X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

চিকিৎসা সেবার জন্য আয় থেকে সঞ্চয় জরুরি

রিয়াজুল হক
২২ জানুয়ারি ২০২১, ১৬:৪৭আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২১, ১৬:৪৭
আমার এক বন্ধু সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার। পাশাপাশি একটি প্রাইভেট ক্লিনিকেও রোগী দেখে থাকেন। কনসালটেন্সি ফি নতুন রোগী ৫০০ টাকা এবং পুরাতন রোগী ৩০০ টাকা। জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন রকমের রোগীরা আসেন। এক-দেড় বছর পর হয়তো একজনের জ্বর হয়েছে। ডাক্তারের কাছে এসেছে। আসার সময় ডাক্তার বন্ধুর সামান্য পরিচিত কিংবা দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের কোনও ধরনের পরিচিত এমন একজনের রেফারেন্স নিয়ে চলে আসেন। মূল উদ্দেশ্য ভালো সেবা পাওয়া নয়, মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ভিজিট কম দেওয়া। মাঝে মাঝে এরকম রোগী এলে সমস্যা হয় না। কিন্তু দেখা যায়, দিনের মধ্যে প্রায় অর্ধেক রোগী এরকম রেফারেন্স নিয়ে তার কাছে আসে। আমার সেই ডাক্তার বন্ধু যেহেতু প্রাইভেট ক্লিনিকে প্র্যাকটিস করেন, তাই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বন্ধুকে বেশ কয়েকবার বলেছে, এত রেফারেন্সের রোগী এলে আমাদের তো কিছুই থাকে না। ডাক্তার বন্ধু কথাগুলো বলছিলেন আর হাসছিলেন। কোনোদিন যাদের দেখিনি, তাদের রেফারেন্সও চলে আসে প্রতিদিন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে যারা ডাক্তারের ফি দিতে গিয়ে কার্পণ্য দেখান, তাদের কি আসলেই আর্থিক অসচ্ছলতা রয়েছে নাকি কম দিতে পারলেই নিজেকে অনেকটা বিজয়ী ভাবতে পছন্দ করেন?

আমাদের মৌলিক চাহিদাগুলো হচ্ছে, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, চিকিৎসা ব্যতীত বাকি চারটি মৌলিক চাহিদা পূরণ করার জন্য আমাদের প্রতি মাসে খরচের আলাদা খাত থাকে।

উদাহরণ দিলে বিষয়টা আরও পরিষ্কার হবে।

ধরুন, আপনি প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা বেতন পান। এখান থেকে ৫ হাজার টাকা বাবদ বাসা ভাড়া দিচ্ছেন,  নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর জন্য ৬০০০ টাকা, সন্তানদের শিক্ষা ব্যয় এবং প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড় বাবদ মাসে ৬০০০ টাকা খরচ করছেন। এরপর তিন হাজার টাকা যা অবশিষ্ট থাকে, সেটা সঞ্চয় করছেন। কিন্তু আমরা অনেকেই চিকিৎসা নামক মৌলিক চাহিদার কথা মনে রাখি না। যে কারণে চিকিৎসা সেবার জন্য আমরা আমাদের আয়ের কোনও টাকা আলাদাভাবে বরাদ্দ রাখি না। অথচ আমরা যেকোনও সময় অসুস্থ হতে পারি, যা আগে থেকে অনুমান করা সম্পূর্ণ অসম্ভব।

চিকিৎসা ব্যয় বাবদ যে খরচ আমাদের হতে পারে, সেটা অনেকেরই বিবেচনার বাইরে থাকে। যারা সামান্য বেতনে চাকরি করেন কিংবা আয় সীমিত বা নির্ধারিত, তাদের এই চিকিৎসা ব্যয়ের বিষয়টি সবসময় বিবেচনায় রাখা উচিত।

ভবিষ্যতে যদি কখনও পরিবারের কোনও সদস্যের অসুখ-বিসুখ ধরা পড়ে, তখন ডাক্তার, ওষুধ, হাসপাতালের ব্যয়ের জন্য আপনাকে প্রতিমাসের সঞ্চয়ের সেই তিন হাজার টাকা থেকেই খরচ করতে হয়। অনেকেই আবার সঞ্চয়ের পুরো টাকা দিয়ে ডিপিএস করে থাকেন। অনেকের হাতে নগদ টাকা থাকে না। যে কারণে হঠাৎ করে চিকিৎসায় ব্যয়ের জন্য টাকার প্রয়োজন হলে, অন্যের কাছ থেকে ঋণ নিতে হয়। যেটা অনেক সময় আর্থিক অনটনের কারণ হয়।

এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের মাসিক খরচের পরিকল্পনায় একটু পরিবর্তন আনা উচিত। প্রশ্ন হতে পারে, সেটা কীভাবে?

উপরের উদাহরণ থেকে বুঝতে পারলাম, প্রতিমাসে আপনি ১৭ হাজার টাকা খরচ করে থাকেন। এই খরচের সঙ্গে প্রতি মাসে অন্তত ৫০০ টাকা কিংবা ১০০০ টাকা আপনি চিকিৎসার জন্য আলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে পারেন। এরপর বাকি টাকা আপনি সঞ্চয় করুন। প্রতি মাসে চিকিৎসা খরচ যদি আপনার নাও হয়, তবু আপনি চিকিৎসার জন্য সংরক্ষিত টাকা অন্য কোনও খাতে খরচ করবেন না। এই টাকা চিকিৎসা খরচ হিসেবেই বিবেচনা করুন এবং আলাদাভাবে রেখে দেন। যদি টাকা খরচ না হয়, ছয় মাস পর আপনি চিকিৎসার খরচের টাকা সঞ্চয়ী হিসাবে জমা রাখতে পারেন। যখনই দরকার হবে, সেই টাকা তুলে নিয়ে চিকিৎসার খরচ বহন করবেন।

এতে অনেক সময় ছোটখাটো চিকিৎসা ব্যয়ের জন্য বাড়তি আর্থিক চাপ তৈরি হবে না, কারও কাছ থেকে ঋণ নিতেও হবে না। চিকিৎসার খরচের জন্য কখনও মন খারাপ হবে না। কারণ, আপনি আগে থেকেই প্রস্তুত থাকছেন, বাসা ভাড়া, খাবার খরচের মতো চিকিৎসা খরচেরও প্রয়োজন পড়বে। এর ফলে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় ভিজিট কম দেওয়ার জন্য কারও রেফারেন্স খুঁজতে হবে না।

আর চিকিৎসা সেবার জন্য আলাদাভাবে কিছু টাকা হাতে থাকলে, কিছু মানুষ নিয়মিত মেডিক্যাল চেকআপ করতেও উৎসাহিত হবেন। এতে অনেক সময় সম্ভাব্য বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হবে।
নিজেদের শারীরিক সুস্থতার জন্য চিকিৎসা সেবার বিকল্প নেই। এই চিকিৎসা সেবা ভালোভাবে নিশ্চিত করার জন্য প্রতি মাসের আয় থেকে সামান্য কিছু অংশ চিকিৎসা খাতের জন্য সঞ্চয় করা প্রয়োজন।

 লেখক: যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।  

-- 

/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চীনে মুক্তি, নতুন ইতিহাস গড়বে ‘টুয়েলভথ ফেল’?
চীনে মুক্তি, নতুন ইতিহাস গড়বে ‘টুয়েলভথ ফেল’?
ঢাকায় চীনের ভিসা সেন্টার, প্রয়োজন হবে না দূতাবাসে যাওয়ার
ঢাকায় চীনের ভিসা সেন্টার, প্রয়োজন হবে না দূতাবাসে যাওয়ার
থাইল্যান্ড ও ভারতের বক্সারকে হারিয়ে সুরো কৃষ্ণর ৬০০ ধাপ উন্নতি
থাইল্যান্ড ও ভারতের বক্সারকে হারিয়ে সুরো কৃষ্ণর ৬০০ ধাপ উন্নতি
রেকর্ড বৃষ্টির তৃতীয় দিনেও স্থবির দুবাই
রেকর্ড বৃষ্টির তৃতীয় দিনেও স্থবির দুবাই
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