X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বরের বয়স ৯২, কনের ৮২

দিনাজপুর প্রতিনিধি
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২৩:২৭আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২৩:২৭

বর বৈদ্যনাথের বয়স ৯২, কনে পঞ্চবালার বয়স ৮২। মহা ধুমধামে বিয়ে হলো তাদের। রীতি মেনে এই জুটির বিয়ে দিলেন বংশের অনুজ উত্তরসূরীরা। তবে এটি আসলে বিবাহ নয়, পুনর্বিবাহ।

দিনাজপুরের বিরলের বৈদ্যনাথ দেবশর্মা ও পঞ্চবালা জুটির বিয়ে হয়েছিল প্রায় ৭৪ বছর আগে। তাদের একমাত্র কন্যা ঝিলকো বালার ৩ ছেলে ও ৫ মেয়ে। তাদের প্রত্যেকের ঘরে ছেলে মেয়ে শুধু নয়, নাতি-পুতিও আছে। বৈদ্যনাথ-পঞ্চবালার সৌভাগ্য পাঁচ প্রজন্মের উত্তরসূরি দেখে ফেলেছেন তারা। আর তাতেই একটি রীতি সামনে এসে দাঁড়ায় তাদের সামনে। দেবশর্মাদের লৌকিক রীতি অনুসারে যদি কেউ প্রজন্মের পাঁচ সিঁড়ি দেখে ফেলে তাহলে তাদের আবার বিয়ে করতে হবে। এই রীতি মেনে তাই আবারও বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন তারা।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বৈদ্যনাথ দেবশর্মার বয়স যখন ১৮ তখন তার বাবা স্বর্গীয় ভেলশু দেবশর্মা একই এলাকার স্বর্গীয় বিদ্যামন্ডল দেবশর্মার হাতে ১৩ টাকা পণ দিয়ে ঘরে তুলে আনেন তার ৮ বছর বয়সী কন্যা পঞ্চবালা দেবশর্মাকে। সেদিনের বালিকা নববধূ পঞ্চবালা আজ বিয়ের ৭৪ বছরে পড়েছেন, বয়স হয়েছে ৮২। আর সেদিনের বর ১৮ বছরের বৈদ্যনাথ দেবশর্মার বয়স এখন ৯২ বছর।
এই ৭৪ বছরে তাদের একমাত্র মেয়ের বিয়ের পর সন্তান-নাতি-নাতনি এবং তাদের ঘরের সন্তান মিলে পাঁচ সিড়ি বা পাঁচ পিড়ি পেরিয়েছে। তাদের বংশের রেওয়াজ আছে যদি কারও পাঁচ সিড়ি দেখার সৌভাগ্য হয় তাহলে ভগবানের তুষ্টির জন্য পুন:বিবাহের আয়োজন করতে হয়। আর সেই অনুযায়ী গত এক মাস ধরেই চলছিল এই প্রবীণ জুটির পুনর্বিবাহের আয়োজন।
অবশেষে গত রবিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) পঞ্জিকামতে বিবাহলগ্নে সব আনুষ্ঠানিকতা মেনে পুনর্বিবাহ সম্পন্ন হয় তাদের।

মহা ধুমধামে বুড়ো-বুড়ির আবারও বিয়ে

কৃষি পেশায় নিয়োজিত বৈদ্যনাথ ১৯৭২ সাল থেকে ৮৬ সাল পর্যন্ত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সদস্যও ছিলেন। এখন তার পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ৫৪ জন।

বিয়ের পর বর বৈদ্যনাথ দেবশর্মা বলেন, ১৩ টাকা পণ দিয়ে পঞ্চবালার সাথে বিয়ে হয়েছিল আমার। ব্রিটিশদের সময়ে তখন এমন ধুমধাম ছিল না। এখন যে বিয়ে হলো এখন পর্যন্ত যে আনন্দ পাচ্ছি তা বলার মতো নয়। আমার নাতি-নাতনিরা যা করেছে তা বলার মতো নয়। বিয়ে এত বছরেও আমার স্ত্রীর গায়ে একবার ছাড়া কখনও হাত তুলিনি। একবার হাত তুলেছিলাম, আর তখন মায়ের হাতে আমাকে মার খেতে হয়েছিল। এরপর কখনও আমি তাকে একদিনের জন্যও ছাড়িনি। আমি গয়া, কাশি, বৃন্দাবন, আগ্রা, ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন তীর্থস্থানে গিয়েছি তাকে নিয়ে।

স্ত্রী পঞ্চবালা দেবশর্মা বলেন, আমার যখন বিয়ে হয়েছে তখন আমি কিছুই বলতে পারি না। এখন আবার নাতি-পুতিরা বিয়ে দিলো। আমার স্বামী আমাকে অনেক ভালোবাসে, তাকে ছাড়া আমি থাকতে পারি না, আমাকে ছাড়াও সে থাকতে পারে না। এই আয়োজনের আগে বলছিলাম এই বিয়ে কেমন করে হবে, আর এখন আমার খুব ভালো লাগছে।

বাবা-মায়ের আবারও বিয়ে দিতে পেরে খুশি তাদের একমাত্র কন্যা ঝিলকো বালা। তিনি বলেন, এই আয়োজনে আমরা আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি, সবাই এসেছেন। এটা মূলত মঙ্গল ও পরিবারের ভালোর জন্য করেছি। আমরা যেন ভালোভাবে থাকতে পারি, ভগবানের কাছে এই প্রার্থনা।

বিয়ের আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা নাতি ফটিক চন্দ্র সরকার বলেন, এক মাস আগে এই আলোচনা করি। পরে পরিবারের সদস্যরা একমত হলে এই বিয়ের আয়োজন করি। এর আগে আমরা ধর্মীয় রীতিনীতির বিষয়গুলো নিয়ে পুরোহিতের সাথে কথা বলেছি। আমার দাদুর পাঁচ সিঁড়ি পার হয়ে গেছে। আমরা তার নাতি, আবার আমাদেরও নাতি হয়েছে। বিয়েতে অনেক লোকসমাগম হয়েছিল।

এই বিয়েতে বর ও কনের সন্তান, তাদের নাতি-নাতনি মিলে ৪ প্রজন্মের আত্মীয়-স্বজনসহ অংশগ্রহণ করেন আশেপাশের প্রতিবেশীরাও। আবার বৃদ্ধ-বৃদ্ধার বিয়ে বলে আনন্দের কমতি ছিল না নতুন প্রজন্মের কাছে।

কাহারোল উপজেলা থেকে আসা আত্মীয় লিপা রানী দেবশর্মা বলেন, এখানে এসে খুব আনন্দ উপভোগ করেছি। আমার জীবনে প্রথম এমন আয়োজন দেখলাম। নেচে-গেয়ে আমি আনন্দে ভাগিদার হয়েছি।

বিবাহ কাজে পুরোহিতের দায়িত্বে মহাদেব ভট্টাচার্য বলেন, এর আগে এমন বিয়ে দেখিনি। তবে তারা যে এমন আয়োজন করেছেন তা সত্যিই আনন্দের। আর এমন আয়োজন হলে মঙ্গল হয় ধর্মীয় এমন বিশ্বাস থেকে তারা যে আয়োজন করেছে তাতে বোঝাই যায় যে তাদের পরিবারের মধ্যে ভালোবাসা কতটুকু। শাস্ত্রে এমন কথা উল্লেখ না থাকলেও লোকাচারে রয়েছে বলে জানান তিনি।

 

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভ্যাটেই মিলবে রাজস্ব, অথচ ভ্যাট বাড়াতে অনীহা
ভ্যাটেই মিলবে রাজস্ব, অথচ ভ্যাট বাড়াতে অনীহা
বাংলাদেশে দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগের ফল দৃশ্যমান হচ্ছে
গ্লোবাল স্কিলস ফোরামে বক্তারাবাংলাদেশে দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগের ফল দৃশ্যমান হচ্ছে
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
তীব্র গরমে পানি চাইতে চাইতেই ট্রাফিক পুলিশের মৃত্যু
তীব্র গরমে পানি চাইতে চাইতেই ট্রাফিক পুলিশের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা