স্মার্ট কৃষি বাস্তবায়নে কৃষকবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হবে

বাংলাদেশে স্মার্ট কৃষি ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নে কৃষকবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন বক্তারা। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত “স্মার্ট এগ্রিকালচার; ভ্যালু চেইন উন্নয়নে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা” শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এই কথা বলেন।

ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

ঢাকা চেম্বার সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, কৃষি খাতে স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্যের উৎপাদনশীলতা ২০-৩০ শতাংশ বাড়ানো যায়, সেই সাথে এ খাতে ব্যয় ২০ শতাংশ কমানোর পাশাপাশি কৃষকের আয় ৩০-৪০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব। বিদ্যমান অবস্থা উত্তরণে কৃষি যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন ও কৃষকদের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়ানো, কৃষি গবেষণা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো, প্রয়োজনীয় সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন এবং কার্যকর ভ্যালু চেইন ব্যবস্থার প্রবর্তন ও বাস্তবায়নের উপর জোরারোপ করেন ডিসিসিআই সভাপতি।

প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, আমদানি-রফতানিকারকদের সুবিধার্থে খুব শিগগিরই ঢাকা চেম্বারের একটি পূর্ণাঙ্গ হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হবে, যেখান থেকে ‘আইআরসি’ এবং ‘ইআরসি’ সার্টিফিকেট পাওয়ার সকল সুবিধা দেওয়া হবে। তিনি জানান, এ বছরের শেষ নাগাদ ‘যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতর (আরজেএসসি)’-এর সেবার সকল কার্যক্রম পেপারলেস করা হবে, ফলে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি কমবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট এগ্রিকালচারের কোনও বিকল্প নেই এবং পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে কার্যকর ভ্যালু চেইনের গুরুত্ব অপরিসীম।

তিনি আরও বলেন, কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম পাচ্ছে না, অপরদিকে ভোক্তারা বেশি দামে পণ্য ক্রয় করছে, মধ্যস্বত্তভোগীরা মুনাফা করছে, তাদের দৌরাত্ম্য কমাতে হবে। দেশের কোন জায়গায় তুলনামূলক কম মূল্যে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে, এ ধরনের তথ্য পাওয়ার একটি প্ল্যাটফর্ম প্রণয়নের জন্য তথ্য-প্রযুক্তিবিদদের প্রতি আহ্বান জানান। কৃষকদের ব্যবহার উপযোগী তথ্য কাঠামো প্রণয়নের কোনও বিকল্প নেই বলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী অভিমত জ্ঞাপন করেন।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মো. সামসুল আরেফিন বলেন, দেশের কৃষকদের ব্যবহার উপযোগী করে এ খাতের তথ্য-প্রযুক্তি তৈরি করা ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের তরুণ সমাজ সাম্প্রতিক সময়ে কৃষিখাতের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে, যেটা অনেক উৎসাহব্যঞ্জক একটি বিষয়।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী বলেন, আমাদেরকে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের স্মার্ট এগ্রিকালচার প্রাকটিস’র উপর আরও বেশি হারে গুরুত্বারোপ করতে হবে।

সেমিনারে আইফার্মার-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহাদ ইফাজ ‘এগ্রো ভ্যালু চেইনে ফ্রন্টিয়ার টেক অটোমেশনের সম্ভাবনা’ এবং সুইসকন্টাক-এর সিনিয়র ম্যানেজার (প্রোগ্রাম) মোহাম্মদ সাকিব খালেদ ‘স্মার্ট এগ্রিকালচার: ইস্যুস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জস ইন ভ্যালুচেইন ডেভেলপমেন্ট’ বিষয়ক দুটো মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

ফাহাদ ইফাজ বলেন, কৃষি খাতে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলোজির ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যের বাজারের অভিগম্যতা বাড়ানো, উৎপাদন ব্যয় হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। তিনি জানান, ‘ম্যাকেনজি অ্যান্ড কোম্পানি’-এর তথ্য মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক জিডিপিতে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলোজির অবদান থাকবে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, তাই এ খাতের উন্নয়নে নীতি সহায়তা এবং একটি কার্যকর ইকোসিস্টেম একান্ত আবশ্যক।

মোহাম্মদ সাকিব খালেদ বলেন, লাইভস্টক খাতে স্থানীয় বিনিয়োগ বেড়েছে এবং আশা করা যায় আগামী ১০ বছরে এটি দ্বিগুণ হবে।

সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশস্থ ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের ঊর্ধ্বতন কৃষিবিদ ড. মো. আব্দুল কাদের, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক, বাংলাদেশ ব্যাংক অতিরিক্ত পরিচালক (এগ্রিকালচার ক্রেডিট ডিপার্টমেন্ট) ড. মো. আবু বাকের সিদ্দিকী, এ্যাকুয়ালিঙ্ক বাংলাদেশ লিমিটেড’র সিইও সৈয়দ রিজবান হোসেন, উইন ইনকরপোরেটের সিইও এবং প্রতিষ্ঠাতা ড. কাশফিয়া আহমেদ, ড. ক্যাশআই ইনকরপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেদিনা আলী এবং ক্রান্তি অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড’র পরিচালক ও সিইও ড. মোহাম্মদ রিশালাত সিদ্দীকি অংশ নেন।