X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
শামীম রেজার কবিতা

নন্দনের নতুন সংহিতা

তপোধীর ভট্টাচার্য
০৫ মার্চ ২০২১, ০০:০০আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২১, ০০:০০

কবির আছে শব্দের কত রকম গেরস্থালি, কত বিচিত্র তৈজস, কত বিশেষ্য-বিশেষণ-ক্রিয়াপদের তুলি ও রং, ছেনি ও হাতুড়ি। কত পুরনো বিশ্বাসের হাঁড়িকুড়ি, কত নতুন প্রত্যয়ের অন্ন ও ব্যঞ্জন। আর আছে, সবার ওপরে, শব্দ দিয়ে নীরবতার পরিচর্যা। কত আসবাব আর কত ব্যঞ্জনাময় শূন্যের পরিসর। আছে স্মৃতির অন্তরিন। আছে স্থিতি ও গতির আলো ও অন্ধকারের মন্থন। সব কবিরই অভিজ্ঞান কি এসব? সম্ভবত। তবে আপাতত এই প্রতিবেদক ভাবছে, শামীম রেজার কবিতা একাধিকবার পড়ার পরে এই কথাগুলো লেখা অনিবার্যই। সময়ের সত্য প্রতিফলিত হবে কবিসত্তার দর্পণে, এই তো স্বাভাবিক। কিন্তু মননচর্যায় বিশ্বাসী যিনি, সেই কবির অনুভব প্রকাশের সামর্থ্য তো স্বাতন্ত্র্যদীপ্ত হবেই। শামীম রেজা সম্পর্কে এই গোড়ার কথাটি না লিখলেই নয়। বাঙালির সাংস্কৃতিক বিশ্বকোষ অনুসরণে তিনি যেহেতু অক্লান্ত, সূক্ষ্মতা-গভীরতাব্যাপ্তি লোকায়ত বাক্ব্যবহারে স্বচ্ছন্দে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। মনে হয়, এটিই শামীমের নিজস্ব প্রতিরোধের আয়ুধও। সেই কবে পড়েছিলাম শামীমের ‘নালন্দা দূরবিশ্বের মেয়ে’। এতে ছিল সেই আশ্চর্য পঙক্তি :

অমরত্বেরও মৃত্যু হবে নালন্দা, জোছনার জলজ

অন্ধকারে।

সোমরস পান করে ঈশ্বর নামছেন সোমেশ্বরী জলে

রহস্য? হ্যাঁ, রহস্যই তো! রহস্য ছাড়া কি কবিতা হতে পারে? তবু সোচ্চার শব্দের মধ্যে কীভাবে প্রচ্ছন্ন থেকে যায় নিরুচ্চার, এই পরম বিস্ময়ের কি শেষ আছে কোনো? শামীম শব্দ দিয়েই নৈঃশব্দ্যকে স্পর্শ করেন। শামীম রেজার কবিতায় যে শিল্পভাষা গড়ে ওঠে, একটু পর্যবেক্ষণেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে লোকভাবনার পরিমণ্ডলে তার শিকড় নিহিত। এই পঙক্তিগুলোর ক্রিয়াপদ লক্ষ করা যাক :

আমার ঈর্ষা হয় নালন্দা

ঈর্ষায় পুইড়া যায় চিরতরের মৌতাত;

কুয়াশায় ঘুম কাইড়া গেলে দেখি,

সূর্য ঝুইলা আছে উঠানের আঁড়ায়

ছুঁইতে গেলে হাত পুইড়া যায়

পোড়াগন্ধে নৌকায় চাপে আমার;

যা লেখা হলো শুধু সেখানে দৃষ্টি সীমিত থাকলে তাৎপর্য স্পষ্ট হবে না। কেন লেখা হলো এভাবে, তা বোঝার জন্য বাচনের বিশেষ ধরনটি লক্ষ করতে হবে। চিরায়ত বাংলাদেশের অফুরান লোকজীবনের স্পন্দনময় ছবি ও সুর পড়ুয়ার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন শামীম। উপভাষার ক্রিয়াপদ প্রয়োগে ফুটে ওঠে শিকড়ে জলের ঘ্রাণ যাকে নাগরিক পরিশীলনের মায়ায় আমরা সাধারণভাবে উপেক্ষা করি। শামীম কত ঐতিহ্যমনস্ক তার নিদর্শন দেখতে পাই ‘পরানী ও মথুরার মাঠ’ কবিতায় :

ও পরানী মথুরার মাঠে বসে তুমি নির্জন

এ পাড়ায় আমি কাদা ছানি

যুবককুমার

রাধার মূর্তি পাড়ে পেতেছি খেলা

চুলের কাজল দেহ বেয়ে মধ্যরাত নামে।

এই শেষ পঙক্তিটি মনোগ্রাহী নিশ্চয়, তবে পাঠক সব মিলিয়ে লক্ষ করবেন কবির অনুষঙ্গ-বিন্যাস। মধ্যযুগ থেকেই বাঙালির চেতনায় রাধা প্রগাঢ় প্রেমের, বিরহের, গোপনীয় লাবণ্যের আদিকল্প। কবিতার ভাষা মূলত সংকেতের, চিহ্নের ভাষা, এই মূল সত্যটি মনে রাখতেই হয় আমাদের।

সংবেদনশীল কবি বলেই শামীম বলেন না কিছুই, অনুভবের গ্রন্থনা সঞ্চারিত করে যান নিরন্তর। তাঁর বাকপ্রকরণ তাই সর্বদা বিবরণ অতিযায়ী। যেন সোচ্চার কথন শুরু হওয়ার আগে যে-আদি নীরবতা, সেই প্রাদুর্ভাবের আভাস দিতে চান তিনি। তাই বিবিধ বস্তুতে অনুপুঙ্খ ব্যবহার করেও কবিতাকে বস্তু-অতিযায়ী সংকেত-কথনে রূপান্তরিত করেন তিনি। যেন তাঁর যাবতীয় সংযোগ জীবন-জিজ্ঞাসু সত্তার সঙ্গে; পাঠক শুধু কান পেতে উচ্চারণের অনুরণন শুনে নিতে পারেন। এই নিরিখে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাসূত্র উত্থাপন করছি। অবক্ষয়ী আধুনিকতাবাদের জীবন-প্রত্যাখ্যানকারী ক্লিষ্টতার উলটো মেরুতে শামীমের অবস্থান। তাঁর কবিতার মৌল উপাত্ত তাই প্রাকৃতায়ন; শিকড়ের খোঁজ, উত্তরণের আর্তি। তাই নৈসর্গিক অনুষঙ্গের প্রয়োগ গভীর তাৎপর্যবহ। ‘কীর্তনিয়া নদী কীর্তনখোলা’ কবিতা থেকে তেমন প্রয়োগের দৃষ্টান্ত আহরণ করছি।

মৃতদের পাঁজরের দাঁড়টানা বাতাস কীর্তনিয়া নদী কীর্তনখোলায় ওঠে উত্তাল ঢেউ

আমরা কেউ বলি নদীর দীর্ঘশ্বাস, কৃষ্ণপক্ষে রাধার নৃত্যনাচন বলি কেউ

....

অসীমের সাথে ঘর বান্ধে কীর্তনিয়া কোনজন?

আমি কি কীর্তনিয়া নদী কীর্তনখোলা

যিনি প্রতিদিন পান ভাঙনের হাজারটা সমন।

নদীমাতৃক বাংলাদেশের যথার্থ সন্ততি শামীম এভাবে আত্মগত দ্বিরালাপের গ্রন্থনা করেন। যেন কবিতার নিগূঢ় বাচনে চলমান হয়ে ওঠে দিনানুদিনের প্রত্নকথা যার উৎসে রয়েছে বাংলার আস্তিত্বিক ঐশ্বর্য। কবি বুঝিয়ে দেন, আবহমান লোকজীবনের পরম্পরায় লালিত হয় যাবতীয় কিংবদন্তি। পুরুষানুক্রমে অব্যাহত রয়েছে যে পাঁজরের দাঁড় টানার প্রতীকী ক্রিয়া, কবিসত্তা তার অংশীদার। অসীমের সঙ্গে ঘর ‘বান্ধা’র প্রক্রিয়াও তাই অফুরান। এই তো বাঙালির নিজস্ব উত্তরায়ণমনস্ক উত্তর-আধুনিকতা, পশ্চিমের আধুনিকোত্তরবাদ বা পোস্ট-মর্ডানিজম তার নাগাল পায় না কখনো। ‘ভাঙনের হাজারটা সমন’ পেলেও শামীম রেজার মতো কবি চলিষ্ণু কীর্তনখোলা নদীর উপমা অসীমের সঙ্গে যে ঘর বাঁধে। কিন্তু এ কথার পরেও লিখব, ‘এই বাহ্য আগে কহ আর।’ সব মিলিয়ে যে বোধ সঞ্চারিত হয় পড়ুয়ার মনে তা-ই অনিষ্ট। হয়তো জীবনানন্দের ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’য় অন্তর্ভুক্ত ‘এইসব দিনরাত্রি’ কবিতার একটি পঙক্তি মনে ঘাঁই দেয় : ‘এরা তবু মৃত নয়; অন্তবিহীন কাল মৃতবৎ ঘোরে।’ বাচনাতিযায়ী মায়ার বিচ্ছুরণ তৈরি করতে জানেন কবি, যাকে বিদ্বৎজনেরা ‘উদ্বৃত্ত’ বা 'extra semantic load' বলেছেন/তিনিই আবার বহতা কালের নির্যাস খুঁজে পাওয়ার জন্যে ফিরে যান শৈশবের অন্তঃপুরে। ‘ছোট্টবেলার স্মৃতির ঘড়ি/বিস্মৃতির খেলাঘর’ তাঁর অস্মিতাবোধের উৎস যেমন, তেমনই আপন অভিজ্ঞান-সন্ধানী উপনিবেশোত্তর আকাঙ্ক্ষারও বীজতলি। শামীম যেন অনবরত পরিক্রমা করেন উৎস থেকে মোহনায় এবং মোহনা থেকে উৎসে।

দুই.

শামীম রেজা সৃজনের সমুদ্র-মন্থনে যে শিল্পকৃতির অমৃতকুম্ভ লাভ করলেন প্রথম, তা ব্যক্ত হলো ‘যখন রাত্তির নাইমা আসে সুবর্ণনগরে’ সংকলনে। পনেরো বছর আগে প্রকাশিত (২০০৫) এই বইটি কবিসত্তার প্রাণভ্রমর 'Leaves of Grass'-এর কবি ওয়াল্ট হুইটম্যান-এর মতো এই একটি পাঠকৃতিই যদি কবি বারংবার ঘুরেফিরে লিখতেন অর্থাৎ পুনঃসৃষ্টি করে যেতেন নিরন্তর পড়ুয়ার মুগ্ধতা বজায় থাকত। মোট তেপ্পান্নটি স্বতন্ত্র কবিতা দিয়ে যে-আশ্চর্য পাঠ-সংহতি তৈরি হয়েছে তা যেন ধ্রুপদি সংগীতের মতো অনবদ্য। এর বাক্-স্থাপত্য তুলনাবিহীন। যদি দৃষ্টান্ত দিতে চাই, বেছে নেয়াটা কঠিন হয়ে পড়বে। তবু নিজের পছন্দমতো ‘ষোল’ সংখ্যক কবিতার অন্তিম বাক্যবন্ধটি উদ্ধৃত করছি। ‘বীজের অঙ্কুর বনসাই হয়া/আছে, তারপরও কোন এক শিল্পী দুরন্ত তুলিতে প্রতিদিন/আঁইকা যায় সবুজ বীজ নয়া অজন্তায়।’ এমন পঙক্তির সামনে নির্বাক হতেই হয়। কী বলব একে, বাচনিক ইন্দ্রজাল? আশ্চর্য এই অভিব্যক্তির লক্ষ্যভেদী সামর্থ্য। ‘বীজের অঙ্কুর বনসাই হয়া আছে’ : এর চমৎকারিত্ব অনস্বীকার্য। শামীম যেন কবিতার শিল্পভাষায় নিয়ে এলেন নীলাঞ্জন ছায়ার অনুভব আর অন্তর্দীপ্ত নান্দনিক তাৎপর্য। প্রখ্যাত দার্শনিক আর্থার শোপেন হাওয়ার যেমন ভেবেছিলেন, ' magnitude of extension' হয়তো 'magnitude of extension'-এ রূপান্তরিত হয় না সর্বদা। তবু শামীমের এই পাঠ-সংহতিতে প্রচ্ছন্নের স্বর আবিষ্কার করতে পারি নিশ্চয়। আর, সবচেয়ে বড় কথা, কবিতার শিল্পভাষায় প্রচলিত বাক্প্রকরণের আধিপত্যকে প্রত্যাহ্বান জানিয়ে মৃত্তিকা-সংলগ্ন পরিসরে খুঁজেছেন নান্দনিক শুশ্রূষার উপাত্ত। যেন ঈপ্সিত পাঠ-সংহতির মননমুদ্রার ইঙ্গিত দিতে শামীম বইয়ের ব্যতিক্রমী-উৎসর্গপৃষ্ঠায় লিখেছেন গূঢ়ার্থবহ এইসব পঙক্তি :

কবিতা-কবিতা কইরা যে মেয়েকে খুঁজছে সবাই

ছোট্টবেলার নামতা-খাতায় লেখা দূরের স্টেশনে

        নাইমা গেছে সে-নদীটার কাছে

ধুলার অক্ষরে মুইছা গেছে সেইসব রাতের ট্রেন।

..........

কিংবা শিকারীর হাতে গুলি খাওয়া

মায়া হরিণের চোখে প্রথম ফোঁটা জল, বের হইতে

দেখেনি যে, সে কী কইরা কবিতার খোঁজ পাবে?

বুঝিনা আমি...জোড় ভেঙে যাওয়া শালিখের

কানে কানে কাল সকালে বইলাছি এসব কথা

সুতরাং এই সংকেত স্পষ্টভাবেই দিয়েছেন শামীম যে তার ব্যবহৃত ক্রিয়াপদের ঔপভাষিক ধরন নয় কেবল, নিসর্গ নিবিড় জীবনমন্থন করে ওঠে আসা চিত্ররূপময় অনুভব তার শিল্পভাষার গোত্রচিহ্ন। যেন অতি নাগরিক পরিশীলনের পথে একমাত্রিকভাবে এগিয়ে-যাওয়া বাংলা কবিতার জন্য প্রাকৃতায়ন নির্ভর অভিব্যক্তির স্বতন্ত্র সমান্তরাল পরিসর খুঁজে নিতে চাইছেন তিনি। ‘শিকারীর হাতে গুলি খাওয়া/মায়া হরিণের চোখে প্রথম ফোঁটা জল’ যিনি দেখতে পান, তাকে দূরাগতভাবে হলেও জীবনানন্দের পাঠশালার ছাত্র বলেই মনে হয়। এই প্রতীতি দৃঢ়তর হয় এসব পঙক্তির মুখোমুখি হয়ে :

কবিতা, তোমার শরীরের আলপথ বায়া

যতবার ঢুকতে চায়াছি মননে, কৈশোরে বইলাছো-

দেইখা আসো, গাঙঘুঘুর ডানায় আঁকা জীবনের

জলরঙ ইতিহাস।

কোন মায়াহরিণীর রূপকথা লেখেন শামীম? সে কি কবিতা? সে কি প্রেম? সে কি জীবন? কোন ফুল-জন্মের ছবি আঁকেন তিনি নির্দিষ্ট মনে? সেই কি তাঁর নিজস্ব নন্দনের সংকেতলিপি? স্বভাবত মনে হয়, জীবনানন্দের ঘরানায় দীক্ষিত হয়েও কীর্তনখোলায় মগ্ন নবীন প্রজন্মের এই কবি নিরন্তর সরে যেতে চাইছেন মূল অনুভব কেন্দ্র থেকে ভিন্নতর পরিধির দিকে। তার সেই উজান-ভাটির পথে ছড়িয়ে রয়েছে পর্বতচূড়ায় উঠতে না পারা পাখির আর্তনাদ : ‘সমুদ্রচিলের ক্লান্ত ঠোঁটের ফাঁকে তাজা মাছের ছটফটানি, মরা ধানক্ষেতে পইড়া-থাকা খড়ের দেহ...।’ এই পৃথিবী একবার পায় যারে, পায় নাকো আর-সেই অপ্রাপনীয়ের বার্তা নানা বাক্বন্ধে স্পষ্টতর করার জন্য কবি রচনা করেছেন তেপান্নটি অন্যোন্যসম্পৃক্ত কবিতার অনন্য পাঠ-সংহতি।

আপাতভাবে কোনো সাদৃশ্য নেই যদিও, এই প্রতিবেদকের মনে হয়েছে, কবি শামীম রেজা বুঝি-বা ভিন্নতর কালপর্বে জীবনানন্দীয় রূপসী বাংলার সম্প্রসারণ নির্মাণ করেছেন। নাড়ির বাঁধন যে আশ্চর্য পাঠ-সমবায়ের সঙ্গে, তাকে কোথাও স্পষ্টভাবে ব্যক্ত না করলেও অব্যক্ত উদ্বারণের নিবিড় সাযুজ্যে শিল্পসত্য আভাসিত হয় কী প্রকাশ করা হলো তার চেয়ে বেশি লক্ষণীয় কীভাবে প্রকাশিত সেই বাচন। ‘অনুভূতির রহস্য আছড়ে পড়ে বুকে’ : ‘সার্থক কবিমাত্রেই নিশ্চয় এ রকম ভাবেন। কিন্তু শামীম রেজার যা একান্তই নিজস্ব, তা হলো, বহুস্তরযুক্ত জীবনের লোকায়ত উদ্ভাসন এবং সেই উদ্ভাসনের বহুস্বর। তাই তো ‘হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে’ বিচ্ছুরিত হয় স্বতন্ত্র মাত্রাযুক্ত বাক্যবিন্যাসে। ‘পৃথিবীর বুকে ঘুটঘুটে অন্ধকার/নিয়া অনিচ্ছায় শুইয়া থাকি কত কত বছর, চোখের লাই/ভাঙে না-পুথির গয়না পরি সাঁঝবেলায়, শামুকের/ভিতর দীঘির ঢেউ গুণি।’

তিন.

না লিখলেও চলে, বারবার ব্যক্ত বাচনের পরিধি পেরিয়ে যায় অব্যক্তের দ্যুতি। এই মৌলিক প্রবণতা তো কোনো একক কবিতায় কিংবা কবিতার নির্দিষ্ট স্তবকে সীমিত থাকতে পারে না। তাই পাঠ-সংহতির আলুলায়িত বিন্যাস অবশ্যম্ভাবী। বিখ্যাত ফরাসি সমালোচক জর্জ লোত ফরাসি কবিতার অনুরূপ প্রবণতা লক্ষ করে লিখেছিলেন : ''It often happens that the rhyme ends without the meaning of the sentence having been completed.' (1949:252)' (১৯৪৯:২৫২)। শামীম রেজার ‘যখন রাত্তির নাইমা আসে সুবর্ণনগরে’ও লক্ষ করি, একক কবিতায় ভাবনার সমাপ্তি হচ্ছে না; তার তাৎপর্য সম্পূর্ণ হয় না বলে অনুভবের বিন্যাস-প্রতিন্যাস ক্রমাগত প্রসারিত হয়ে ৫৩তম কবিতায় পৌঁছেছে। কিন্তু মনোযোগী পাঠক লক্ষ করবেন, তবু যেন শেষ হলো না উচ্চারণমালা। অবশ্য এই বিন্দুতে কবির আর করণীয় কিছু নেই, এই পরিসর পুরোপুরি পাঠকেরই ‘জানি/জোছনা ..., অভিলাষ, শুধু অকারণ আহ্লাদ, এ মাটি/মায়ের পাঁজরের নিচে গইলা যাবে জাইনাও ভাবি, পাহাড়ে/উঠতে ক্লান্তি লাগে তবু কেন মানুষ পাহাড়ে ওঠে।’ এ যেন কবিসত্তার নিজেরই নিভৃত অস্তিত্বের সঙ্গে দ্বিরালাপের গ্রন্থনা তাঁর 'poetic itinerary'-এর উন্মোচন-এতে কোনো সংশয় নেই। যেহেতু বাচনে নিহিত থাকে অস্তিত্ব-সংশ্লিষ্ট সামাজিকও সাংস্কৃতিক স্তরের মূল ইশারা, সংকলনের নামকরণ থেকেই নিবিড় সাধের সূচনা হোক। ‘যখন রাত্তির নাইমা আসে সুবর্ণনগরে’ মনে করিয়ে দেয় ধ্রুপদি ইউরোপের 'comica Verba' (Eclogue: 1:52) বিষয়ক ধারণাকে। যে বিশ্ববীক্ষা ইতিবাচক বোধ থেকে উৎসারিত, তার বাচনের কোষে কোষে এই বার্তা অনুরণিত হয় যে কবির প্রকট ও নিভৃত পরিসরে একই উপলব্ধির বিচ্ছুরণ থাকে, ওই সময় যে 'The comic in the vernacular' অর্থাৎ অনভিজাত লোকসমাজের বাচনে ইতিবাচক প্রত্যয় ব্যক্ত হতে দেখছিলেন অনেকেই, সেইসূত্রে শামীমের ঔপভাষিক ক্রিয়াপদ প্রয়োগের তাৎপর্য খুঁজে নিতে পারি। এমনকি, তখন ‘অশিষ্ট লোক-ভাষাতেও ধ্রুপদি চিন্তাবিদেরা যে 'Eloquentia''র সন্ধান পাচ্ছিলেন, আমাদের বাংলা কবিতায় সর্বাধিক তার গুরুত্ব বুঝেছিলেন কবি জীবনানন্দ। তিনি বাক্ব্যবহারে তাই অনায়াসে আপাত-অনভিজাত বিশেষ্য-বিশেষণ-ক্রিয়াপদ ব্যবহার করে কার্যত দান্তে কথিত 'Exercise of free will'-এর অসামান্য দৃষ্টান্ত রেখেছিলেন। আর, একুশ শতকের গোড়ায় শামীম রেজার মতো এক কবি ওই একই নিরিখে কবিতার শব্দ-ব্যবহারে অন্তহীন সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছেন যেন। তাঁর পাঠ-সংহতির প্রথম কবিতায় যে আপাত সমাপ্তির প্রস্তাবনা রয়েছে, তার তাৎপর্য এই নিরিখে নতুনভাবে বুঝে নিতে পারি :

লাঙলের ঘষা খাওয়া রেখাহীন জাত দেইখা-দেইখা মানুষ জন্ম ভুইলা যাই, আদি-আদিম-একই ঘৃণা কামশ্বাস-কোথাও ভালবাসা নাই। পদ্মা-সুরমা-কুশিয়ারা-আগুনমুখা কত কত নদী নাম বুকে বাজে না, ঘুম আসেনা; একবার-কমলদহে প্রিয়তমার শরীরদাহ হলে কমলারঙের আগুন ছড়ায়েছিল পূর্ণতোয়ার জলে; আর আমি সেই দিন থেইকা সাঁতার কাটছি আগুন-জলের ভিতর, তাতেও মৃত্যু আসে না। এমন পৃথিবীতে ঘুম আসেনা-মৃত্যু আসেনা।

জীবনানন্দের কত নদীর নাম ব্যবহৃত হয়েছে, কালীদহ এসেছে নিবিড় রহস্যের সংকেত নিয়ে। তবুও সব কথা শেষ হওয়ার পরেও অনুক্তের পরিসর অবাধ অগাধ হয়ে ওঠে! কমলা রঙের রোদ না লিখে শামীম লেখেন কমলারঙের আগুন। তার কবিতায় আগুন এবং জল, ঘুম এবং মৃত্যু আসে, আবার আসেও না। কবিতার বয়ান যে বিন্দুতে আপাতভাবে শেষ হয়, সেই বিন্দুতেই শুরু হয়ে যায় অন্তহীন অনুরণন। এই কবিতায় এবং পরবর্তী আরও ৫২টি কবিতায়।

শামীম কবিতার খাঁজে খাঁজে লুকিয়ে রাখেন তাঁর অনুভূতির মোহরগুলো। পড়ুয়াকে সেসব খুঁজে নিতে হয়। যেমন সংকলনের দ্বিতীয় কবিতায় : ‘অন্যদের বদলে দেয়ার যাদুকথা শোনানোই যে আমার কাজ’। বোঝো লোক যে জানো সন্ধান। ধ্রুপদি গানের ধ্রবপদের মতো চেতনায় কত বিভক্ত নিয়ে ফিরে ফিরে আসে ‘যখন রাত্তির নাইমা আসে...’। যেমন দ্বিতীয় কবিতায় প্রারম্ভিক পঙক্তিগুলো :

যখন রাত্তির নাইমা আসে মনের গভীরে আমার শুকতারা

গাঁইথা থাকে আকাশের ঘরে, তুমিও তেমনি কইরা

থাকো মনের অন্দরে, আর আমি শুঁড়িখানার ঠিকানা-হারানো বালক,

নিজের খুঁইজা মরি কোনো এক অজানা খাঁচায়।

সম্বোধিক কবিসত্তার কে এই সম্বোধিত তুমি, যার প্রতি দুর্নিবার ছুটে যায় সকল উচ্চারণ? শামীমও কি নিরুচ্চার স্বননে জানিয়ে গেছেন : ‘তুমি তো জানো না কিছু, না জানিলে, আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ করে।’ অন্তহীন এই সম্বোধ্যমানতার অন্বিষ্ট কি স্মৃতি নাকি সময়? অথবা জীবনস্বপ্ন নাকি শিল্প-আকাঙ্ক্ষা? কিংবা অনেকান্তিক আস্তিত্বিক গভীরতা? নিজেকে হারায়ে খোঁজেন কবি; ফলে তাঁর খোঁজ অন্তহীন এবং কবিতার বয়ানেও কোনো সমাপ্তিবিন্দু নেই, নতুন নতুন সূচনাবিন্দু আছে শুধু। ‘হাওয়ারে সাথী আর নদীরে বাহন কইরা’ তাঁর শুধু চলাচল। জীবনানন্দীয় বোধ তাই বিনির্মিত হয় বারবার। প্রতিটি আরম্ভ নতুন সূর্যোদয়ের প্রতিশ্রুতি, এই উপলব্ধি থেকে শামীম লেখেন অপূর্ব গভীরতার বার্তা বয়ে এনে : ‘সব অনুভূতিই প্রথম-প্রথম, যেন এক নতুন শৈশব।’ অনবদ্য এই উচ্চারণ, শিল্পসত্যে উদ্ভাসিত। তাই কত সহজ অনাবিল বাচন ঝরনার মতো স্বতোৎসাহিত হয়ে ওঠে যেন :

যখন রাত্তির নাইমা আসে মনের

গভীরে আমার, তুমি বিন্ধা থাকো হৃৎপিণ্ডের চলমান

রক্তের ভাঁজে; আর আমি থমথমে জলে বাইন্দা-রাখা

নক্ষত্র আর তারাদের ছবি মুক্ত কইরা দেই হাত, ইশারায়;

মধুগন্ধা জোছনা আমারে ডাকে, তারা ভোর নামাতে চায়

আর শুকতারা গাঁইথা থাকে, আকাশের গায়, আমি হাত

বাড়াইলেই কাছে আসে


চার.

জীবনানন্দীয় আদিকল্প ও অনুষঙ্গের বিনির্মিত উপস্থিতি অনুভবগম্য সমস্ত বয়ানে। যেমন তৃতীয় কবিতায় ‘মৃত্যুর শীতল শিস বইয়া যায় ভিতরে আমার। আর দোয়েলা তুই পবিত্র পুরোহিতের মতন নির্বিকার’, ‘আমি সেই পুরোহিত’; এমন উচ্চারণের পর্যায় শেষে কবিতায় জাগে ‘দেখে শুধু হাজার বছরের অন্ধকার ঢেউ’। কেননা পরিবর্তিত সময়ে ‘ঝলসানো চোখে অনুভূতির আংটা আগুন দেখে না কেউ’। ধ্রুপদ তবু ফিরে আসে : ‘যখন রাত্তির নাইমা আসে/হাজার বছরের ক্লেদ কোলে মেঘে’, ভিন্ন-এক বাস্তবের বার্তা নিয়ে, ‘পৃথিবীর কোলাহল/থাইমা যায় হাড়ভাঙা কৃষকের নিভন্ত চোখে’। অবশ্য জীবনানন্দীয় সংকেতবিশ্ব আপন উপস্থিতির সূত্র রেখে যায়; ‘ক্ষিপ্র চিতায়/থাকা গুড়িগুড়ি নক্ষত্র ছেটানো আলোয়’ এবং ‘মৃত মুনিয়ার দেহে সমস্ত সমুদ্রফল ভর করে/ছায়ার নামাতে চায় মরা জোছনায়’। সেইসঙ্গে জাগে ‘বেতুলার চোখে সুবর্ণ নদীটার ধারে’ আত্মার পরাবাস্তব জোছনা। এভাবে কবিতার নিরবচ্ছিন্ন মনন-প্রবাহে আন্দোলিত হতে হতে পাঠক অনবরত অন্যোন্যসম্পৃক্ত অথচ সংশ্লেষণ-দ্যোতক স্বাতন্ত্র্য লক্ষ করতে করতে এগিয়ে যান সম্ভাব্য কোনো মোহানার দিকে। শামীমের স্বগত দ্বিরালাপে নিজেরই অগোচরে হয়তো পড়ুয়া শরিক হয়ে যান। চতুর্থ কবিতায় প্রারম্ভিক পঙক্তিগুলো পাঠকের কাছে প্রত্যুত্তরযোগ্যতা দাবি করে :

যখন রাত্তির নাইমা আসে সুবর্ণনদীটার ধারে,

                        অন্ধপাখির

পাখনায় ভর করে সোনালু আগুন আইসা ঝইরা পড়ে কার অন্তরে?

এই জিজ্ঞাসার উদ্বারণে সম্পৃক্ত থাকাটাই পাঠকের কাছে প্রত্যাশিত; তিনি সতর্ক থাকবেন কবির নিজস্ব মীমাংসা সূত্রের জন্য। সেই মীমাংসা অবশ্য সরাসরি ব্যক্ত হয় না বরং জীবনানন্দীয় নৃমুণ্ডের হেঁয়ালিকে নিসর্গের হেঁয়ালিতে বিনির্মিত করে শামীম চেতনার আবর্তের দিকে সঞ্চালিত করেন এভাবে :

নিসর্গের হেঁয়ালি বিছনায়

একরাশ পরগাছা ঘাস-গ্রহের মনীষা গিইলা গিইলা খায়

শিশিরহীন প্রভাত-বেলায়।


পরাবাস্তবে যেহেতু এই অভিব্যক্তির শিকড় নিহিত, অবচেতনার সুড়ঙ্গপথে গিয়েই ‘প্রতিভা-প্রণয়ী দোয়েলা আমার’-কে বুঝে নিতে হয়। বিষাক্ত ভোগের পরে কার জেগে ওঠার পরানিরূপ কবি উপস্থাপিত করেছেন, সেই মীমাংসা পাঠক করুন। ওই দোয়েলার উদ্দেশে কি এই উচ্চারণ গ্রথিত হলো!

তারপরেও অন্তহীন

ধৈর্য জাইগা ওঠো নতুন স্নান শ্যাষে প্রতিমার বেশে, যে-

পাড়ে আমি দাঁড়ায়ে রাত্রি করেছি পান, সেই পাড়ে, সুবর্ণ

নদীটার ধারে।


পাঠ-সংহতির মৌল আকল্প মনে রেখেই পঞ্চম কবিতাটি পড়তে হয় :


যখন রাত্তির নাইমা আসে জলপদ্মের পাতার উপরে

আমাদের আদিম পৃথিবীতে হাইপার-রিয়্যালিটি নামে।


প্রারম্ভিক দুটি পঙক্তি থেকে পৌঁছাই ‘দোয়েলা পরানি’র উদ্দেশে ব্যক্ত এই বিহ্বল বাচনে :


মহাকালের সন্তান বুকে কইরা সৃজনের ঘরে দিয়াছো

উড়াল। চারিদিকে অনন্ত কনভয়, কুরুবর্ষ আসে, কুরু-

বর্ষ যায়, তারপরও তোমার মাটির টানে রাত্রি আর দিনে

মৃতদের ঘুম ভাইঙা নতুন নতুন নদীর জন্ম হয়।

সত্তার অন্তর্বর্তী শূন্যতার পরিধি ক্রমশ যতই বেড়ে যাক, অনিশ্চয়তা ও অনির্দেশ্যতার মধ্যেই কবি-স্মৃতি ও বিস্মৃতির ভরা সময় মন্থন করেছেন অবিরত। নিরবচ্ছিন্ন এই প্রক্রিয়ার আভাস দিতেই পাঠ-সংহতির আয়োজন। রক্তের ভিতরে যদিও ‘উপনিবেশ-ক্ষত’ শুয়ে আছে, কবির লাবণ্য-সন্ধান শেষ হয় না। বাংলার অনন্ত সময়ে তিনি কীভাবে পথরেখা খুঁজে নিচ্ছেন, তারই নান্দনিক পাঠকৃতি এই বইটি। ‘যখন রাত্তির নাইমা আসে আদিম হেতাল বনের আঁধারে’ (থ) হননের সহজ সরলপথ বিস্তৃত হলেও ‘সকল নরক ভুইলা/পালতোলা গায়েবি হাওয়ায়’ ছুটতে থাকে কবিসত্তা। কখনো বা অন্ধ জোছনায় দুলে উঠেন এবং লক্ষ করেন আগুন-লিপিতে ঊষর সময় নিজেকে আঁকছে, তাকেও।

