কর কাঠামো সহজ করার আহ্বান ঢাকা চেম্বারের

কর কাঠামোর সহজ করার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এই আহ্বান জানান।

সাক্ষাৎকালে ঢাকা চেম্বার সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, দেশের জটিল রাজস্ব কাঠামোর জন্য আমাদের কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালনায় নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, তাই এ খাতের উদ্যোক্তাদের বিকাশে সহায়ক এবং সহজ রাজস্ব কাঠামো প্রণয়নের ওপর জোরারোপ করেন। বিদ্যমান কর হার না বাড়িয়ে, করজাল সম্প্রসারণের ওপর তিনি জোরারোপ করেন। তিনি জানান, বর্তমান আইনে ব্যবসায়িক ক্ষতিকে অন্যান্য ব্যবসায়িক উৎসের আয়ের সঙ্গে সমন্বয় করতে না পারলে ব্যবসায়ীদের ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা আরোপিত হচ্ছে, এ লক্ষ্যে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ধারা ৩৭-এর অনুরূপ বিধান পুনর্বহালের প্রস্তাব করেন। কর প্রদান ও কর সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি সহজীকরণের লক্ষ্যে আয়কর ব্যবস্থাকে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসার ওপর জোরারোপ করেন ডিসিসিআই সভাপতি। উৎসে করকে এই মুহূর্তে অগ্রিম করের কিস্তির সঙ্গে সমন্বয় করা না হলে, এমএসএমই কর্তৃক প্রদান করা পণ্য ও সেবার পরিশোধ করা অর্থের থেকে কর্তন করা উৎসে করকে পরবর্তী কর বছরে আয়করের সঙ্গে ক্যারি-ফরওয়ার্ড করার সুযোগ দেওয়ার বিধান রাখার আহ্বান জানান আশরাফ আহমেদ। তিনি উল্লেখ করেন, পণ্যের বিবরণ সঠিক থাকলেও এইচএস কোডে ভুল থাকার কারণে ৪০০% পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে, যার ফলে ব্যবসায়ীদের অনেকসময় হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়, এমতাবস্থায় পণ্যের বিবরণ এবং এইচএস কোডের যে কোনও একটি সঠিক থাকলে কাস্টমস আইন ২০২৩-এর ৮৬(১) ধারা সংশোধন করে অ্যাসেসমেন্ট পর্যায়ে দাখিল করা পণ্য ঘোষণার সংশোধন ও প্রত্যাহারের সুযোগ প্রদানের আহ্বান জানান।

এনবিআর’র চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, আমাদের মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫% লোক রাজস্ব প্রদান করে, যেখানে ভারতে এ হার ২৩% এবং বিদ্যমান বাস্তবতায় রাজস্ব আহরণের হার বাড়াতে নিজেদের করজাল সম্প্রসারণের কোনও বিকল্প নেই বলে তিনি অভিমত দেন। রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমাদের মোট রাজস্বের সিংহভাগই আসে বিদ্যমান করদাতাদের কাছ থেকে এবং সমাজের একটি বড় অংশই করজালের বাইরে থেকে যাচ্ছে, ফলে চাপ বাড়ছে বিদ্যমান করদাতাদের ওপর। এমতাবস্থায় করজাল সম্প্রসারণ করা সম্ভব না হলে বিদ্যমান করদাতারা কর দেওয়ায় নিরুৎসাহিত হবেন, তাই করজাল সম্প্রসারণে এনবিআর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগামী ৬ মাস কাজ করবে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন স্তরে কর আহরণের কারণে বিশেষ করে করপোরেট করের ইফেক্টিভ হার বেড়ে যায়, বিষয়টি এনবিআর গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা  করছে। সামগ্রিক রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা না কমিয়ে, কর হার যৌক্তিকীকরণের পাশাপাশি দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানো হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন। ব্যবসায়িক লেনদেন প্রক্রিয়া ক্যাশলেস ও ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে সম্পন্ন করার জন্য ব্যবসায়ী সমাজের প্রতি আহ্বান জানান এনবিআর চেয়ারম্যান, যার মাধ্যমে কর আহরণের হার আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি রাজস্ব খাতের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি সমাধানের লক্ষ্যে ডিসিসিআইকে প্রয়োজনীয় গবেষণা পরিচালনাপূর্বক সুপারিশ পেশের আহ্বান জানান, যা এনবিআরকে যৌক্তিক পদক্ষেপ গ্রহণে সহযোগিতা করবে বলে মত প্রকাশ করেন, এ ব্যাপারে রাজস্ব বোর্ড প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে।

ঢাকা চেম্বার ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী, সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলী, এনবিআর’র সদস্য (শুল্ক) মো. মাসুদ সাদেক, সদস্য (করনীতি) এ কে এম বদিউল আলম, সদস্য (ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) জি এম আবুল কালাম কায়কোবাদ প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।