X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সতীর্থদের স্মৃতিতে একজন এটিএম শামসুজ্জামান

বিনোদন রিপোর্ট
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৪:১৭আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:৫৯

এটিএম শামসুজ্জামান এই মৃত্যুর খবরটি গুজব নয়, এটুকু নিশ্চিত হওয়ার পর প্রিয় শিল্পীকে খুঁজতে শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে সূত্রাপুর দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনের ৪৬ নম্বর বাড়ির সামনে হাজির হন অসংখ্য ভক্ত, শিষ্য ও শিল্পী।

খুঁজে কি আর পাওয়া যায়, যে যায়- যায়। এটিএম নিজেও হাসতে হাসতে বলে গেছেন মৃত্যুর ক’দিন আগে, ‘এই যে তোমরা আমার মৃত্যু নিয়ে গুজবের নামে মজা করছো বারে বার। যেদিন সত্যি সত্যি চলে যাবো- পারলে আটকে রেখো। বাঁচার গুজবটা ছড়িয়ে দিও! দেখবো কতোটা পারো।’

এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুর খবরে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশের শীর্ষ নেতা থেকে প্রায় সব সংগঠন। দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে ছুটে গিয়েছেন নানা স্তরের শিল্পী-কুশলী ও সাধারণ। সেই ভিড়ে কথা বলেছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের আরেক কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রফিকুল আলম।

রফিকুল আলম তিনি বলেন, ‘শুধু একজন অভিনেতা হিসেবে নয়, তিনি রাজনৈতিকভাবেও সচেতন একজন মানুষ ছিলেন। বিশেষত বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। যখন রাজপথে অগ্নিসংযোগের রাজনীতি হচ্ছিল তখন তিনি টানা ৯৩ দিন রাজপথে ছিলেন। তাই তার মতো একজন পরিপূর্ণ মানুষ পাওয়া সত্যিই কঠিন।’

এই শিল্পী আরও বলেন, ‘এমনকি গতকালও (শুক্রবার) তিনি একুশে ফেব্রুয়ারির জন্য বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদের ব্যানারে ফুল তৈরি হয়েছে কিনা এই খবর নিয়েছেন। শুধু অভিনেতা নন, আমরা একজন আপাদমস্তক সংস্কৃতিকর্মী ও অ্যাক্টিভিস্টকেও হারালাম।’

দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে দাঁড়িয়ে অভিনেত্রী আনোয়ারা বলেন, ‘উনি সাধারণত ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। খারাপ মানুষের চরিত্রে। বাস্তবে অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। উনার সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। তা বলে শেষ করা যাবে না। উনার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।’

মীর সাব্বির মীর সাব্বিরের ‘নোয়াশাল’ ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে শেষের দিকে তুমুল জনপ্রিয়তা উপভোগ করেন এই বরেণ্য শিল্পী। প্রিয় শিল্পীকে হারিয়ে হতবিহ্বল সাব্বির বলেন, ‘‘এটিএম শামসুজ্জামান একটি নাম। একটি ইতিহাস। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল, আমার পরিচালনায় তাকে নিয়ে কাজ করার। সেটা ছিল ‌‘নোয়াশাল’ নাটকে। আমার ধারণা, তার অভিনীত সবচাইতে বড় সিরিয়াল ছিল এটাই। তিনি আমাকে নানারকমভাবে ভালোবাসতেন এবং অসম্ভব দোয়া করতেন। সব সময় বলতেন, ‘মীর সাব্বির তুমি সিনেমা বানাও’। তিনি প্রায়ই তার বাসায় আমাকে ডাকতেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিতেন। আমার পরিচালিত সিনেমার খোঁজ নেওয়ার জন্য তিনি সর্বশেষ ১৮ ডিসেম্বর তার বাসায় ডেকেছিলেন। আমি আহসানুল হক মিনু এবং দেবাশীষ দে মিঠুন গিয়েছিলাম। কখন যে আড্ডা মারতে মারতে সময় পার করে দিয়েছিলাম, নিজেরাও টের পাইনি।’’

স্মৃতিকাতর এই অভিনেতা-নির্মাতা আরও বলেন, ‘সেটাই শেষ দেখা। হয়তো আর কোনোদিন দেখা হবে না কিন্তু যে দোয়া উনি করেছেন সেটা যতদিন বেঁচে থাকব ভুলতে পারবো না। চাচা, মহান আল্লাহ আপনাকে বেহেস্তবাসি করবেন, আপনার মতো একজন ভালো মানুষের জন্য আমাদের দোয়া অবিরাম।’

মৃত্যুর গুজবের প্রসঙ্গ টেনে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত সত্যটা হলো। এটিএম ভাই চলে গেলেন। আর হলো না দেখা। কতো সময়, কতো স্মৃতি আমাদের। আবেগতাড়িত হচ্ছি খুব। অপার শ্রদ্ধা। শান্তিতে থাকুন আপন মানুষ।’

তারিন জাহান

অভিনেত্রী তারিনের সঙ্গে এটিএম শামসুজ্জামানের সম্পর্ক ছিলো অনেকটাই আত্মিক ও পারিবারিক। মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে আসলেন তিনিও। যিনি কিছুদিন আগে হারালেন নিজের বাবাকে।

তারিন বলেন, ‘শুধু অভিনয় নয়, আমার সৌভাগ্য হয়েছিল একই সংগঠনের (বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ) হয়ে কাজ করার। একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়েও তাঁর যে কতো পরিকল্পনা ছিলো। অসুস্থ, তবুও নিজে এসে কাজ করতে চেয়েছেন। তিনি কী যে স্নেহ করতেন, তা আমি বলে বোঝাতে পারব না। আমাকে মেয়ের মতো দেখতেন। দুঃখের বিষয় আমি এই ফেব্রুয়ারিতেই আমার বাবাকে হারিয়েছি, একই মাসে আমার কর্মস্থলের আরেক বাবাকে হারালাম।’

অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি বলেন, ‘খুব কষ্ট হচ্ছে, কিছু বলার ভাষা নেই। তাকে ঘিরে আমাদের পরিবারের কতো স্মৃতি। কতো আনন্দের মুহূর্ত! কিছু বলতে পারছি না। গভীর শোক এবং শ্রদ্ধা জানাই।’ নায়ক ওমর সানী বলেন, ‘‘চলে গেলেন আমাদের সবার প্রিয় অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান ওস্তাদ। মহান আল্লাহ আপনাকে জান্নাত দান করুন। আমার অভিনীত ‘চাঁদের আলো’ থেকে শুরু করে যে সহযোগিতা আপনি করেছেন, আমি সারাজীবন ভুলবো না ।’

এদিকে এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুর খবরে শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস)-সহ সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো। ফেসবুক পরিণত হয়েছে ভার্চুয়াল শোকবইয়ে।

এস এ হক অলীক শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকালে হাসপাতাল থেকে খানিক সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। সবার মনে ফিরিয়েছেন স্বস্তি। রাত পোহাতেই সেই কিংবদন্তি ফিরে গেলেন না ফেরার দেশে।

শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টার খানিক আগে পরিবারের সদস্যরা মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হন। ধারণা করা হচ্ছে শনিবার ভোরে পুরান ঢাকার সূত্রাপুর নিজ বাসভবনে পরিবারের সদস্যদের অজান্তে কোনও এক সময় না ফেরার দেশে পাড়ি জমান দেশের অন্যতম এই অভিনেতা।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

/এম/এমএম/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
অবশেষে মুক্তির বার্তা
অবশেষে মুক্তির বার্তা
হলিউডের প্রস্তাব ফেরালেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফেরালেন ক্যাটরিনা!
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জয়া
নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জয়া