X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ভর্তি না হতে পারা রোগীরা

জাকিয়া আহমেদ
২৮ মার্চ ২০২১, ১৫:১২আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২১, ০১:২৪

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের বাসিন্দা সালমা সুলতানা। বেড পাননি বলে বেসরকারি তিনটি ও সরকারি দুটি হাসপাতালে ভর্তি হতে চেয়েও পারেননি। অগত্যা বাসাতেই করোনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলো। কিন্তু মাকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে ছেলে তানভীর হায়দার এবং ছেলের বউ আফরোজা নাজনীনও হলেন সংক্রমিত।

তানভীর বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে আমিই হাসপাতালে থাকতাম। তাতে আমি হয়তো আক্রান্ত হতাম। কিন্তু আফরোজা হতো না। এখন সে আক্রান্ত হওয়ায় আমাদের তিন ছেলে-মেয়েও ঝুঁকিতে পড়লো।’

রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা আক্রান্ত রোগীরা বেড পাচ্ছেন না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা ডেডিকেটেড হিসেবে তালিকাভুক্ত এবং তালিকাভুক্ত নয়-এমন একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বেডের অভাবে প্রতিদিন রোগীদের ফেরত দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। আর সেসব রোগীদের কারণে হু হু করে বাড়ছে পারিবারিক সংক্রমণ।

গত পাঁচদিন ধরে দেশে দৈনিক শনাক্ত সাড়ে তিন হাজারের বেশি। স্বাস্থ্য অধিদফতর ২৭ মার্চ জানিয়েছে, গত সপ্তাহের (১৪ মার্চ থেকে ২০ মার্চ) তুলনায় চলতি সপ্তাহ (২১ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ) পর্যন্ত করোনার দৈনিক নমুনা পরীক্ষা, শনাক্ত, সুস্থতা এবং মৃত্যুহার বেড়েছে।

গত সপ্তাহে মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১২ হাজার ৪৭০ জনের। চলতি সপ্তাহে ২৩ হাজার ১০০ জনের। শনাক্তের হার বেড়েছে ৮৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। গত সপ্তাহে সুস্থ হয়েছিল ১০ হাজার ৪০৮ জন। চলতি সপ্তাহে হয়েছে ১৩ হাজার ২০৪ জন। সুস্থতার হার বেড়েছে ২৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। গত সপ্তাহে মারা গেছে ১৪১ জন। চলতি সপ্তাহে ২০১ জন। মৃত্যুহার বেড়েছে ৪২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদফতর শনিবার (২৭ মার্চ) করোনা-বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রাজধানী ঢাকার ডেডিকেটেড কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের ১৬ বেড, কুর্মিটোলা জেনারেল হাপসাতালের ১০ বেড, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১০ বেড, মুগদা জেনারেল হাসপাতালের ১৯ বেড ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি আইসিইউ বেডের একটিও ফাঁকা নেই।

শুধু শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের ১৬টি বেডের দুটি, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের ছয়টির মধ্যে একটি ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের ১৫টির মধ্যে দুটি বেড ফাঁকা রয়েছে। অর্থাৎ, করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালগুলোর ১০৮টি বেডের মধ্যে রোগী আছে ১০৩ জন। বেড ফাঁকা রয়েছে মাত্র পাঁচটি।

অপরদিকে, অধিদফতরের তালিকাভুক্ত বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত ১৮৮টি বেডের মধ্যে রোগী ভর্তি ১৪৩ জন, বেড ফাঁকা ৪৫টি।

পুরো ঢাকায় অধিদফতরের তালিকাভুক্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মোট আইসিইউ বেড ২৯৬টি। এর মধ্যে রোগী ভর্তি ২৪৬ জন। বেড ফাঁকা ৫০টি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসপাতালে রোগীরা ভর্তি হতে না পেরে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এসব রোগীর পরিপূর্ণ আইসোলেশন বাসায় করা সম্ভব নয়। তাতে তাদের কারণে সংক্রমণ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে।

‘একজন রোগীকে যখন আমরা হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি, তখন নিশ্চিত বলা যায় তার মাধ্যমে আরও অনেকে সংক্রমিত হচ্ছেন।’ এমন মন্তব্য করে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটির সদস্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টিন পদ্ধতির দুর্বলতাই এর বড় কারণ। এর জ্বলন্ত প্রমাণ সিলেটের হোটেল থেকে কোয়ারেন্টিনে যারা ছিলেন তাদের উধাও হয়ে যাওয়া। তাদের সুপারভাইজ করা হচ্ছে না। যা খুব কঠোরভাবে হওয়ার কথা ছিল।’

তিনি আরও জানান, ‘একইসঙ্গে আমাদের দেশে উপেক্ষা করার প্রবণতা প্রচণ্ড। বইমেলাতে সবাই প্রবেশপথে মাস্ক পরে ভেতরে ঢুকছে। কিন্তু ভেতরে ঢোকার পর মাস্ক খুলে ফেলছে। সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। মানুষ শুধু গেট পার হওয়ার জন্যই মাস্ক নিয়ে যাচ্ছে।’

একইসঙ্গে হাসপাতাল থেকে রোগীরা যে ফেরত যাচ্ছে এটাও রাষ্ট্রের বড় একটা দায়িত্ব। এমনটা মন্তব্য করে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকায় এমনিতেই অনেক মানুষের আইসোলেশনে থাকার জন্য আলাদা রুমসহ অন্য সুবিধা নেই। বলা যায় সরকারি সুবিধার অভাবই তাকে বাধ্য করলো ভাইরাস ট্রান্সমিশন করার জন্য। রোগী কিন্তু এসেছিল আমাদের সাহায্যের জন্য। আমরাই করতে পারিনি।’

মহামারী বিশেষজ্ঞ ও রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির যদি সঠিক আইসোলেশন ব্যবস্থা না হয়, তবে তার পুরো পরিবার আক্রান্ত হতে পারেন। এজন্যই প্রতিদিন আক্রান্তের হার বাড়ছে।’

আর এসব রোগী যদি পরে গণপরিবহনে একবারও যাতায়াত করে তবে অবস্থা কোন পর্যায়ে যাবে? প্রশ্ন করেন ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখন প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলশন বাড়াতে হবে। প্রতিটি স্কুল-কলেজ-কমিউনিটি সেন্টারে, যেখানে কমিউনিটি আইলোশন সেন্টার হতে পারে এবং হাই-ফ্লো অক্সিজেন দেওয়া যেতে পারে সেখানেই এমনটা করতে হবে।’

 

 

 

/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সিলেটে এয়ার অ্যাস্ট্রার বিজনেস পার্টনার মিট
সিলেটে এয়ার অ্যাস্ট্রার বিজনেস পার্টনার মিট
ডি মারিয়ার সঙ্গে চুক্তির গুঞ্জনে যা বললেন মায়ামি কোচ
ডি মারিয়ার সঙ্গে চুক্তির গুঞ্জনে যা বললেন মায়ামি কোচ
রাজশাহীতে হাসান আজিজুল হক সাহিত্য উৎসব, পদক পাচ্ছেন ৬ জন
রাজশাহীতে হাসান আজিজুল হক সাহিত্য উৎসব, পদক পাচ্ছেন ৬ জন
এই সরকার ভোটে নির্বাচিত নয়, সেজন্য জনগণকে তারা ভয় পায়: ড. মঈন খান
এই সরকার ভোটে নির্বাচিত নয়, সেজন্য জনগণকে তারা ভয় পায়: ড. মঈন খান
সর্বাধিক পঠিত
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি সরকারি কর্মচারীদের
নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি সরকারি কর্মচারীদের
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে