X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রটে গেছে তোর মুখ  

কবির হুমায়ূন
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:২৪

ও আমার জুঁই

ঘাসের শিশিরে রেখে এসেছি প্রেমের অশ্রু, আর

ফড়িংয়ের ডানায় বুকটান হাহাকার। তুমি

সেই সুপুরিদানার ফুল, রোজ রাতে অথবা দুপুরে

পায়ের সঙ্গে পা, আঙুলে আঙুল, টেবিলের তল

ছুঁয়ে নাভিকুণ্ডে রেখা আঁকা, জোঁকের চুম্বক টানে

আরশ কাঁপানো স্পর্শে স্তনের নরম, আহা সেই

হারিকেন ভাঙা চাপা অন্ধকারে দাদির বকুনি,

সব মনে পড়ে, সব মনে আছে, ও আমার জুঁই।

 

রাতে, বিছানার কঠিনে নরক শূন্যতা আগলে—

যে বিবর পাড়ি দেয়া গেল, সে আমাদের করুণ

প্রহর। পুকুরজলে রাজহাঁস রাজহাঁস খেলা,

সেও ছিলো তীব্র বাসনার গন্ধমাখা তপ্ত সুর।

বিকারে আকারে সময় সঞ্চয় সব বুঝি শেষ,

জুঁই; আয় না আবার ফেরাই সে পুরনো আবেশ।



আজন্মের অসুখ

আন্তা পেতে বাসনার প্রহর হয় না শেষ। জানে—

কাঠি ছাড়ানো শুকাতে দেওয়া পাটের আঁশ। জানে—

উঠোনের শেওলা। দখিন দুয়ারে রাক্ষস হাসি

সব কেড়ে নিলে—জোরা-কাটা জলের জোয়ারে ভেসে

যায় লালারস। তাহলে কোথায় রাখি লালটকা

আমাদের খাবলা স্মৃতির স্পর্শ। সোঁদা গন্ধে দম

আটকানো এ তালুর ক্ষত—পৃথিবীর কোন অন্ধ

গহ্বরে আড়াল রাখি? কোন সে অচেনা অন্ধকারে।

 

বিরুলিরা এসেছিল। বহুরঙ ঝাঁকে ঝাঁকে। আন্তা

রেখে আমিও নিয়েছি চোখবন্ধ ঘ্রাণ। ধুদুলের,

লাউয়ের, রেণুমাখা খরখরা ত্বকে—ছোঁয়া রেখে

শিউরে উঠতে উঠতে নিয়েছি ক্ষরণের সুখ।

আমারে আমার ঘোরে পার হতে দাও ও আমার

রেণু, এ আমার লেখা-উল্কির আজন্মের অসুখ।



জ্বর করেছে মা

পুড়ে যাওয়া জ্বরের ঘোরে মাকে খুঁজি। দাওয়ায়

কাঁথার চাঁদরে কুণ্ডলি পাকিয়ে পড়ে আছে এক

হেরম্ব পাথর। উনুনে ভাসছে ভাপ দেয়া বিনি

ধানের সুবাস। ওইখানে হারলের ফাঁদ জলে

কে তুমি কেতুকি সুন্দর? কে তুমি উজান বাতাসে

রেশম উড়িয়ে ধেয়ে যাও নাভির গভীরে? জ্বর

করেছে ও মা! কাঁকর সরাতে সরাতে জ্বলে-পুড়ে

ছাই যে শরীর—তারে আমি কোন আড়ালে লুকাই?

 

ভাপ ওঠা ধোঁয়ায় মা তোমার কাঠিন্য থিকথিক

করে। ওরে আমি গুলতি মেরেও সরাতে পারি না।

ওরে আমি লাটিম গুঁতোয় বশ মানাতে পারি না।

ওরে তুমি পানের বাটায় চেপে থেতলে মারো মা!

রেশম বিভ্রমে ঘুম-স্বপ্নে নিঠুর জীবন পার,

কে দেবে আমায় আবার আপন জীবনটা ধার!



