X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

পিকে হালদার কাণ্ডে যে ৮৩ জনকে নিয়ে তদন্ত করছে দুদক

বাহাউদ্দিন ইমরান
২৩ জানুয়ারি ২০২১, ২২:৫৯আপডেট : ১৭ মে ২০২২, ১২:০৪

প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট এবং বিদেশে পাচারের অভিযোগ নিয়ে কানাডায় পালিয়ে আছেন আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার)। বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনকালে এই অর্থপাচারের ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এই ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) সঙ্গে অর্থপাচারে জাড়িয়ে পড়ায় সন্দেহভাজন ৮৩ জনের তালিকা করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তালিকায় আসা সেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রিলায়েন্স ফাইন্যান্স এবং পরে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন পিকে হালদার। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) প্রভৃতি।

বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগ পেয়ে পিকে হালদারের বিষয়ে শক্ত অবস্থানে হাইকোর্ট। তাকে গ্রেফতার করতে ইতোমধ্যে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)। বসে নেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যক্রমও।

এরইমাঝে পিকে হালদারের সঙ্গে অর্থপাচারে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে সন্দেহভাজন ৮৩ জনের তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করেছে বিএফআইইউ। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পি কে হালদারের সহযোগী সন্দেহজনক ৮৩ ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ আছে। পি কে হালদার ও তার ৮৩ সহযোগী ৪৩টি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দিয়ে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছে।

বিএফআইইউ’র ওই তালিকায় নাম আসা সন্দেহভাজন ৮৩ ব্যক্তি হলেন- প্রণবেন্দু হালদার ও লীলাবতি হালদারের সন্তান প্রশান্ত কুমার হালদার, গুলশানের আ. ফয়েজ মুজিবর রহমানের দুই ছেলে রেজাউর রহমান ও মিজানুর রহমান এবং মেয়ে সৈয়দা রুহি গজনভী, গুলশানের সায়েদুর রহমান খানের ছেলে  এম. নুরুল আলম, বনানী ডিওএইচএস’র শামসুল আলমের ছেলে মো. নওশের উল ইসলাম, তার স্ত্রী মমতাজ বেগম, বনশ্রীর বিমলাংশু চৌধুরী আশুতোষ চৌধুরী, বনশ্রীর নারায়ণ জুমদারের স্ত্রী উৎপল মজুমদার, বনানী ডিওএইচএস’র বসুদেব ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী পাপিয়া ভট্টাচার্য, পিকে হালদারের ভাই প্রিতিশ কুমার হালদার ও তার স্ত্রী সুস্মিতা সাহা, বগুড়া ক্যান্টনমেন্টের কাজী মমরেজ মাহমুদ ও তার স্ত্রী আফরোজা সুরাইয়া মজুমদার, ঝালকাঠি রাজাপুরের প্রশান্ত দেউরি, গেন্ডারিয়ার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, উত্তরার স্বপন কুমার মিস্ত্রি ও তার স্ত্রী পূর্নিমা রানী হালদার, মিরপুরের অমিতাভ অধিকারী, লালমাটিয়ার রাজিব সোম ও তার স্ত্রী শিমু রায়, পিরোজপুরের রতন কুমার বিশ্বাস।

আরও আছেন গ্রীন রোডের ওমর শরীফ, কুমিল্লার বরুড়ার উজ্জ্বল কুমার নন্দী ও তার স্ত্রী অনিতা কর, উত্তরার উজ্জ্বল মল্লিক, নড়াইল লোহাগড়ার মোস্তাইন বিল্লাহ, পিরোজপুরের শাহ আলম শেখ, অনঙ্গ মোহন রায়, উত্তরার সোমা ঘোষ, বরিশাল বাকেরগঞ্জের অমল চন্দ্র ঘোষ, গাজীপুর কালিগঞ্জের সুবেদ কুমার ভৌমিক, নড়াইলের শেখ মইনুল ইসলাম মিঠু, সঞ্জীব কুমার হালদার, উত্তরার সুব্রত দাশ ও তার স্ত্রী সুভ্রা রানী ঘোষ, রামপুরা হাজিপাড়ার তোফাজ্জ্বল হোসেন, পিরোজপুরের স্বপন কুমার মিস্ত্রির ভাই উত্তম কুমার মিস্ত্রি, উত্তম কুমার মিস্ত্রির স্ত্রী অতশী মৃধা, গোপাল চন্দ্র গাঙ্গুলী এবং মোহাম্মদ আবু রাজিব মারুফ।

সন্দেহভাজনদের মধ্যে আরও আছেন- বাগেরহাট চিতলমারীর শঙ্খ ব্যাপারি (বর্তমানে গ্রেফতার), রাম প্রসাদ রায়, ইরফান উদ্দীন আহমেদ, শাহনাজ বেগম, জামিল মাহমুদ, ইমাম হোসেন, ধানমন্ডির অভিজিত অধিকারী, সুকুমার সাহা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধা, ফেনী সদরের একেএম শহীদ রেজা, শওকত রেজা, জোবেদা বেগম, নাহিদ রেজা, একেএম হারুন অর রশিদ, মো. মোশাররফ হোসেন ভূইয়া, মো. শাহাদাত হোসেন, জামাল উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী, রাম প্রসাদ, শাহ্ আবরার ফাইয়াজ, মো. দেলওয়ার হোসেন, মিলন কুমার দাশ, পিরোজপুর সদরের অমল কৃষ্ণ দাস, বাগেরহাট মোড়লগঞ্জের মশিউর রহমান, পিরোজপুর সদরের সাব্বির আহমেদ, মো. মনিরুল ইসলাম, আসমা সিদ্দিক, কাজী মাহজাবিন মমতাজ, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. সোলায়মান চৌধুরী, মো. কামরুজ্জামান, নিকুঞ্জের মো. ইকবাল সাইদ, সিরাজগঞ্জ বেলকুচির অরুন কুমার কুন্ডু, মো. সিদ্দিকুর রহমান, মাহফুজা রহমান বেবী, ইনসান আলী শেখ, হাফিজা খানম, এনএম পারভেজ চৌধুরী, প্রশান্ত কুমার হালদারের মা লীলাবতী হালদার, অবন্তিকা বড়াল (বর্তমানে গ্রেফতার), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ঝারামপুরের মো. রেজাউল করিম এবং জেকে ট্রেড ইন্টারন্যাশনালে সত্ত্বাধিকারী ইরফান আহমেদ খান।

দুদক আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পি কে হালদারের ঘটনায় সন্দেহভাজন ৮৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত চলছে। এর বাইরে নতুন করে কাউকে যুক্ত করা বা বাদ দেওয়া হয়েছে কিনা, তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। দুদকের চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি হাতে পেলে এ বিষয়ে বলা সম্ভব হবে। দুদকের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জেনেছি।‘

দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন জানান, ‘পিকে হালদারের অর্থপাচারের সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, পর্যায়ক্রমে তাদের সবার বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে শঙ্খ ব্যাপারি, অবন্তিকা বড়াল, সুকুমার সাহা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

 

/এফএস/
সম্পর্কিত
১৫২২ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হবে পি কে হালদারসহ ১৪ জনকে
আদালতের পর্যবেক্ষণযারা বিদেশে অবৈধভাবে সেকেন্ড হোম গড়েছে তারা দেশকে ভালোবাসে না
অবৈধ সম্পদ অর্জনপি কে হালদারের ২২ বছর কারাদণ্ড
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রধান বিচারপতির সাক্ষাৎ
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রধান বিচারপতির সাক্ষাৎ
কেনাকাটার একাল-সেকাল
অনলাইন শপিংকেনাকাটার একাল-সেকাল
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ‘ইন্ডিয়া-আউট’ ক্যাম্পেইন: বাস্তবতা ও সম্ভাব্য ফলাফল
বিএনপির ‘ইন্ডিয়া-আউট’ ক্যাম্পেইন: বাস্তবতা ও সম্ভাব্য ফলাফল
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের