খেলাপি ঋণ আদায়ে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন স্টিল মিল, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ভোজ্যতেল কারখানাসহ ১ হাজার ১৪৯ শতাংশ জমি নিলামে তুলেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখা। রবিবার (২৭ এপ্রিল) পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নিলামের ঘোষণা দেয় ব্যাংকটি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল লিমিটেড, এস আলম পাওয়ার জেনারেশন এবং এস আলম ভেজিটেবল অয়েল— এই তিন প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ব্যাংকের মোট পাওনা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ব্যাংক দাবি করছে, ২০২৫ সালের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সুদসহ (ইসলামী ব্যাংকের পরিভাষায় লভ্যাংশ) এই পরিমাণ পাওনা রয়েছে।
ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওসমান গনি, চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ, পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম) ও হালিমা বেগমসহ অন্যরা রয়েছেন। একইভাবে এস আলম পাওয়ার জেনারেশন ও এস আলম ভেজিটেবল অয়েলেরও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এই পাওনা আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩–এর ১২ (৩) ধারার আওতায় বন্ধকী সম্পত্তি নিলামের মাধ্যমে পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে আগ্রহী ক্রেতাদের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করেছে ইসলামী ব্যাংক।
এর আগে, ২০ এপ্রিল প্রায় ৯ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন চিনিকলসহ প্রায় ১১ একর সম্পত্তির নিলাম আহ্বান করেছিল ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখা।
২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ইসলামী ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে নেয় এস আলম গ্রুপ। এরপর থেকে গ্রুপটি ব্যাংকটি থেকে নামে-বেনামে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ উত্তোলন করে। একই সময় তারা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংকসহ মোট আটটি ব্যাংকেরও নিয়ন্ত্রণ নেয়। এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন এনে বিপুল অংকের অর্থ উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। ধারণা করা হচ্ছে, এস আলম গ্রুপের উত্তোলিত অর্থের পরিমাণ ২ লাখ কোটি টাকারও বেশি।
বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এস আলম গ্রুপ ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ব্যাংকে নতুন পর্ষদ গঠন করেছে এবং বিশেষ নিরীক্ষা চালাচ্ছে। নিরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ব্যাংকগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে।
ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গ্রুপের খেলাপি ঋণ ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ব্যাংকটি বড় ধরনের সংকটে পড়েছে, যার ফলে ধারাবাহিকভাবে নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।