X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের সাহিত্য : স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর | শেষ পর্ব

মোস্তফা তারিকুল আহসান
০৪ মার্চ ২০২১, ১৪:৩৩আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২১, ১৪:৩৩

পূর্বপ্রকাশের পর

স্বাধীনতার পরবর্তী পাঁচ দশকে বাংলাদেশের সাহিত্যের যে গভীরতা ও বিস্তৃতি তার ভরকেন্দ্রে রয়েছে স্বাধীনতার বীজমন্ত্র—মুক্তি, আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন, সংগ্রাম আর সম্ভাবনার নতুন দিগন্তের খোঁজ। আমরা লক্ষ করব সদ্য স্বাধীন ও বিধ্বস্ত বাংলাদেশ যেভাবে মানবিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় তার গভীর ও নির্মোহ বয়ান আমরা পেয়েছি সত্তর, আশি ও নব্বই দশকের লেখকদের রচনায়। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর যে রাজনৈতিক অপতৎপরতা শুরু হয় (যার সাথে প্রো-পাকিস্তানি শক্তিবলয় জড়িত ছিল) তার ভয়াবহ পরিণাম এদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করে। এর সুদূরপ্রসারি প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের সাহিত্যে। মুক্তবুদ্ধির সত্যিকারের লেখকদের জীবনে নেমে আসে অমোঘ অন্ধকার; সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা বাধাপ্রাপ্ত হয় যদিও আমাদের সৌভাগ্য যে সামরিক সরকার (কখনো ছদ্মবেশি সামরিক সরকার) নতুন জাতীয়তাবাদী তত্ত্ব নিয়ে জোরেসোরে দলবেঁধে মাঠে নামলেও তাদের বশংবদ লেখকেরা মানসম্পন্ন কোনো সাহিত্যরচনা করতে পারেনি। যার ফলে প্রকৃত ধারার সাহিত্য আবার তার স্বস্থান ফিরে পেতে শুরু করে। আর নব্বই দশকের প্রথম দিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার শাসন ক্ষমতায় ফিরে এলে প্রগতিশীল লেখকেরা মুক্তির পূর্ণ স্বাদ ফিরে পান এবং পূর্ণপ্রবাহে সাহিত্যসৃজন চলতে থাকে। মনে রাখা বাঞ্ছনীয় যে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ রাষ্ট্রীয়ভাবে দীর্ঘদিন পৃষ্ঠপোষকতা পেলেও তার প্রভাব এদেশের সাহিত্যে পড়েনি বললেই চলে। এর সাথে আরো যোগ করতে হবে যে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল ধারার লেখকদের অবিরাম সতর্ক থেকে, লড়াই করেই তাদের সাহিত্যসৃজন প্রক্রিয়া জারি রাখতে হয়েছে।

সত্তর, আশি, নব্বই দশক সময়কালে যারা লিখেছেন তাদের মধ্যে নবীনরা আছেন; আছেন প্রবীণেরা যারা পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে দিশারির কাজ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর যারা সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন এমন লেখকের সংখ্যাও কম নয়; তারা অনেকে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছেন, অনেকে কলম নিয়ে। এই অভিজ্ঞতালব্ধ লেখকেরা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল উৎসকে শনাক্ত করতে পেরেছিলেন সহজে। মুক্তিযুদ্ধকে বিষয়বস্তু করে রচিত সাহিত্যকে মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য বলা হয় যদিও এর সীমানা অনেক দূর বিস্তৃত। এই বাংলায় সে কৃষক, জেলে, তাঁতি, কামার জীবনের সংগ্রামে লিপ্ত সেও মুক্তির প্রয়াসী। কাজেই সকল মুক্তিকামী মানুষই যোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এভাবে সাহিত্যের নানা তরঙ্গে মিশে গেছে; প্রেরণার অন্যতম উৎস হিসেবে ফল্গুধারার মতো লেখকের মানসে তরঙ্গের পর তরঙ্গ তৈরি করেছে। মুক্তিযুদ্ধের কথাসাহিত্য সবচেয়ে সমৃদ্ধ মনে করা হয়। এর কারণ হয়তো বহুবিধ; তবে উপন্যাসের গঠনগত পরিকাঠামো ও বিস্তৃত বয়ানের কারণে একটা বহুধাবিস্তৃত জীবনাভিক্ষতা প্রকাশ সম্ভব বলে উপন্যাস বা কথাসাহিত্য এগিয়ে থাকতে পারে। যুদ্ধের ভয়াবহতা ও এর প্রতিক্রিয়াজাত অধ্যাস নিয়ে জীবনের তাৎপর্যময় আখ্যান আমরা পাই। গণহত্যা, রক্তপাত, লুণ্ঠন, নারীর প্রতি অমানবিক নৃশংসতা, মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনপণ লড়াই, অবিরাম জীবনের ক্রন্দন, অবমাননা, ক্রুরতা, ত্যাগ-তিতীক্ষা ও সার্বিকভাবে মহামানাবিক বিপর্যয় উপন্যাসে বিস্তৃতভাবে লক্ষ করা যায়। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উপন্যাসের নাম করা যায় যা স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে রচিত। আনোয়ার পাশার ‘রাইফেল রোটি আওরাত’; শওকত ওসমানের ‘জাহান্নাম হতে বিদায়’; রশীদ করীমের ‘আমার যত গ্লানি’; সৈয়দ শামসুল হকের ‘নীল দংশন’, ‘নিষিদ্ধ লোবান’, ‘দ্বিতীয় দিনের কাহিনী’; শওকত আলীর ‘যাত্রা’; রাবেয়া খাতুনের ‘ফেরারি সূর্য’; মকবুলা মনজুরের ‘শিয়রে নিয়ত সূর্য’; মাহমুদুল হকের ‘জীবন আমার বোন’, ‘খেলাঘর’; রশীদ হায়দারের ‘খাঁচায়’, ‘অন্ধকথামালা’; আমজাদ হোসেনের ‘অবেলায় অসময়’; ঝর্ণাদাশ পুরকায়স্থের ‘বন্দী দিন বন্দী রাত্রি’; আহমদ ছফার ‘ওঙ্কার’, ‘অলাতচক্র’, শামসুর রাহমানের ‘অদ্ভুত আঁধার এক’; সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের ‘জীবনতরু’; সেলিনা হোসেনের ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’; হুমায়ূন আহমেদের ‘আগুনের পরশমনি’; রিজিয়া রহমানের ‘রক্তের অক্ষরে; শহীদুল জহীরের ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’; মঞ্জু সরকারের ‘প্রতিমা উপাখ্যান’ ইত্যাদি। বলাবাহুল্য, স্বাধীনতার বিষয় নিয়ে অজস্র উপন্যাস ও ছোটগল্প লেখা হয়েছে এবং বর্তমান কাল পর্যন্ত তা সচল গতিতে প্রবহমান।

কবিতায় এই তরঙ্গকে নতুন দ্যোতনায় প্রকাশিত হতে আমরা দেখেছি আমাদের প্রধান কবিদের কবিতায়। শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, সৈয়দ শাসমুল হক, শহীদ কাদরী, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, সিকান্দার আবু জাফর, আহসান হাবীব, ওমর আলী, আবুবকর সিদ্দিক, জুলফিকার মতিন, আবুল হাসান, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, আবদুল হাই শিকদার, আব্দুল মান্নান সৈয়দ ও আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রমুখ। বঙ্গবন্ধু বড় একটা অংশজুড়ে আছেন কবিতায়। পঞ্চাশ ষাট পেরিয়ে আশি, নব্বই বা শূন্য দশক বা দ্বিতীয় দশকজুড়ে অজস্র কবিকে দেখি কবিতার পথে; প্রতিটি দশকের নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করা গেলেও মোটাদাগে তারা প্রকৃত কবিতার শক্তি ও সম্ভাবনার পথে হেঁটেছেন। দশকওয়ারি সাহিত্যের আলোচনা সবসময় কার্যকরী না হলেও এর কিছু লক্ষণ দাঁড়িয়ে গেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর এই কবিগোষ্ঠী স্বাধীনতাপোক্ত চেতনাবিশ্ব দ্বারা অবগাহিত এটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বিষয়বস্তুর নবারোপ, ভাষাব্যবহারের নতুন কাঠামো, বৈশ্বিক প্রণোদনাকে আত্তীকরণ করে নিজস্ব বিষয়ে পরিণত করা নান্দনিক বোধ বিবেচনায় নিলে স্বাধীনতাপরবর্তী বাংলাদেশের কবিতা এক বিপুল সম্ভাবনাকে অন্বিত করতে পেরেছে বলা যায়। সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের কবিতা (সাহিত্যের অন্য শাখাকেও বিবেচনায় রাখতে হবে) যে বহুমাত্রিক ব্যঞ্জনায় উদ্দীপিত ও সংবেদিত তার মূলে রয়েছে আমাদের জেগে ওঠার আলোড়ন যা স্বাধীনতার শক্তি থেকে প্রোথিত। ত্রিশোত্তর কবিতার মৌলিকতা নিয়ে যারা সন্দেহ প্রকাশ করেন সত্যিকার অর্থে সেই যুক্তির সাথে আমরা সম্পূর্ণভাবে একমত নই। যারা মনে করেন রবীন্দ্রনাথের পরে জীবনানন্দই একমাত্র প্রতিভা সেই যুক্তির সাথেও একমত হওয়াও শক্ত। এটা ঠিক যে চল্লিশ বা পঞ্চাশ বা ষাট দশকের কবিরা (সবাই নয়) বিদেশি কবিতা দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত (উভয় বাংলার ক্ষেত্রে) এবং সেটা বিষয়বস্তু ও প্রকরণের দিক দিয়ে প্রায় প্রমাণিত তবু বাংলা কবিতা আবার ফিরে আসে নিজস্ব মহিমায়। সত্তর, আশি ও নব্বই দশকে বাংলাদেশের কবিতা শুধু স্বদেশ ও স্বাধীনতার মহান চেতনায় বাংলাদেশকে চিনতে পারে; একইসাথে চিনতে পারে নিজের চিন্ময় অনুভূতির দরজাকে। আশিকে কেউ কেউ ম্রিয়মাণ ভাবেন, সেটা সব অর্থে হয়তো সঠিক নয়। তবে নব্বই দশকে আমরা কবিতার মৌলিক সূক্ষ্ম ও সংবেদী অনুধ্যানের কাছে কবিদের সমর্পিত হতে দেখি এবং এটাও লক্ষ করা যায় যে, তারা এই চেতনাকে বাঙ্ময় করার জন্য নতুন পদ্ধতিগত নিপুণতা আবিষ্কার করে নিয়েছেন। আর নব্বইয়ের শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে পরের দুই দশকের অপেক্ষাকৃত তরুণ কবিরা আরো উপরে ওঠার চেষ্টা করেছেন। বলতে দ্বিধা নেই যে, এই নবদীপ্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ কাব্যমানসের মূল আধার আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং তা পশ্চিমবাংলার সাহিত্যধারা থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত না হলে আমরা কোন অন্ধকারে রয়ে যেতাম সেটা এখন কল্পনা করা যায় না। এটা ঠিক যে নানা ধরনের সামাজিক রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কারণে, পুঁজিবাদের ভয়ংকর ছোবলে স্বাধীনতার সুফল আমরা পরিপূর্ণভাবে পাইনি। তবু যে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নতি হয়েছে তা সাহিত্যিকদের মানসে সদর্থক প্রেরণা যুগিয়েছে। স্বাধীনতা অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছে, বিপুল জনগোষ্ঠীকে কর্মচঞ্চল করে তুলেছে, সমাজগঠনের ভেতরকাঠামো থেকে ওপরকাঠামোয় নানা পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনযাপনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে আর এর ব্যাপক ও নিবিড় প্রভাব পড়েছে আমাদের সাহিত্যে।

এই প্রজন্মের (শূন্য ও পরবর্তী দুই দশকের) কবিদের নাম উল্লেখ করতে চাই যারা নব্বইয়ের পরে একটা নতুন বিচিত্র ও পেলব ধারা কবিতায় বহমান রেখেছেন : আহমাদ শামীম, শিমুল জাবালি, চাঁদনী মাহরুবা, শ্বেতা শতাব্দী এষ, সুমন শামস, মাহী ফ্লোরা, মিলটন শফি, মাহফুজা অনন্যা, চামেলী বসু, তানিয়া হাসান, অনুভব আহমেদ, মাহিরা রুবী, ইলা লিপি, অভি জাহিদ, বীথি রহমান, হাসান হাবিব, নাজমুল হালদার, বেবি সাউ, মেহনাজ আলতাফ, অপরাহ্ণ সুসমিতো, ফেরদৌস মাহমুদ, তুষার কবির, চন্দন চৌধুরী, আফরোজা সোমা, শাহ বুলবুল, চাণক্য বাড়ৈ, মনিরুল মোমেন, সুমি সিকান্দার, মেঘ অদিতি, তৃণা চক্রবর্তী, মাহফুজ রিপন, ওমর ফারুক জীবন, স্বরুপ মণ্ডল, জান্নাতুল বাকিয়া কেকা, মেঘ বসু, আহমেদ বাসার, রঞ্জনা বিশ্বাস, আহমেদ শিপলু, ফারুক আফিনদী, হাবিবুল্লাহ রাসেল, জয়নাল আবেদীন শিবু, মাহবুব মিত্র প্রমুখ।

