X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

চসিক নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
২৭ জানুয়ারি ২০২১, ০৮:০৬আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২১, ০৮:৩২

একদিকে করোনা মহামারি, অন্যদিকে সংঘাতের আশঙ্কা—এই দুই চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বুধবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়; যা একটানা চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান।

এদিকে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশ্বাস দিলেও ভোট নিয়ে শঙ্কায় আছে বিএনপি। দলটির নেতাকর্মীদের দাবি, প্রশাসন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে। পাশাপাশি ভোট কারচুপির অভিযোগও তুলেছেন তারা। অন্যদিকে, বিএনপি ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে—এমন শঙ্কায় আছে আওয়ামী লীগ। নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়েও তাদের মধ্যে রয়েছে উৎকণ্ঠা। তবে ভোটের দিন কোনও সহিংসতার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার। বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করে সেগুলোতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভোট নিয়ে যে উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল, তা কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তা ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ডে বিলীন হয়ে গেছে। পুলিশ আমাদের দলীয় কর্মী, এজেন্টদের গ্রেফতার করে হয়রানি করছে। আমার ৫৭ জন এজেন্টকে তারা গ্রেফতার করেছে। ভোট নিয়ে আমরা আতঙ্কে আছি।’

 আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, ‘বিএনপি জনরায়কে ভয় পায়। তাই তারা নানা অজুহাতে নির্বাচনকে বানচাল করতে চায়। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। প্রচারণাকালে তারা আমাদের পোস্টার ছিঁড়ে দেয় এবং নির্বাচনি অফিস ভাঙচুর করে। এমনকি আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে চেয়েছিল তারা । কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীরা তাদের পাতানো ফাঁদে পা দেয়নি। এখন উল্টো ভিত্তিহীন নানা অভিযোগ তুলে নির্বাচন বানচালের শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন।’

২০২০ সালের ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ষষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় নির্বাচনের আট দিন আগে তা স্থগিত করা হয়। এরপর পরিস্থিতির উন্নতি বিবেচনায় ২৭ জানুয়ারি ভোটের দিন ঠিক করে নির্বাচন কমিশন। এবার মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিএনপির দুই প্রার্থীর বাইরে আরও ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্য প্রার্থীরা হলেন এনপিপি’র আবুল মনজুর (আম), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন (মোমবাতি), স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী (হাতি), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ (চেয়ার) এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম (হাতপাখা)।

এদিকে, ৪১টি সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৪টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন ২৩৭ জন। এবার ৪১টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডের প্রার্থী তারেক সোলেমান সেলিম মারা যাওয়ায় সেখানে কাউন্সিলর নির্বাচন হবে না। তবে ওই ওয়ার্ডে মেয়র পদে ভোটগ্রহণ হবে।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপি প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন অন্যদিকে, ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত হারুন অর রশিদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাই এই ওয়ার্ডেও এবার কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হচ্ছে না। তাই বুধবার (২৭ জানুয়ারি) নগরীর ৩৯টি ওয়ার্ড নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই ৩৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৪টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

স্থানীয় জনগণ জানিয়েছে, নির্বাচনের দিন এসব ওয়ার্ডে সহিংসতা হতে পারে। তাই এলাকার সাধারণ মানুষ শঙ্কিত। তবে এই শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ।

সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘৭৩৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে ৪১৭টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত। এইসব কেন্দ্রের নিরাপত্তায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে অস্ত্রধারীসহ ছয় জন করে পুলিশ সদস্য ও ১২ জন করে আনসার সদস্য মোতায়েন থাকছে। আর এর বাইরে সাধারণ কেন্দ্রে অস্ত্রধারীসহ চার জন পুলিশ ও ১২ জন করে আনসার সদস্য রয়েছেন। এ ছাড়া, কেন্দ্রের বাইরে টহল পুলিশ, সাদা পোশাকের পুলিশ ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকছেন নগর পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটের বোম ডিসপোজাল ইউনিট, কাউন্টার টেরোরিজম ও সোয়াট সদস্যরা। তাই আশা করছি, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।'

 এবার ভোটার সংখ্যা ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩। নারী ভোটার ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন। এবার ৭৩৫টি ভোট কেন্দ্রের ৪ হাজার ৮৮৬টি ভোট কক্ষে এই ভোটাররা ভোট প্রদান করবেন। ভোট গ্রহণে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ৭৩৫ জন, সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এক হাজার ৪৭০ জন এবং দুই হাজার ৯৪০ জন পোলিং ও কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন।

অন্যদিকে, নিরাপত্তার দায়িত্বে মোট ১৮ হাজার পুলিশ ও আনসার সদস্য নিয়োজিত আছেন। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে র‌্যাবের সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। ২৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি ২০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৬৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে কাজ করছেন।

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
একযুগ পর দলছুট, সঙ্গে সঞ্জীব চৌধুরী
একযুগ পর দলছুট, সঙ্গে সঞ্জীব চৌধুরী
সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো বাঘ, নিয়ে গেলো গহীন বনে
সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো বাঘ, নিয়ে গেলো গহীন বনে
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
দুই জনপ্রতিনিধির নাম বলে সাভারে সাংবাদিকের ওপর কেমিক্যাল নিক্ষেপ
দুই জনপ্রতিনিধির নাম বলে সাভারে সাংবাদিকের ওপর কেমিক্যাল নিক্ষেপ
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি