এলপিজির দাম কমানোর ভুয়া খবরে হটলাইনে উপচে পড়া কল

কয়েক দিন আগে সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই পোস্ট করেছেন—‘১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কমে নতুন মূল্য ১ হাজার ৭৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।’ প্রথম দিন এমন পোস্ট ভাইরাল হয়ে গেলেও একদিন পর একই পোস্টের সঙ্গে একটি লাইন জুড়ে দেওয়া হয়। ‘কম মূল্যে না পেলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের হটলাইনে অভিযোগ জানানোর জন্য।’ আর তাতেই বাজারে গিয়ে পোস্টের সত্যতা না পেয়ে অভিযোগের বন্যা শুরু হয়েছে ভোক্তা অধিদফতরের হটলাইনে। তাই জনসাধারণকে এমন বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম শফিকুজ্জামান।     

১২ কেজি এলপিজির দাম কমেনি, বরং ১ হাজার ৩৭৭ টাকা থেকে ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৪২১ টাকা নির্ধারণ করেছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। প্রতি মাসের জন্য এই মূল্য সমন্বয় করা হয়। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) নতুন এই মূল্য নির্ধারণ করে সংস্থাটি। কিন্তু তার তিন দিন আগে থেকেই এলপিজি’র দাম কমানোর ঘোষণা দেখা যায় ফেসবুকে।

এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে গত মাসের (আগস্ট) তুলনায় ২১ দশমিক ৫০ ডলার দাম বেড়েছে এলপিজি’র। আগস্ট মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বরে প্রতিকেজি এলপিজির দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৬৫ টাকা। এর আগে ভোক্তা পর্যায়ে আগস্ট মাসের জন্য ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম জুলাই মাসের তুলনায় ১১ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৩৭৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তার আগের মাসে এই দাম বাড়ানো হয়েছিল ৩ টাকা। সে সময় ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৩৬৬ টাকা। শুধু ১২ কেজি নয়, ৫ কেজি, সাড়ে ১২ কেজি, ১৫ কেজি, ১৬ কেজি, ১৮ কেজি, ২০ কেজি, ২২ কেজি, ২৫ কেজি, ৩০ কেজি, ৩৩ কেজি, ৩৫ কেজি ও ৪৫ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দামও বাড়ানো হয়েছে।

এলপিজি’র দাম কমার বিভ্রান্তিকর খবরে বাজারে গিয়ে বিপত্তিতে পড়তে হয়েছে অনেককেই। কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা মির্জা গোলাম রসুল দাম কমার খবর শুনে দোকানে এলপিজি সিলিন্ডার কিনতে গিয়ে পড়েন বিপাকে। তার সঙ্গে বিক্রেতার একপর্যায়ে বাগবিতণ্ডা হয় বলেও জানান তিনি। তার মতে, এর আগে বাজার দর নিয়ে ফেসবুকে গুজব ছড়ানো হয়েছিল। সেনাবাহিনীর নাম ব্যবহার করে বলা হয়– নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি না করলে অভিযোগ জানাতে। সেই খবরও ছিল ভুয়া। বাজারের চিত্র একদমই ভিন্ন। এভাবে সাধারণ মানুষকে হেনস্তা করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

এলপিজি’র দাম কমানোর খবরের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় আরেকটি তথ্য। সেখানে বলা হয়—এই দামে না পেলে ভোক্তা অধিকারের হটলাইন ১৬১২১ নম্বরে অভিযোগ জানাতে। বেশ কিছু দিন ধরেই হটলাইনে কল আসার পরিমাণ অত্যধিক মাত্রায় বেড়ে গেছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। তারা জানান, সাধারণত প্রতিদিন ২৫০-৩০০টি কল গ্রহণ করেন অপারেটররা। কিন্তু এলপিজি সংক্রান্ত বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ার পর প্রতিদিন ১৫০০-১৬০০টি করে কল আসছে হটলাইনে। 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম শফিকুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একটি চক্র এলপিজির দাম নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। যার ফলে আমাদের হটলাইনে গ্রাহকদের প্রচুর অভিযোগের কল আসে। এর আগে বাজার দর নির্ধারণ করা নিয়েও এমনটি করা হয়েছিল। জনসাধারণকে এমন বিভ্রান্তিকর তথ্য নিয়ে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।’