ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিনের কারামুক্তি ও সুস্থতা কামনা করে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল করেছে দলীয় নেতাকর্মীরা। বুধবার (১৩ জানুয়ারি) বিকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে রহুল আমিনের ছবি টাঙিয়ে পৌর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ব্যানারে এই আয়োজন করা হয়।
চাঞ্চল্যকর ওই মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির জন্য দোয়া মাহফিল করায় এলাকায় আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মফিজুল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই ধরনের কর্মসূচির সম্পর্কে আমি অবগত নই।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খোকন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হঠাৎ এই ধরনের কর্মসূচি কারা কেনও করেছে তা খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারবো।’
এদিকে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়ব বাবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াতুল হক বিটু, মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রবিউজ্জামান বাবু, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম ভূট্টো, মঙ্গলকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বাদল, জেলা পরিষদের সদস্য নাছির উদ্দিন আরিফ ভূঞা, চরচান্দিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম মানিক, বগাদানা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলা উদ্দিন বাবুল, আমিরাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরু মেম্বার, ইউপি সদস্য গেদু মিয়া ভূঞা, দীন মোহাম্মদ, মতিগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন টিপু এবং পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেনসহ যুবলীগ, ছাত্রলীগের বেশকিছু নেতাকর্মীরা। আলোচনা সভা শেষে দোয়া ও মিলাদ পরিচালনা করেন বাসস্ট্যান্ড মসজিদের খতিব মাওলানা মো.ওমর ফারুক।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এই ঘটনায় তার মা শিরিনা আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করলে অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলা তুলে না নেওয়ায় ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বোরকা পরা পাঁচ জন। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এবং প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হয়।
একই বছরের ২৪ অক্টোবর হত্যা মামলায় প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলা ও আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনসহ ১৬ জনের ফাঁসির রায় দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ। বর্তমানে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলাটি হাইকোর্টের আপিল বিভাগে ডেথ রেফারেন্স শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা বর্তমানে ফেনী, কুমিল্লা ও কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন। রুহুল আমিনও ফেনী কারাগারে রয়েছেন।