শামীম এভাবেই আপন সময়ের ভেতরকার কূটাভাস, আত্মবিরোধ, রিক্ততা, আকাঙ্ক্ষা স্বপ্ন গতির মন্থনকে শিল্পিত বিন্যাসে ধরতে চেয়েছেন। আগেই লিখেছি, তার কবিতা খুব নিবিড়ভাবে বাংলাদেশের জাতীয় স্বভাবে লালিত বলে শিকড়ের ঘ্রাণ নিতে এতটা উন্মুখ তিনি। ভাঙনের পদাবলি নয়, তিনি লিখতে চান স্বপ্নের উপকূল ও চিরসবুজের ঘ্রাণ-কথা, জানাতে চান মুক্ত সুবর্ণগ্রামের হাসি। স্বগত দ্বিরালাপে নিজের কাছেই পৌঁছে দেন এই বার্তা : ‘আর নয় জীবনের লগে/অভিনয়, নিজেরে চিনি না বইলা আন্ধার রাত্তির নামে/আমার প্রণয়।’ পড়তে পড়তে মনে হয়, শামীম যাবতীয় নৈসর্গিক অনুপুঙ্খের মধ্যে সংকেত খোঁজেন, খোঁজেন আদিকল্প। আসলে তিনি নিরন্তর সত্তার বাহির থেকে ভিতর পানে ফিরে আসতে চান। এই প্রত্যাবর্তন বারবার যেমন নতুন সম্ভাবনার উন্মোচন শেখায় তেমনি বহুবিধ শূন্যতারও মোকাবিলা করে। সেই জন্যে পাঠ-সংহতির নিবিড় অবলোকনে কেবলই নতুন নতুন পরিসর ব্যক্ত হতে থাকে। একসময় মূর্ত ও বিমূর্তের মধ্যবর্তী জলবিভাজন রেখা লুপ্ত হয়ে যায়। এই নিরিখেই বস্তুত শামীম রেজার ভাষা-মন্থন অনন্য। তিনি যেন ভাঙতে ভাঙতে গড়েন আর গড়তে গড়তে ভাঙেন। এই প্রক্রিয়ায় আপন সংবেদনশীলতাতেই তার বিপুল আস্থা। সময় ও পরিসরের অন্তহীন দ্বিরাচনিকতা থেকে এভাবেই দ্রাক্ষা মোচন করেছেন কবি। উপভাষার লোকায়ত লাবণ্য কতদূর অবধি ব্যাপ্ত হতে পারে তা-ই তিনি পাঠকের কাছে উপস্থাপিত করেছেন।

যেসব পাঠক কবিতায় স্মরণীয় পঙক্তির সন্নিবেশ দেখতে চান তাঁদের জন্য বিপুল সম্ভার রয়েছে পাঠ-সংহতিতে। এই প্রতিবেদনে ইতোমধ্যে তার কিছু দৃষ্টান্ত উপস্থাপিত হয়েছে। সৃজনশীল বিনির্মাণ তো কবির নিশ্চিত আগুন। যেমন ‘বারো’ সংখ্যক কবিতায় ‘জীবনবাবু চাইলেও ছিন্ন খঞ্জনার/মতো পারবে না বেহুলারে নাচাইতে ইন্দ্রের সভায় নদী-/মাঠ-ভাঁটফুল ঘুঙুর হইয়া গড়াইবে না তার বায়ু সকল/খাইয়া ফ্যালছে সময়ের ঘোড়ায়।’ আর ‘একুশ’ সংখ্যক কবিতার অন্তিম পঙক্তিগুলো : ‘আমার দীর্ঘ হাঁসের এখন আর কোনও সহোদর নেই এখন/শ্রাবণ নামে চোখের গভীরে আমার, বলো, এমন প্রেম কে/কোন্ নামে ডাকি যে এবার।’ রোমান্টিক কবিস্বভাবের পক্ষে অনিবার্য বাচনিক লাবণ্য পূর্ণ শামীমের পাঠকৃতি। তবে তাঁর কবিতায় একটিমাত্র অঞ্চল নেই, এ কথা মনে না রাখলেই নয়। রূপকে সমর্পিত তাঁর বাক্ব্যবহার থেকে বুঝে নিই, ভাষা পৃথিবীর অপার সম্ভাবনা সম্পর্কে তাঁর মুগ্ধতা ও প্রত্যয়ের শেষ নেই। এই জন্য উৎস থেকে মোহনায় পৌঁছানোর পরে পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগে : যাকে মোহনা ভাবছি তা আসলে নতুন সূচনার উৎস নয় তো?

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না