টিকার কোনও ডোজ না নিয়েও ভ্যাকসিন সনদ পেয়ে গেছেন সাংবাদিক এস এম নুরুজ্জামান। তার কাছে টিকা গ্রহণের এসএমএস এসেছিল দুবারই। কিন্তু পেশাগত কাজে ঢাকার বাইরে থাকায় এবং দ্বিতীয় ডোজের আগে করোনা আক্রান্ত হওয়ায় তিনি কোনও ডোজই নিতে পারেননি।
এস এম নুরুজ্জামান জানান, করোনাভাইরাসের টিকা নিতে গত ২৭ জানুয়ারি অনলাইনে নিবন্ধন করেন। পরে রাজধানীর রাজারবাগে পুলিশ কেন্দ্রীয় হাসপাতাল থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি টিকা গ্রহণের জন্য মেসেজ পান। সে সময়ে ঢাকার বাইরে থাকায় টিকা নিতে পারেননি। ১২ এপ্রিল দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের নির্দেশনা এসএমএস আসে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে। তখন তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসাধীন। ফলে ওই তারিখেও টিকা নিতে পারেননি। এরপর গত ২০ এপ্রিল আরেকটি এসএমএস পান। সেখানে উল্লেখ ছিল, ‘আপনার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। www.surokkha.gov.bd অথবা অ্যাপ থেকে ভ্যাকসিন সনদ গ্রহণ করুন।’ ম্যাসেজ প্রাপ্তির পর তিনি সুরক্ষা প্লাটফর্মে প্রবেশ করে দেখেন তার ভ্যাকসিন সনদ তৈরি!
নুরুজ্জামান জানান, এখন আমি আদৌ টিকা নিতে পারবো কিনা বুঝতে পারছি না।
একজন প্রযুক্তিবিদ বলেন, সার্ভারে ত্রুটি কিংবা চাপের কারণে এরকম হতে পারে। বিষয়টা খতিয়ে দেখা উচিত। তাছাড়া এসএমএস পাঠাতে হলে তো ডাটা ইনপুট দিতে হবে তাদের কাছেই যারা এসএমএস সফটওয়্যার ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে আছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা এটি দেখছি।
অন্যদিকে, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তানিশা আক্তার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ফেব্রুয়ারিতে। তার রেজিস্ট্রেশনকৃত টিকা কার্ডে দ্বিতীয় ডোজের তারিখ লেখা থাকলেও সেটি পেরিয়ে গেছে কয়েকদিন হলো। কিন্তু এসএমএস আসেনি। তাই তিনি আশঙ্কায় আছেন, দ্বিতীয় ডোজ নেবেন কবে।
শুধু তানিশা নয়, এমন ঘটনা ঘটছে অহরহ। ভ্যাকসিন নিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা কবে টিকা নিবেন তা নিয়ে পড়ছেন বিভ্রাটে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন- বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করতে হয় সুরক্ষা অ্যাপে। নিবন্ধন শেষ হলে মোবাইল নম্বর যাচাই করার জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) আসে। সেটা ওয়েবসাইটে দেওয়ার পর নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। পরে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ওই নম্বরেই এসএমএস পাঠিয়ে টিকা দেওয়ার সময় ও স্থান জানিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হয়ে নিতে হয় টিকা। তখন সঙ্গে নিবন্ধনের কার্ডও নিয়ে যেতে হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একটি ফোন নম্বর ব্যবহার করে পরিবারের সর্বোচ্চ পাঁচজন সদস্যের জন্য নিবন্ধন করা যাবে।
নিবন্ধন হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এসএমএস পাচ্ছেন না অনেকেই। শুধু প্রথম ডোজের টিকার ক্ষেত্রে এই বিভ্রাট হচ্ছে না, দ্বিতীয় ডোজের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা হচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা। এসএমএস না আসায় দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট প্রাপ্তিতেও তৈরি হয়েছে বিভ্রাট।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, প্রথম ডোজের টিকা নিয়ে থাকলে আট সপ্তাহ পর মোবাইলে এসএমএস এলে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিতে কার্ডসহ যেতে হবে। কোনও কারণে মোবাইলে এসএমএস না গেলেও আট সপ্তাহ পার হওয়ার পর নির্দিষ্ট কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যাবে জানান তারা।
এসএমএস না পেলেও টিকা নিয়েছেন অনেকেই। কিন্তু ভ্যাকসিন সনদ পেতে পোহাতে হচ্ছে ঝামেলা।