ্রক্রিয়া স্বাভাবিক: উপদেষ্টা

কৃষকরা চাহিদামতো সার কেনা ও ব্যবহার করতে পারবেন বলেও জানান কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। দেশে সারের কোনও সংকট হবে না বলেও জানান তিনি।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) কৃষি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা, বন্যার্তদের পুনর্বাসনে গৃহীত পদক্ষেপ ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) কার্যক্রম সম্পর্কে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

এ সময় কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়াসহ মন্ত্রণলয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও দফতর বা সংস্থাপ্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। সার আমদানির প্রক্রিয়া স্বাভাবিক আছে। ভবিষ্যতে সংকট হতে পারে, এ আশঙ্কায় অতিরিক্ত সার কেনা বা মজুত না করা থেকে বিরত থাকুন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসন কার্যক্রম স্বচ্ছতার সঙ্গে দ্রুত সম্পন্ন করার জন্যও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন তিনি।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বন্যায় বেশি আক্রান্ত সাতটি জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ—ফেনীতে ৩৫ হাজার ৬৭৩ হেক্টর (৮০ শতাংশ), নোয়াখালীতে ৩৮ হাজার ৪৫৬ হেক্টর (৩৭ শতাংশ), কুমিল্লায় ৪৯ হাজার ৬০৮ হেক্টর (৩৬ শতাংশ), লক্ষ্মীপুরে ১৫ হাজার ৬২৬ হেক্টর (৩৩ শতাংশ), চট্টগ্রামে ২৩ হাজার ৯৯২ হেক্টর (১৬ শতাংশ), মৌলভীবাজারে ১৫ হাজার ২২২ হেক্টর (১২ শতাংশ) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৮ হাজার ৩২৬ হেক্টর (৩৫ শতাংশ)।

বন্যায় জেলাগুলোর রোপা আমন ১ লাখ ৪১ হাজার ৬০৯ হেক্টর, আউশ ৩৮ হাজার ৬৮৯ হেক্টর, বোনা আমন ৭৬৪ হেক্টর, রোপা আমন বীজতলা ১৪ হাজার ৯০৮ হেক্টর ও শাকসবজি ১১ হাজার ২৯০ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া আদা, হলুদ, আখ, পান, মরিচ, তরমুজ, পেঁপে, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, টমেটো ইত্যাদি ফসল এবং ফলবাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বন্যা মোকাবিলায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বন্যা-উত্তর পরিস্থিতিতে রোপণের জন্য আমন ধানের বীজ বিতরণ ও বীজতলা প্রস্তুত করা, কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ, কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা দেওয়া এবং কমিটির মাধ্যমে সামগ্রিক কার্যক্রম সমন্বয় ও মনিটরিং করা হচ্ছে।

দেশে ১৬ আগস্ট থেকে আকস্মিক বন্যায় দেশের ২৩টি জেলায় ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জেলাগুলোয় ৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৩৩ হেক্টর জমি প্লাবিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ ২ লাখ ৮ হাজার ৫৭৩ হেক্টর। ফসল উৎপাদনে ক্ষতির পরিমাণ ৭ লাখ ১৪ হাজার ৫১৪ মেট্রিক টন, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৩ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১৪ লাখ ১৪ হাজার ৮৯ জন। বন্যায় আক্রান্ত ২৩টি জেলার মোট আবাদ করা ফসলের শতকরা ১৪ দশমিক ৫৮ ভাগ নষ্ট হয়েছে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে পুনর্বাসন কর্মসূচি বাবদ ৯টি জেলায় (কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর ও খাগড়াছড়ি) রোপা আমন চাষের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ১৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে আমন ধানের ৪০০ মেট্রিক টন বীজ কৃষক পর্যায়ে বিতরণ করা হয়।

উপকারভোগী কৃষক পরিবারকে ১০ কেজি ডিএপি সার, ১০ কেজি এমওপি সার এবং নগদ ১০০০ টাকা (মোবাইল ও অনলাইন ব্যাংকিং) দেওয়া হচ্ছে। এতে ১০ হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমি রোপা আমন চাষের আওতায় আসবে এবং উপকারভোগী কৃষকের সংখ্যা ৮০ হাজার জন।

আগামী ২০ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ফেনী, নোয়াখালী ও খাগড়াছড়িতে মোট ২ হাজার ৫০০টি কৃষক পরিবারের কাছে রোপা আমন ধানের চারা পৌঁছাবে, যা দিয়ে ২ হাজার ৫০০ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করা হবে। এর মধ্যে বিএডিসি কর্তৃক সরবরাহ করা বীজে ১ হাজার ৩২৫ বিঘা, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক সরবরাহ করা বীজে ৩৭৫ বিঘা, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) কর্তৃক সরবরাহ করা বীজে ৪৫০ বিঘা এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) কর্তৃক সরবরাহ করা বীজে ৩৫০ বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করা হবে।

বিএডিসির মধুপুরে খামারের ১ দশমিক ৫০ একর উঁচু জমিতে আমন ধানের বীজ রোপণ করা হয়েছে, যা দ্বারা ফেনীর মহিপালে অবস্থিত খামারের ক্ষতিগ্রস্ত ২৫ একর (৭৫ বিঘা) জমিতে আমন ধান আবাদ করা হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহায়তায় কুমিল্লা সেনানিবাসে ২ দশমিক ৫০ একর (৭ দশমিক ৫ বিঘা) জমিতে চারা তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলার কৃষক পরিবারের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।

আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ১ হাজার ২০০ কেজি বীজের চারা ২৪০টি কৃষক পরিবারের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করবে মর্মে আশ্বাস পাওয়া গেছে।

বেসরকারি সংস্থা সিনজেন্টা থেকে ১৫ মেট্রিক টন বীজ ৫ কেজি হারে তিন হাজার কৃষক পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

বন্যাকবলিত জেলাকে গুরুত্ব দিয়ে ৬৪ জেলায় ১২টি ফসলে (গম, ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমুখী, চিনাবাদাম, সয়াবিন, পেঁয়াজ, মুগ, মসুর, খেসারি, ফেলন ও অড়হড়) রবি মৌসুমে প্রণোদনা ও পুনর্বাসনের জন্য ১৬৪ দশমিক ৭৯ কোটি টাকা অর্থছাড় করা হয়েছে, যাতে ১৬ দশমিক ৪১ লাখ কৃষক উপকৃত হবেন। পরবর্তীতে শীতকালীন শাকসবজি উৎপাদনে জন্য ২২ দশমিক ৮৪ কোটি টাকা ১ দশমিক ৫ লাখ কৃষককে প্রণোদনা দেওয়ার জন্য অর্থছাড় করা হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বিভিন্ন খামারে ২২ দশমিক ৫ একর জমিতে চারা উৎপাদনের জন্য ৪ হাজার ৫০০ কেজি আমন ধানের বীজ বপণ করা হয়েছে। উৎপন্ন চারা দিয়ে ৪৫০ একর (১ হাজার ৩৫০ বিঘা) জমিতে আমন ধান আবাদ করা সম্ভব হবে।