বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বিআইএসআর

ঘরের কাজকে জিডিপিতে যোগ করার সুপারিশ

নারী ও পুরুষদের গৃহস্থালির কাজকে জিডিপিতে যোগ করার সুপারিশ করা হয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল রিসার্চের (বিআইএসআর) বাজেট প্রতিক্রিয়ায়। তাদের বাজেট প্রতিক্রিয়ায় নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা বাজেট, প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ বরাদ্দ ও কৃষিতে ভর্তকি বাড়ানোসহ কয়েক দফা সুপারিশ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকারের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। এতে সরকারের আয়ব্যয় ও উন্নয়ন বাজেটের হিসাব দেওয়া হয়।

বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, সরকারের আয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশে কর জিডিপির অনুপাত দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। ২০২১ সালের এপ্রিলের ওয়ার্ল্ড  ইকোনমিক আউটলুকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের কর জিডিপির অনুপাত ছিল গড়ে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ, যেখানে ভারতের ছিল ১৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ, নেপালের ছিল  ২১ দশমিক ৫০ শতাংশ, পাকিস্তানের ১৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কার ছিল ১২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। বাংলাদেশের ডিসেম্বর ২০২৩ সালে দেখা যায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ২০০৬-২০২৩ সাল পর্যন্ত গড়ে ৮ শতাংশ ছিল। ২০১৫ সালে এটি সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছিল।

যেহেতু এবারের বাজাটে আইসিটি খাতে পণ্যের ওপর কর শিথিল হয়েছে সে কারণে আইসিটি সেক্টর এবং ফ্রিল্যান্সিং উভয়ের মার্কেট সাইজ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সরকারের ব্যয়

বিআইএসআরের মতে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, কৃষি ইত্যাদির মতো বিভিন্ন খাতে আরও বেশি দক্ষতা দেখানো দরকার ছিল। স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে অব্যবহৃত রেখে দেওয়া হয়েছে, আবার অনেক হাসপাতালে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই।

শিক্ষা খাতে একইভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু তাদের নিজস্ব আয় কোথায় কীভাবে খরচ হচ্ছে তা জানা যাচ্ছে না।

একইভাবে যোগাযোগ খাতে অনেক ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ণয় না করে রাজনৈতিক বিবেচনায় রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট তৈরি করা হচ্ছে। এসব অবকাঠামো নির্মাণে চুলচেরা বিশ্লেষণ না করে ব্যয় নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর ফলে সরকারের বিভিন্ন দফতরের ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না।

আগের তুলনায় সার, জ্বালানি তেল , বীজসহ কৃষি খাতে সব কৃষি উপকরণের দাম বেড়েছে, যার ফলে ফসলের উৎপাদন খরচ বেড়েই চলেছে। এর সঙ্গে বেড়ে চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি আজ হুমকির মুখে।

উন্নয়ন বাজেট

বিআইএসআর মনে করে, উন্নয়ন বাজেটের ক্ষেত্রে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, সেটা দেশের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এক দিকে সরকার আয় করতে পারছে না, অন্যদিকে সরকার ব্যয় ও করতে পারছে না। ফলে দেশের মানুষের বিভিন্ন চাহিদা পূরণের জন্য যথাযথ পরিকল্পনা নিতে পারেনি।

যে সমস্যাগুলো লক্ষ্য করা যায় তার মধ্যে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া, সরকারের বিভিন্ন দফতরের হাতে পাওনা টাকা সংগ্রহ না করা। ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়ছে অতিরিক্ত টাকা মানুষের হাতে জমা থাকার কারণে। শিক্ষা ও গবেষণা খাতে এবারের বাজেটে কোনো সুখবর নেই।

বিআইএসআর কিছু সুপারিশ করছে, এর মধ্যে রয়েছে— 

১) চাহিদাভিত্তিক বাজেট তৈরি করতে হবে যা একসময় পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রচলন করা হয়।

২) কর ও ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে আরও তৎপরতা বাড়াতে হবে। নতুনদের কর ও ভ্যাটের আওতায় আনতে হবে। সব ব্যবসায়ী ও অবস্থাপন্ন ব্যক্তিদের করের আওতায় আনা।

৩) ব্যয়ের ক্ষেত্রে আরও বেশি দক্ষতা দেখানো দরকার, বিশেষ করে আরও বেশি দক্ষতার সঙ্গে ব্যয় করে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা।

৪) নারী ও পুরুষদের গৃহস্থালির কাজকে জিডিপিতে যোগ করা।

৫) সামাজিক নিরাপত্তা থেকে পেনশন ও সঞ্চয়পত্র বা বন্ডকে বাদ দেওয়া দরকার। অল্প কিছু ছাড়া এটি সামাজিক নিরাপত্তার অংশ নয়।

৬) বেকারভাতা চালু করতে হবে যা তরুণদের সামাজিক মর্যাদা বাড়াতে সহায়ক হবে।

৭) প্রকল্পের মাধ্যমে দুর্নীতি ও অপচয় বন্ধ করতে হবে।

৮) ব্যাংক খাতসহ বিভিন্ন খাতের অর্থ আত্মসাৎ রোধ করা।

৯) গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার যাতে বেসরকারি অলাভজনক বিখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোও বরাদ্দ পায়।

১০) নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা বাজেট চালু করতে হবে।

১১) প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা দরকার।

১২) বিভিন্ন কৃষি উপকরণের দাম বাড়ার কারণে কৃষিতে ভর্তুকি বাড়ানো দরকার।

শিক্ষা খাতে মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ বা জিডিপির ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা বাড়ানো দরকার। এটি আশপাশের গরীব দেশগুলোর চেয়েও কম বলে মনে করে বিআইএসআর।