কাঁচা চামড়ার দাম এবার কত বেশি পেলো বিক্রেতারা

রাজধানীর পোস্তায় কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কেনাবেচা শুরু হয়েছে। আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা গত বছরের চেয়ে এবার সামান্য বেশি দাম দিয়ে চামড়া কিনতে শুরু করেছেন। আড়তদাররা ও বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিরা জানান, গতবারের চেয়ে তারা দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা বেশি দিয়ে প্রতিটি কাঁচা চামড়া কিনছেন। তবে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা বলছেন, এবারও গতবারের মতোই চামড়ার দাম কম। খুব একটা বাড়েনি। এমনকি কোরবানিদাতারাও আগের চেয়ে বেশি দামে চামড়া বিক্রি করতে পারেননি।

ঈদের দিন সোমবার (১৭ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘু‌রে দেখা গে‌ছে, যারা কোরবা‌নি দিয়ে‌ছেন তারা আগের বছরের মতোই চামড়ার নামমাত্র দাম পে‌য়ে‌ছেন। আবার অনেকেই মাদ্রাসা ও এতিমখানার লোকজনকে বিনা পয়সায় দি‌য়ে দিয়েছেন।

এদিকে প্রতিবছরের মতো এবার রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবে কাঁচা চামড়ার বাজার বসতে দেওয়া হয়নি। ঈদের দিন দুপুরে কিছু চামড়া এলেও সামান্যই বিক্রি হয়। পরে পুলিশ বিক্রেতাদের তুলে দেয়। তবে বিকালে ল্যাবএইডের সামনের রাস্তায় কিছু চামড়া বিক্রি করতে দেখা গেছে। অ্যাপেক্সসহ বিভিন্ন কোম্পানির পক্ষে কাঁচা চামড়া কিনতে দেখা যায়।

রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবের সামনে কাঁচা চামড়া কিনতে আসা মন্টু নামে এক মৌসুমি ব্যবসায়ী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এবার তারা চামড়াপ্রতি দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা বেশি দিয়ে কিনছেন।‌ তিনি বলেন, গতবার যে চামড়ার দাম ছিল ৮০০ টাকা, এবার সেটি এক হাজার টাকা দিয়ে কিনেছেন। তবে বিক্রেতারা বলছেন, গতবারের চেয়ে কদর বেড়েছে বটে, কিন্তু চামড়ার দাম বাড়েনি। চামড়া বিক্রি করতে আসা আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের এই প্রতিবেদকের। বেশিরভাগই বড় চামড়ার দাম হাঁকছেন ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। তবে ক্রেতারা ঘুরে-ফিরে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় নিতে চাইছেন। ভ্যানে করে অনেকেই চামড়া বিক্রি করতে এসেছিলেন সায়েন্স ল্যাবের দিকে। ফড়িয়াদের চামড়ার দাম শুনে তাদের সবারই মন খারাপ। মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুল কাদের মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে কয়েকজন ছাত্রসহ এক গাড়ি চামড়া বিক্রি করতে এসেছিলেন এই এলাকায়। তিনি দাম চাইলেন গড়ে ১৫০০ টাকা করে। দরকষাকষি করেও তার চামড়ার দাম ৮০০ টাকার বেশি দিতে রাজি হলেন না একটি বেসরকারি কোম্পানির প্রতিনিধি রবিউল ইসলাম। এই প্রতিবেদককে রবিউল ইসলাম জানান, চামড়ার রফতানি বাজার ভালো না, শুধু অভ্যন্তরীণ জুতা তৈরির জন্য আমরা চামড়া কিনছি। গতবার তিনি ৭০০ টাকা দিয়ে যে চামড়া কিনেছেন, এবার একই সাইজের চামড়া ৮০০ থেকে সাড়ে ৮০০ টাকায় কিনছেন। তিনি বলেন, এবার প্রতি চামড়ায় গড়ে দেড়শ’ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে রাজধানীর মানিকনগর এলাকার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী রমজান আলী  বাংলা ট্রিবিউনকে ব‌লেন, আড়ত থেকে বলা হয়েছে আমরা যেন ৮০০ টাকার বেশি দামে বড় চামড়া না‌ কিনি। তাই আমরা গড়ে একটা চামড়া ৪০০ থে‌কে ৫০০ টাকায় কিনে‌ছি। প্রতি চামড়ায় এক থেকে দেড়শ’ টাকা খরচ আছে।

রাজধানীর হাজারীবাগের মৌসুমি ব্যবসায়ী পারভেজ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি এবার বড় গরুর প্রতিটি চামড়া গড়ে দেড়শ’ থেকে ২০০ টাকা বেশি দাম দিয়ে কিনেছি।

এদিকে লালবাগের পোস্তায় গরুর কাঁচা চামড়া সর্বোচ্চ প্রতি পিস ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তুলনামূলক আকারে ছোট গরুর চামড়া ২০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর পুরান ঢাকার পোস্তায় মাঝারি আকারের গরুর একেকটি চামড়া বিক্রি হয়েছে ৭০০-৮৫০ টাকায়। ঢাকার বাইরে দাম ছিল আরও কম।

এ বছর ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা, গত বছর যা ছিল ৫০-৫৫ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় বর্গফুটপ্রতি চামড়ার দাম বাড়ানো হয়েছে পাঁচ টাকা।

অপরদিকে ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা, গত বছর যা ছিল ৪৫-৪৮ টাকা। এ ক্ষেত্রে দাম বাড়ানো হয়েছে সর্বোচ্চ ৭ টাকা। এ ছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম এ বছর ২০-২৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৮-২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী, ঢাকায় মাঝারি আকারের ২৫ বর্গফুটের লবণযুক্ত চামড়ার দাম হওয়ার কথা ১৩৭৫ থেকে ১৫০০ টাকা। এই হিসাব থেকে লবণ, মজুরি ও অন্যান্য খরচ বাবদ ২৫০ টাকা বাদ দিলে ওই চামড়ার আনুমানিক মূল্য দাঁড়ায় ১১২৫ থেকে ১২৫০ টাকা।

সর্বশেষ ২০১৩ সালে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম বেশি ছিল। সেবার গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ছিল ৮৫-৯০ টাকা। এরপর থেকে বিভিন্ন কারণে চামড়ার দাম ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে।

২০১৭ সালের পর থেকে কাঁচা চামড়ার কদর কমেছে। গত বছরও একই দশা ছিল। রাজধানীসহ সারা দেশেই কাঁচা চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েন কোরবানিদাতারা।

২০১৯ সালে কোরবানির পশুর চামড়ার দামে বড় ধরনের ধস নামে। ন্যূনতম দাম না পেয়ে দেশের অনেক অঞ্চলে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া সড়কে ফেলে দেয়। আবার অনেকে মাটিতে পুঁতে ফেলেন।