বাংলাদেশের সাহিত্যে নাটক যে বিচিত্র সম্ভাবনার পথে গেছে তাঁর কারণও আমাদের স্বাধীনতা। যুদ্ধফেরত মুক্তিকামী মানুষের আত্মাকে পড়তে পেরেছিলেন আমাদের নাট্যকারেরা। স্বাধীনতার আগে যারা লিখতেন (সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, মুনীর চৌধুরী, আসকার ইবনে শাইখ প্রমুখ) তাদের নাট্যরচনার গতি থিতিয়ে আসে। ব্যতিক্রম ছিলেন মুনীর চৌধুরী তিনি স্বাধীনতার বীজমন্ত্র নিয়ে নাটক রচনা করেছিলেন, মঞ্চায়ন করেছিলেন। আমরা আরো লক্ষ করি যে, নতুন একঝাঁক লেখককে নাটকের হাটে। এদের সবাই যে খুব মানসম্পন্ন নাটক লিখেছেন, তা নয়। তবে এসময় নাট্যকারদের সাথে গভীরভাবে যুক্ত হন মঞ্চনাটকের জড়িত নাট্যকর্মীরা। দেশীয় নাট্যকারদের নাটক তারা যেমন মঞ্চায়ন করেছেন তেমনি সারা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নাটকের অনুবাদ ও অভিনয় হয়েছে এখানে। এর বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্যধারা থেকে (মৈমনসিংহ গীতিকা) তারা রসদ সংগ্রহ করেছেন। শেক্সপিয়র, মলিয়ের, হেনরিক ইবসেন বা বার্নাড শ বা আরো বহু নাট্যকারের যেসব নাটক এখানে অভিনীত হয়েছে তা গৌরবের সাথে সবাই বিবেচনা করেন। মুনীর চৌধুরীর নাট্যভাবনার মৌলিকতা নিয়ে এগিয়ে আসেন অনেকে। সৈয়দ শামসুল হক, মমতাজ উদ্দীন আহমেদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মামনুর রশীদ, সেলিম আল দীন, রামেন্দু মজুমদার (মূলত মঞ্চের মানুষ) প্রমুখ। এঁদের মধ্যে স্বাধীনতা পরবর্তী কালে সবচেয়ে প্রতিভাবান ভাবা হয় সৈয়দ শামসুল হক ও সেলিম আল দীনকে। এঁরা প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে মৌলিক সৃষ্টির দিকে এগিয়ে গেছেন। সৈয়দ শামসুল হক বাংলার প্রাচীন নাট্যধারাকে অনুপ্রাণিত হয়ে রচনা করেছেন কাব্যনাট্য। বুদ্ধদেব বসুর পরে তিনি এ ধারার শ্রেষ্ঠ নাট্যকার। বুদ্ধদেব বসু পৌরাণিক প্রসঙ্গ নিয়ে (তপস্বী ও তরঙ্গীনি) নাটক লিখলেও সৈয়দ হক এগিয়ে—সামাজিক রাজনৈতিক ও মনঃস্তাত্ত্বিক প্রসঙ্গ নিয়ে। তিনি স্বাধীনতার মর্মমূলে প্রবেশ করতে পেরেছিলেন নাটকের মাধ্যমে। এর জন্য নির্বাচিত ভাষা ব্যবহার করেছেন। সন্দেহ নেই কাব্যনাট্যের প্রধান কারিগর টি এস এলিয়টকে তিনি স্মরণ করেছেন। তাঁর ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়,’ ‘নূরুলদীনের সারাজীবন’ বাংলা ভাষার সেরা কাব্যনাট্য। গণনায়ক, ঈর্ষা ও তাঁর আরো দুটি অনন্য সৃষ্টি। সেলিম আল দীন প্রাচীন বাংলার জীবনকে আখ্যানের মাধ্যমে নাটকের নতুন বয়ান তৈরি করেছেন। ‘বনপাংশুল’ এ পর্যায়ে তাঁর সেরা কাজ। আগেই উল্লিখিত হয়েছে যে, মঞ্চে নতুন জোয়ার আসে নতুন নাটকের সংযোজনে। মঞ্চে এসময় অসামান্য সব অভিনেতাদের আবির্ভাব ঘটে। তাদের সৌজন্যে নাটক নতুন উচ্চতায় আসীন হয়। আলী যাকের, আসাদুজ্জামান নূর, সারা যাকের, আতাউর রহমান প্রমুখ অভিনেতা ও নাট্যপ্রযোজক বাংলাদেশের স্বাধীনতাপরবর্তী থিয়েটার চর্চাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যান।

বাংলাদেশের সাহিত্য স্বাধীনতার পাঁচ দশকে যে সমৃদ্ধির দিকে গেছে তাকে শুধু সংখ্যা বা পরিমাণ দিয়ে বিবেচনা করা সমীচীন নয়। ধ্রুপদী ধারার ও নতুন প্রকরণকৌশল নিয়ে সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় যে বিপুল পরিমাণ সাহিত্য রচিত হয় তা একমাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলার কথা মনে রাখলে বোঝা যাবে। জনপ্রিয় ধারাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। আমাদের ধারাবাহিক জীবনযাপনে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ যে গভীর পদচ্ছাপ রেখেছে তারই শৈল্পিক উৎসারণ আমরা পাই আমাদের কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধে। স্বাধীনতার চেতনাকে পরিপূর্ণভাবে আমাদের শিল্পে ছড়িয়ে দেবার সুযোগ রয়েছে। একজন পাঠক ও লেখক হিসেবে সেই সুবর্ণ দিনের অপেক্ষায় থাকতে চাই আমরা।

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
রাব্বির ব্যাটে শাইনপুকুরকে হারালো শেখ জামাল
রাব্বির ব্যাটে শাইনপুকুরকে হারালো শেখ জামাল
সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকার দুর্নীতি: দুদকের অনুসন্ধান শুরু
সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকার দুর্নীতি: দুদকের অনুসন্ধান শুরু
পার্বত্য অঞ্চলে অদৃশ্য শক্তি বলে কোনও কথা নেই: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী
পার্বত্য অঞ্চলে অদৃশ্য শক্তি বলে কোনও কথা নেই: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা