X
বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫
২৫ আষাঢ় ১৪৩২

শেখ কামাল ও বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন

তানজীম আহমেদ
০৫ আগস্ট ২০২০, ১০:০০আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২০, ২০:০৩

শেখ কামাল, ছবি- ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে প্রায় চার বছরের ক্যারিয়ার ছিল তার। এই সময়ের মধ্যে আলোকিত মানুষ হিসেবে চারদিকে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামাল। স্বাধীন বাংলাদেশে ক্রীড়াঙ্গনে বিপ্লব ঘটে যায় তারই ভূমিকায়। কী করেননি? দেশের খেলাধুলায় আধুনিকতার ছোঁয়া এনেছেন। দেশের তরুণ প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন আকাশচুম্বী সাফল্যের দিকে ধাবিত হতে। এক আবাহনী ক্লাবই সেই সময়ের বড় প্রমাণ। একটি আধুনিক ক্লাব সৃষ্টি করে পথ দেখিয়েছেন অন্যদের। যার প্রভাব পড়েছিল দেশের সকল স্তরের খেলাতেও।



একজন ব্যক্তি মাত্র ২৬ বছর বয়সে দারুণ সব কীর্তি রেখে গেছেন। নিজে খেলোয়াড় ছিলেন। খেলেছেন ফুটবল, ক্রিকেট, বাস্কেটবল ও ভলিবল। খেলোয়াড় থাকা অবস্থায় দৃষ্টি দিয়েছেন দেশের খেলাধুলার মান উন্নয়নেও। তাই তো সংগঠক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সময় লাগেনি। ইকবাল স্পোর্টিং থেকে আবাহনী ক্রীড়া চক্রের সৃষ্টি- আধুনিক ক্লাব, আধুনিক সব চিন্তাধারা।

সেই সময়ে আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন হারুনুর রশীদ। তিনি আবার আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদকও। তার সঙ্গে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব ছিল শেখ কামালের। তার কথায় উঠে এলো সেই দিনগুলো, ‘শেখ কামাল ছিল বহুমাত্রিক চরিত্রের অধিকারী। সব ধরণের খেলার সঙ্গে সে সম্পৃক্ত ছিল। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবল ও ভলিবলসহ অন্য খেলাও খেলতো। এর মাঝে এই খেলাগুলোকে নতুন দেশের আদর্শ হিসেবে পরিচিতির জন্য সে কাজও করেছে। উন্নত দেশের মতো করে আধুনিকভাবে সবকিছু করার চেষ্টা করেছে। সবাইকে বলতো, পুরনো ধাঁচের খেলা চলবে না। নতুন করে কিছু করতে হবে।’


এরপরেই এই সংগঠক বললেন কী করে পরিবর্তনের শুরুটা হলো ক্রীড়াঙ্গনে, ‘শেখ কামাল বলেছিল, আমি বিদেশি কোচ আনবো, বিদেশি সরঞ্জাম আনবো। বুট-জার্সি যা যা দরকার আনবো। বল-ব্যাট এনে শেখাবো। সেই কথা অনুযায়ী ৭৪-এ ফুটবল কোচ হিসেবে বিল হার্টকে এনে সে চমক দেখায়। আবাহনীতে ছেলেরা ওয়ান টাচ, টু টাচ খেলে এক মাসের মধ্যে তা রপ্তও করে ফেলে। আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে তখনই। তরুণ প্রজন্ম আবাহনীর দিকে ঝুঁকে পড়ে। এমনকি যারা ফুটবলবোদ্ধা তারাও আনন্দ পেলো। একটু একটু করে আবাহনীর প্রতি ঝোঁক বাড়তে লাগলো।’


শেখ কামালের গড়ে দেওয়া পথেই চলেছে আবাহনী। যার মাধ্যমে পুরো দেশকে একটি বার্তাই দিতে চেয়েছে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। হারুনুর রশীদের কথায়, ‘আবাহনীর মাধ্যমে আমরা সারা দেশে একটি বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাই- আদর্শ খেলা, আদর্শ মাঠ, আদর্শ ক্লাব। সকল খেলোয়াড়কে চরিত্র গঠনের সুযোগ করে দেবো খেলার মাধ্যমে। সেই লক্ষ্যে শেখ কামালের নেতৃত্বে সবাই কাজ করেছে। সেই সময় ফরিদপুর ও খুলনায় আবাহনীর শাখা হয়েছে। এছাড়া তার মৃত্যুর পরে ৮৪টি শাখা করে শেখ কামাল যা চাইতেন তা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।’


যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে খেলাধুলার প্রচলনের জন্য তখন সরকার প্রধান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানও কম ছিল না। হারুনুর রশীদ বলছিলেন, ‘যুদ্ধ শেষ। সকলেই তরুণ, যুদ্ধের পর শেখ কামালসহ আমরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করি। খেলার মাঠগুলো যদি ঠিকঠাক করে দেওয়া যায়, খেলোয়াড়দের রাষ্ট্রীয়ভাবে সুযোগ-সুবিধা করে দেওয়া হলে তরুণ প্রজন্ম খেলার মাঠে আসবে। খেলার মাঠ ও পড়ার টেবিলে থাকবে তারা। এরাই একসময় ভবিষ্যতে দেশ চালাবে। তখন বঙ্গবন্ধু আমাদের অনেক সহায়তাই করেছেন।’
১৯৭২ সালে আবাহনী ক্রীড়া চক্র সৃষ্টি হলেও শেখ কামাল কোনও পদে ছিলেন না। বাইরে থেকে কাজ করতে পছন্দ করতেন। শেষের দিকে ১৯৭৫ সালে সবার অনুরোধে হয়েছিলেন ক্লাব সভাপতি। অথচ নিজের ক্যারিয়ারে খেলাধুলার জন্য যা করে গেছেন, তা আজও আদর্শ-অনুকরণীয়। শুধু আবাহনী নয়, অন্য ক্লাবের দিকেও ছিল তার দৃষ্টি। অন্য ক্লাবগুলোও যেন ভালো করে, সেদিকেও অনেক জোর দিয়েছেন।

সেই মানুষটির সঙ্গেই ধানমন্ডিতে বসবাসের সূত্র ধরে হারুনুর রশীদের পরিচয় ১৯৬৮ সাল থেকে। তারপর বন্ধুত্ব হতেও সময় লাগেনি। সেই স্মৃতির কথা তুলে হারুনুর রশীদ বলেছেন, ‘কামাল সাড়ে তিন বছরে ক্রীড়াঙ্গনে বিভিন্ন কিছু উপহার দিয়ে গেছে। আধুনিক সবকিছু। কামাল যা দিয়ে গেছে, তা দিয়েই আমরা এই পর্যন্ত চলে এসেছি। সে চেয়েছিল ক্রীড়া ক্ষেত্রে ১০ বছরের মধ্য এশিয়ান মানে পৌঁছতে। তার আদর্শে কিন্তু বর্তমানে ক্রিকেট সেই পর্যায়ে পৌঁছেছে। অন্য খেলাগুলো কম বেশি এগিয়েছে।’


একই কথা বলেছেন শেখ কামালের বাল্যবন্ধু বর্তমানে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজাও, ‘শেখ কামাল বেঁচে থাকলে আমরা আজ অলিম্পিকে অংশ নিয়ে পদকও পেতে পারতাম। ওই পর্যায়েই আমরা চলে যেতাম। এখন কমনওয়েলথ গেমসে পদক এসেছে। আমরা সেখানে ভালো করছি। এসএ গেমসেও ভালো ফল করেছি।’


শেখ কামাল বেঁচে থাকলে পুরো ক্রীড়াঙ্গনের চেহারাই যে বদলে যেতো, তা এখনও বিশ্বাস করেন বিওএ’র এই কর্মকর্তা, ‘তার যে চিন্তাধারা ছিল, যেভাবে কাজ করছিল, তাতে পুরো ক্রীড়াঙ্গনের অনেক এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হতো। ওই সময় সে খেলাধুলাকে একটা পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। ৭৫ পর্যন্ত তো অনেক এগিয়ে গিয়েছিল। সে জীবিত থাকলে সত্যিই ভালো হতো।’



 
/এফআইআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে আলাপ হয়েছে: নেতানিয়াহু
জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে আলাপ হয়েছে: নেতানিয়াহু
সমুদ্রে ভেসে যাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
সমুদ্রে ভেসে যাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে চীনা শ্রমিকের মৃত্যু
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে চীনা শ্রমিকের মৃত্যু
সালমান-আনিসুলসহ নতুন মামলায় গ্রেফতার ৯
সালমান-আনিসুলসহ নতুন মামলায় গ্রেফতার ৯
সর্বাধিক পঠিত
৩ দাবিতে বুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
৩ দাবিতে বুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
‘সুড়ঙ্গ’, ‘দাগি’, ‘তাণ্ডব’ পেরিয়ে ‘দম’
‘সুড়ঙ্গ’, ‘দাগি’, ‘তাণ্ডব’ পেরিয়ে ‘দম’
ভেঙে ফেলা হচ্ছে ‘বিজয় চত্বর’, হবে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’
ভেঙে ফেলা হচ্ছে ‘বিজয় চত্বর’, হবে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’
মিয়ানমারের বিরল খনিজ ঘিরে চীনের হুমকি
মিয়ানমারের বিরল খনিজ ঘিরে চীনের হুমকি
হাউজ লোন ও ক্রেডিট কার্ড ঋণের সীমা বাড়ছে
হাউজ লোন ও ক্রেডিট কার্ড ঋণের সীমা বাড়ছে