২০২০ সালে করোনাকালীন ৬৬ দিন বন্ধ ছিল দেশের পরিবহন খাত। এই দুই মাসের বেশি সময়ে পরিবহন খাতে দিনে ক্ষতি হয়েছে ৫০০ কোটি টাকার মতো। হিসাবে মোট ক্ষতি ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এমনটাই দাবি করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পরিবহন খাতের আমদানি নির্ভর যন্ত্রপাতির ওপর শুল্ক ও ব্যাংক ঋণের হার কমানোর দাবি করেছেন পরিবহন মালিকরা।
মালিকরা জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে যাত্রীবাহী যানবাহন ৬৬ দিন বন্ধ ছিল। এরপর আরও তিন মাস চলেছে নানা বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে। এখন বিধিনিষেধ না থাকলেও আগের মতো যাত্রী নেই।
পরিবহন মালিকরা বলছেন, সড়ক পরিবহন খাত দেশের বড় অর্থনৈতিক খাতগুলোর একটি। বাণিজ্যিক সড়কপথের ৯৫ ভাগই বেসরকারি মালিকানাধীন।
তারা আরও বলছেন, বিগত বছরগুলোতে এ খাতে কর, ফি, শুল্ক, সেতু টোল আরোপ ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির মতো নানা খড়গও গেছে। আবার করোনার বন্ধের সময় বিভিন্ন বাস টারমিনাল, রাস্তার পাশে, খোলা মাঠে যাত্রীবাহী পরিবহন রেখে দিতে হয়েছিল দিনের পর দিন। দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় এসব গাড়ির ব্যাটারিসহ অনেক যন্ত্রাংশই অচল হয়ে পড়ে। ক্ষতি হয় টায়ার ও ব্রেকেরও। এতেও ব্যয় বেড়েছে পরিবহন মালিকদের।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে, দেশে নিবন্ধিত যানবাহন ৪৫ লাখ। পরিবহন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ খাতে যুক্ত প্রায় ৭০ লাখ শ্রমিক। করোনায় এরা প্রত্যেকে প্রত্যক্ষ ক্ষতির শিকার।
জাতীয় শিল্পনীতি ২০১০-এ সড়ক পরিবহন খাতকে সেবামূলক শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হলেও অন্যান্য শিল্পের মতো এই খাতের মালিকরা কোনও প্রণোদনা পায়নি। উপরন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে টায়ারসহ খুচরা যন্ত্রাংশের দাম কম হওয়া সত্ত্বেও ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ওই সব পণ্যে শুল্ক ও ট্যারিফ বাড়ানো হয়।
মালিক সমিতি বলছে, দেশের বেশিরভাগ বাস-ট্রাকে রেডিয়্যাল টায়ার (তারের টায়ার) ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের টায়ার-টিউব দেশে উৎপাদন হয় না। পুরোটাই আমদানি করতে হয়। প্রতি জোড়া টায়ার-টিউবের জন্য ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়।
এসব ক্ষতি উল্লেখ করে আসন্ন বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে দেওয়া এক চিঠিতে বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হচ্ছে- মোটরযানে ব্যবহৃত ইঞ্জিন আমদানির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট এইচএস কোড নির্ধারণ করে ৩ শতাংশ আমদানি শুল্ক নির্ধারণ করা। বিভিন্ন সেবা শিল্পের মতো পরিবহন শিল্পের জন্য ব্যাংক সুদের হার ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের পাসকৃত বাজেটে বাস মালিকদের অনুমিত আয়কর আগের চেয়ে বেশ খানিকটা বাড়ানো হয়। কোনও ক্ষেত্রে সেটা দ্বিগুণও করা হয়। এ আয়করও আগের অবস্থায় রাখার দাবি জানান তারা।
এ ছাড়া যানবাহনের কাগজপত্রের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে পরিবহন মালিকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ভাড়ায়চালিত বাণিজ্যিক পরিবহনের ওপর ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ করা হয়েছে। রুট পারমিট, ট্যাক্স-টোকেন, ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশন খাতের কর ও ফির ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারেরও দাবি জানান তারা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনাকালীন ৩৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি এখনও পোষাণো যায়নি। পরিবহন খাত সেবামূলক হলেও অন্যদের মতো সুযোগ-সুবিধা নেই। বিষয়টি আসন্ন বাজেটে খেয়াল রাখার আবেদন জানাচ্ছি।’