চলতি অর্থবছরে কর রেয়াত সুবিধায় ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত করমুক্ত বিনিয়োগ করতে পারেন। তবে আসন্ন ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাজেটে তা কমিয়ে এক কোটি টাকা করা হচ্ছে। পাশাপাশি কমানো হচ্ছে ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম করহার। এই হার দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে দশমিক ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। অর্থাৎ করোনাকালে পাইকারি ব্যবসায়ী, পণ্য পরিবেশক, ব্যক্তি মালিকানাধীন (প্রোপ্রাইটারশিপ) প্রতিষ্ঠানকে কিছুটা স্বস্তি দিতে আগামী অর্থবছরের (২০২১-২২) বাজেটে ন্যূনতম আয়কর হার কমানো হতে পারে।
তবে মোবাইল অপারেটর, সিগারেট, বিড়ি, চুষে খাওয়ার তামাক, ধোঁয়াবিহীন তামাক বা অন্য সব তামাক প্রস্তুতকারক কোম্পানির ন্যূনতম কর অপরিবর্তিত থাকবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। তারা বলছেন, ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা কমিয়ে একজন ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার এক কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকে রেয়াতযোগ্য হিসেবে গণ্য করা হবে।
বর্তমানে সঞ্চয়পত্রসহ ৯ খাতে বিনিয়োগ এবং ১৩ খাতে দান করলে কর রেয়াত পাওয়া যায়। এসব খাতে একজন করদাতার মোট বার্ষিক আয়ের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ বা দান রেয়াতযোগ্য হিসেবে গণ্য করা হয়। এর বেশি বিনিয়োগ বা দান করলে অতিরিক্ত অংশের জন্য রেয়াত পাওয়া যাবে না।
যেসব খাতে কর রেয়াত পাওয়া যায়, সেগুলো হচ্ছে- সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড বা ডিভেঞ্চার ক্রয়, জীবনবিমার প্রিমিয়াম, সরকারি কর্মকর্তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্যৎ তহবিলের চাঁদা, স্বীকৃত ভবিষ্যৎ তহবিলে নিয়োগকর্তা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাঁদা, কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠীবিমার তহবিলে চাঁদা, সরকার অনুমোদিত ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ, বার্ষিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকার এফডিআর এবং সুপার অ্যানুয়েশন ফান্ডে চাঁদা।
এর পাশাপাশি আগামী বাজেটে সমবায় সমিতির ঋণের সুদ আয়কে করমুক্ত সুবিধা দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী যেসব ক্ষেত্রে ব্যাংক ট্রান্সফারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে ব্যাংক ট্রান্সফারের পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসকে যুক্ত করা হতে পারে।
এদিকে প্রতি বছরই বার্ষিক লেনদেনের ওপর ন্যূনতম কর আরোপ করা হয়।
এদিকে আগামী অর্থবছরের বাজেটে মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদ্র ঋণ থেকে আয়কে করমুক্ত সুবিধা দেওয়া হতে পারে। এ জন্য অর্থবিলের মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশের ষষ্ঠ তফসিলে সংশোধন আনা হচ্ছে।
বর্তমানে এনজিও ব্যুরোতে নিবন্ধিত এনজিওগুলো এ সুবিধা পাচ্ছে। অবশ্য ক্ষুদ্রঋণ থেকে প্রাপ্ত সুদ আয় ছাড়া অন্য সব আয় করযোগ্য।
অবশ্য ব্যবসায় লাভ বা লোকসান যা-ই হোক এ কর ব্যবসায়ীদের দিতেই হবে। ন্যূনতম করকে আয়কর অধ্যাদেশের মূলনীতির পরিপন্থী আখ্যা দিয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছে।
বর্তমানে যেসব ব্যবসায় বছরে তিন কোটি টাকা বা এর বেশি পণ্য বিক্রি হয়, তার ওপর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ ন্যূনতম আয়কর আরোপিত আছে। তবে পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত শিল্পের ক্ষেত্রে উৎপাদন শুরুর পরবর্তী প্রথম তিন বছর ন্যূনতম কর হার দশমিক ১০ শতাংশ। এর বাইরে মোবাইল অপারেটরদের লাভ-ক্ষতি নির্বিশেষে টার্নওভারের ওপর ২ শতাংশ এবং তামাক প্রস্ততকারক কোম্পানির ক্ষেত্রে ন্যূনতম কর হার এক শতাংশ।
৩ জুন জাতীয় সংসদে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা দিবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ছয় লাখ কোটি টাকার বেশি প্রস্তাবিত বাজেট বক্তব্যের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য, আগামীর বাংলাদেশ’।