X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যেখানে রাতের আঁধারে চলে আবাদি জমির মাটি বিক্রির মহোৎসব

জিল্লুর রহমান পলাশ, গাইবান্ধা
০৬ মার্চ ২০২১, ১১:৪৩আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২১, ১১:৪৩

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের হামিন্দপুর, জামুডাঙ্গা ও মোল্লাপাড়াসহ ৮টি এলাকায় নির্বিচারে ফসলি জমিসহ খাস জমির মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাতের আঁধারে স্থানীয় মাটি-বালু ব্যবসায়ী সংঘবদ্ধ চক্র কৃষকদের নামমাত্র মূল্য দিয়ে আবার অনেকের জমি থেকে জোরপূর্বক মাটি কেটে রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছেন।

এছাড়া চক্রটির বিরুদ্ধে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভেঙে যাওয়া স্থানের মাটি এবং নীলকান্তের ছড়ার (সরকারি খাস) জমির মাটিও গভীর করে কেটে নেওয়ার অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। এমনকি পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি বসানো জমি থেকেও ৫-৬ ফুট গর্ত করে চক্রটি মাটি লুট করায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। মাটি কেটে পাচারের এলাকার অনেক কৃষি জমি নষ্ট ও পুকুরে পরিণত হওয়াসহ আশপাশের জমি পড়েছে ভাঙনের মুখে।

আবাদি জমির মাটি কাটা হচ্ছে উত্তোলিত মাটি অর্ধশতাধিক ট্রাক্টর-মহেন্দ্র দিয়ে পাচার করা হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। ট্রাক্টর-মহেন্দ্রর বিরামহীন চলাচলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বন্যা নিয়ন্ত্রণবাঁধ ও সাদুল্লাপুর-নলডাঙ্গা পাকা সড়কসহ উপজেলার বিভিন্ন সড়ক। পাশাপাশি বিকট আওয়াজ আর ধুলাবালির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে আশপাশের জনজীবন।

শুধু জামুডাঙ্গা ও মোল্লাপাড়া নয়, সংঘবদ্ধ চক্রটি হামিন্দপুর, মণ্ডলপাড়ার চর, বাঁধের মাথা,  ব্রিজের পশ্চিম পাশ ও পাটনিপাড়ায় স্পট করে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই মাটি বিক্রির মহাযজ্ঞে মেতেছেন বালুখেকো ফুল মিয়া, তার ছেলে জুয়েল ও স্থানীয় শফি, চিনু, কামরুল এবং বাবলুসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তারা প্রতিরাতে লাখ লাখ টাকার মাটি কেটে ৩০ থেকে ৪০টি ট্রাক্টর ও মহেন্দ্র দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছেন। প্রকাশ্যে মাটি কেটে বিক্রির হিড়িক চললেও রহস্যজনক কারণে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও প্রশাসনের নীরবতায় ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে।

আবাদি জমির মাটি কাটা হচ্ছে শুক্রবার (৫ মার্চ) বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘাঘট নদীর তীর ঘেঁষে মালিকানা ফসলি জমি ছাড়াও নদীর তলদেশ এবং সরকারি খাস নীলকান্তের ছড়ার (ইজারাভুক্ত) জমি থেকেও গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া মোল্লাপাড়ার হামিদ, কুদ্দুস ও সিদ্দিকের ২ বিঘা উঁচু জমিতে এক্সক্যাভেটর (ভেকু) মেশিন বসিয়ে মাটি কেটে পাচার করায় ওই জমি পুকুরে পরিণত হয়েছে। চিহ্নিত বালু খেকো জুয়েল মিয়াসহ ৪-৫ জন ব্যবসায়ী রাতের আঁধারে ড্রাম ট্রাকে করে ওই জমির মাটি গাইবান্ধায় বিক্রি করেন বলে অভিযোগ করেন আশপাশের বাসিন্দারা।

বাঁধের মাথা এলাকার খলিল মিয়া, চাঁন মিয়া ও আল-আমিনসহ স্থানীয়রা জানান, চিহ্নিত বালু খেকো ও ভূমিদস্যুরা অবাধে কৃষি জমি ছাড়াও নদীর চর ও সরকারি খাস নীলকান্তের ছড়ার মাটি কেটে বিক্রি করছেন। তারা রাতের আঁধারে ২০০-৩০০ ট্রাক্টর-মহেন্দ্র দিয়ে উপজেলা ছাড়াও জেলা শহরে লাখ লাখ টাকার মাটি বিক্রি করছে। এতে এলাকার অনেক জমি বড় গর্তসহ পুকুরে পরিণত হয়েছে। এছাড়া মাটি বহনে বেপরোয়া গতিতে বাঁধের ওপর দিয়ে যাতায়াত করছে এসব ট্রাক্টর ও মহেন্দ্র। ভোররাত পর্যন্ত বিকট শব্দে এসব ট্রাক্টর চলাচলে নির্ঘুম রাত কাটছে মানুষের।

আবাদি জমির মাটি কাটা হচ্ছে তবে মাটি কাটার মহোৎসবের বিষয়টি জানা নেই সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নবী নেওয়াজের। মুঠফোনে প্রতিবেদকের মাধ্যমে খবর পেয়ে ইউএনও বলেন, ‘কোনও অবস্থায় ফসলি জমির মাটি বিক্রি করা যাবে না। যারা অবৈধভাবে মাটি কেটে পাচার করছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুতই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদ রানা জানান, মাটি ও বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বাঁধের মাথাসহ যেসব জায়গায় ফসলি জমির মাটি কেটে পাচার হচ্ছে সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে তা বন্ধে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনার পরও রাতে অবৈধভাবে ট্রাক্টর-ট্রলি দিয়ে মাটি বহন করায় তা আটক করা হয়। সেইসঙ্গে নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!