অথচ সেলিনি

শতবর্ষেও মোছে না। তৃণপত্রে, ধুলোয়, শাখায়,

চিহ্নগুলো গেঁথে থাকে তোমার। হরিণাকুণ্ডে রেখে

আসা পাইথন কখনো চাইনি ফিরে, ক্রোধেও না।

বিব্রত বোধের কাছে বারবার বলেছি—চাই না।

ক্ষরণের গলাটিপে চিৎকারে বলেছি—চাই না।

আলাভোলা হয়ে গিয়ে—ধসে গেছি, ক্ষয়ে গেছি—নাই

বলে কিছু নাই, শিহরন নাই শিরায়। তবুও

পাপারাতজি পাপারাতজি ফোকাসে ভাসাও পথ।

 

পথও তো ভুলে গেছি। হরতাল, কার্ফু, ধর্মঘট—

মনে নেই কিছু। বৃষ্টি, রোদ, নৌকার গলুই, খোলা

স্তনের স্থাপত্যে খোদাই তিলের ফোঁটা—কিচ্ছু মনে

নেই আমার। খোদার কসম তোমার—মনে নেই।

অথচ সেলিনি আমায় পাড়িয়ে ঘুম কাটে হুল,

অথচ তুঙ্গের টাইফুন জলরঙে আঁকে ভুল।



কার লাগি কান্দো মন

কার লাগি স্তব্ধ হয়ে পার করো অযুত বছর,

সে তোমার কোন পাষাণের কোন নিঠুর স্তব্ধতা!

মসৃণ পিচ্ছিল উপত্যকা থেকে ফসকে যাওয়া

উল্কাপিণ্ড—কার মৈথুনে রক্তাভ হয়! নীল শিরা

শিহরনে কাঁপতে কাঁপতে কাতর ঘুমায় পাশে?

ফেটে যাওয়া পাহাড়, কষ্ট শুষে তন্দ্রায় নিমগ্ন,

ওগো দ্বিখণ্ডিত স্থিরতা, তুমুল পরাজয়ে ওই

বিলুপ্ত বাগানে সবটাই খোদাই রয়েছে জেনো।

 

লালা, শ্লেষ্মা, উত্তপ্ত নিঃশ্বাস, নখের চিকন সুঁই,

তির্যক পথের কামার্ত অপেক্ষা, ওগো আলিঙ্গন—

তির তির ভেসে যায় নীল নীল মেঘ, নীল মধ্য

দুপুর কখনো ফিরবে না আর। কখনো না আর!

তবু কার লাগি কান্দো মন, তুমি কার লাগি কান্দো,

তবু কার লাগি সব হারিয়ে মনকে তুমি বান্ধো?



সাইনিরাস ক্রোধ

প্রলম্বিত নয় পথ। বাঁকে প্রশ্ন থাকে। চোখ বন্ধ

আকাশে আকাশে ছড়ালে সাইনিরাস ক্রোধ, তোকে

কোথায় লুকাই? বৃক্ষ তো হয়েছিলাম! আগুনের

হল্কায় বাকল পোড়া ছাই—ত্রিনিদাদ গৃহে রাখা।

আর কিছু নাই। ইলিশ চোখের মণি হারিয়েছি

কৌটাসহ। ভাঁটফুল যেন মেলে যাওয়া যোনির

স্মৃতি—তামার তালুকে ফসিল হয়েছে। আর সব

সুখের সানাই—বায়ু জলে মিশে জটিল পারদ।

 

দানবের প্রসাদেও থাকে পথেরই চিহ্ন। খোঁজে

শিরীষ কুসুম। পিতলের কলসি জড়িয়ে ভাসে

ডাকাতিয়ায়, তিনুর চরে। হাহাকার ছাড়া যেন

মানবের কিছু নাই। থাকেও না তিমির সন্ধ্যায়।

নাকে, কানে, গলার হাঁসুলিতে যে প্রলম্বিত স্মৃতি—

পথে পথে কে সাজায় তারে সাজবাতির মায়ায়!

/জেডএস/
সম্পর্কিত
প্রিয় দশ
দোআঁশে স্বভাব জানি
প্রিয় দশ
সর্বশেষ খবর
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
লিভারপুলের নতুন কোচ স্লট!
লিভারপুলের নতুন কোচ স্লট!
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে: ওবায়দুল কাদের
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে: ওবায়দুল কাদের
লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২
লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!