গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকে প্রতি ২০০ সাধারণ কর্মকর্তার বিপরীতে আইটি কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১জন। বেসরকারি ব্যাংকে ৮০ জন সাধারণ কর্মকর্তার বিপরীতে রয়েছেন ১জন আইটি কর্মকর্তা। আর বিদেশি ব্যাংকে আছেন ৩৫ জনের বিপরীতে ১জন। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের ১৩টি শাখা দেখার জন্য আইটি কর্মকর্তা রয়েছেন মাত্র ১ জন। বেসরকারি ব্যাংকের ৩টি শাখা দেখার জন্য রয়েছেন ১জন আইটি কর্মকর্তা। বিদেশি ব্যাংকের ২টি শাখার দেখভাল করেন ১জন আইটি কর্মকর্তা।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ১৩ শতাংশ ব্যাংকে কোনও আইটি নিরীক্ষক নেই। ৩০ শতাংশ ব্যাংকে নেই আইটি নিরাপত্তা কর্মকর্তা। এমনকি আইটি অডিটরদের (নিরীক্ষক) মধ্যে ২৬ শতাংশেরই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনও ডিগ্রি বা পড়াশোনা নেই। আইটির নিরীক্ষাও করানো হয় তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত নন এমন লোকজন দিয়ে।
আরও পড়তে পারেন:
এ প্রসঙ্গে বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তিন বছর আগেও ব্যাংকগুলো সাইবার ও আইটি নিরাপত্তার জন্য মাত্র এক শতাংশেরও কম অর্থ খরচ করতো। এখন কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু তার পরিমাণ এখনও তিন থেকে সাড়ে তিন শতাংশের মতো। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে আইটি সুশাসনের অভাব রয়েছে। এক্ষেত্রে আইটি নিরাপত্তা ও নিরীক্ষায় ব্যাংকের বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। তিনি জানান, আইটি ক্ষেত্রে যে ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন লোক দরকার, ব্যাংকগুলোতে তা প্রায়ই থাকে না। আইটি খাতে যেসব জনশক্তি তৈরি হচ্ছে, তাদেরও দেশে রাখা যাচ্ছে না। উচ্চ বেতনে তারা বিদেশে চাকরি নিয়ে চলে যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুর্বল আইটি নিরাপত্তা কেবল বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতেই নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইটিখাত এখনও হুমকির মুখে রয়েছে। বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নেটওয়ার্ক পরিচালনায় ব্যবহার করা হয়েছে পুরনো (সেকেন্ড হ্যান্ড) রাউটার। বৈশ্বিক আর্থিক নেটওয়ার্কে সংযোগের জন্য মাত্র ১০ ডলার মূল্যে একটি রাউটার ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি। নেটওয়ার্ক হার্ডওয়্যার ও নিরাপত্তা সফটওয়্যার স্থাপনে কার্পণ্যের মাশুল হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিকে হারাতে হয়েছে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। রয়টার্সের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে যত সুইচ আছে তার সবই মানসম্মত। এগুলো ৩ হাজার ডলারেরও বেশি দামে কেনা। তবে কোনও এক জায়গায় এক্সট্রা হিসেবে ১০ ডলার মূল্যের রাউটার পাওয়া গেছে। যেটা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কেনেনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময়ই মানসম্মত জিনিসই ব্যবহার করে।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে দেশের ব্যাংক খাতে আইটির জন্য যে বিনিয়োগ করা হয়েছে, তার ৮৯ শতাংশ খরচ করা হয়েছে সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও নেটওয়ার্কের যন্ত্রপাতি কেনায়। আর আইটি খাতের প্রশিক্ষণে খরচ হয়েছে মাত্র ২ শতাংশ এবং নিরীক্ষায় (অডিট) খরচ করা হয়েছে ১ শতাংশ। বাকি ৪ শতাংশ খরচ করা হয়েছে আইটি সাজসজ্জা, ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য খাতে।
আরও পড়তে পারেন:
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে আইটি খাতে ব্যাংকের বিনিয়োগ ছিল ৮২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে যন্ত্রপাতি কেনায় ব্যয় হয়েছে ৭৩০ কোটি টাকা (৮৯ শতাংশ)। আর আইটি নিরাপত্তায় খরচ হয়েছে ৩৩ কোটি টাকা (৪ শতাংশ)। গবেষণা অনুযায়ী, ২০১১, ২০১২ ও ২০১৩ সালে আইটি নিরাপত্তায় ব্যয় আরও কম ছিল। ২০১১ সালে আইটি নিরাপত্তায় বিনিয়োগ হয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ।
তথ্য অনুযায়ী, ৮৪ শতাংশ ব্যাংকের ডেটা সেন্টার পরিচালনার জন্য উচ্চ প্রশিক্ষিত লোকের অভাব রয়েছে। তবে যে ১৬ শতাংশ ব্যাংকের ডেটা সেন্টার পরিচালনার জন্য উচ্চ প্রশিক্ষিত লোক রয়েছে সেগুলোর মধ্যে ৪৪ শতাংশ ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) ওপর কর্মীদের জন্য অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণের আয়োজন করে না। এছাড়া মাত্র ১০ শতাংশ ব্যাংক এমআইএস বিষয়ক স্বয়ংক্রিয় প্রতিবেদন তৈরিতে ‘বিজনেস ইন্টেলিজেন্স’ নামের উচ্চ প্রযুক্তির সফটওয়্যার ব্যবহার করে।
এ প্রসঙ্গে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এরই মধ্যে আইটি নিরাপত্তা বাড়াতে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য এখাতে বাজেটও বাড়ানো হবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে তথ্যপ্রযুক্তির (আইটি) ব্যবহার শুরু হয় নব্বইয়ের দশকে। তখন অবশ্য প্রযুক্তি এত ভালো ছিল না, অর্থও ছিল না। ছোট ছোট সফটওয়্যার ব্যবহার করা হতো। বিআইবিএম গবেষণা করে দেখেছে, ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে প্রযুক্তিতে। প্রায় ৫ হাজার আইটি পেশাজীবী রয়েছেন এই খাতে। ২০০৭ সালে ৩৭ শতাংশ ব্যাংক শাখা ছিল স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির আওতায় বা অটোমেটেড। এখন ৯০ শতাংশ শাখা অটোমেটেড।
/এমএসএম /এমএনএইচ/