সরকার ঈদের পর সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছে। ভোক্তাদের ধারণা ছিল এখন হয়তো বাজারে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। কিন্তু সোমবার (৯ মে) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অনেক দোকানেই সয়াবিন তেল নেই। হাতে গোনা ১/২টি দোকানে মিলছে সয়াবিন তেল, তাও চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম। বিক্রেতাদের অভিযোগ, ডিলাররা সয়াবিন তেল দিচ্ছেন না। তারাই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে রেখেছেন। গত কয়েক দিন ধরে বাজারে ডিলারদের প্রতিনিধিদের দেখাও নেই বলে অভিযোগ করেন তারা।
রাজধানীর মিরপুরের বেশ কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ দোকানেই সয়াবিন তেল নেই। ক্রেতারা এসে একের পর এক দোকানে সয়াবিন তেল খুঁজছেন। বিক্রেতারা ‘নেই’ বলে তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন। তেল বিক্রি করতে না পারায় দোকানিরা যেমন ক্ষোভ প্রকাশ করেন, তেমনই সয়াবিন তেল না পেয়ে হতাশ ক্রেতারা।
মিরপুর ১ নম্বরে বাজার করতে আসা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘সরকার কয়েক দিন আগে সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু সেই নির্ধারিত দামেও মিলছে না সয়াবিন তেল। সবসময় ক্রেতা-ভোক্তারাই ভোগান্তির শিকার হয়ে থাকেন। এ ব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপও দৃশ্যমান নয়।’
বেশ কয়েকটি দোকানে সয়াবিন তেল খোঁজার পর না পেয়ে মাইদুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কী আর করবো ভাই, আমরা তো সাধারণ জনগণ। আমাদের তো করার কিছু নেই। এক লাফে ৩৮ টাকা দাম বেড়েছে, কী আর করা। মনে হচ্ছে সয়াবিন তেলের সিন্ডিকেট বেশ শক্তিশালী।’
আরেক ব্যবসায়ী রিপন ট্রেডার্সের কর্মচারী নাঈম বলেন, ‘আমাদের এখানে রূপচাঁদা, পুষ্টি, তীর, বসুন্ধরা ও ফ্রেশ ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেলের ডিলার রয়েছে। কিন্তু দাম বাড়ার পর ডিলারদের প্রতিনিধিদের দেখা নেই। আমরা তেল না পেলে বিক্রি করবো কীভাবে।’
মদিনা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ম্যানেজার মোরশেদ আলম বলেন, ‘আমরা নগদ টাকা দিয়েও ডিলারের কাছ থেকে তেল পাচ্ছি না। তাদের সিন্ডিকেট এতই শক্তিশালী যে সরকার নতুন দাম নির্ধারণের পরও বাজারে তেলের সরবরাহ নেই। আমরা অপেক্ষায় আছি, কবে দোকানে তেল উঠাতে পারবো।’
মিরপুর ১ নম্বরের ফাতেমা এন্টারপ্রাইজে ৫ লিটার এবং ২ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি করতে দেখা যায়। দোকানের মালিক ইমাম হোসেন জানান, ৫ লিটারের বোতল ৯৮৫ টাকা ও ২ লিটার বিক্রি করছেন ৩৯৮ টাকা করে। সোমবার ৫ লিটারের চার বোতল এবং দুই লিটার ৯ বোতল সয়াবিন তেল পেয়েছেন তিনি।
খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভোজ্যতেলের ডিলার ও রাজধানীর মৌলভীবাজারের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ হাশেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে সরবরাহে কোনও ঘাটতি নেই। তবে খুচরা বিক্রির ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। ’
তিনি বলেন, ‘মিল কর্তৃপক্ষের দেওয়া এসও (সাপ্লাই অর্ডার) অনুযায়ী তেল পেতে এখন সময় লাগে ১৫ দিন। আগে আরও বেশি লাগতো। এটি একটি বিষয়, এছাড়াও ঈদের পর ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হলো মাত্র গতকাল (রবিবার), এটিও একটি কারণ। এর বাইরে আরও একটি কারণ হলো, আমাদের ডেলিভারিম্যানরা ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেছেন। তারা এখনও ফেরেননি। আশা করছি দু-একদিনের মধ্যে সব জটিলতা কেটে গিয়ে বাজারে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।’