X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘বিশিষ্ট’ নাগরিকদের চিঠি ও বিবৃতির রাজনৈতিক তাৎপর্য

আমীন আল রশীদ
০২ জানুয়ারি ২০২১, ১৬:৪৭আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২১, ১৬:৪৭

আমীন আল রশীদ দেশের ‘বিশিষ্ট নাগরিকরা’ সম্প্রতি দুটি ঘটনার জন্ম দিয়েছেন; ১. কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অনিয়ম তদন্তের জন্য রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছেন ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক এবং ২. জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ সুপারের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন অপর ১১ বিশিষ্ট নাগরিক। প্রশ্ন হলো, ‘বিশিষ্ট নাগরিক’-এর কোনও সংজ্ঞা আছে কিনা; কারা এই কাতারে পড়েন এবং কেন তারা ‘বিশিষ্ট নাগরিক’? দ্বিতীয়ত, নাগরিকদের দুটি ‘অংশের’ এই চিঠি ও বিবৃতির রাজনৈতিক তাৎপর্য কী এবং এর দ্বারা কারা কতটুকু লাভবান হলেন— বিশেষ করে দেশের প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ভোটের রাজনীতিতে বিশিষ্ট নাগরিকদের এই অবস্থান কতটা গুরুত্বপূর্ণ?  

ঘটনা ১:

গণমাধ্যমের খবর বলছে, নির্বাচন কমিশনের নানা রকমের আর্থিক অনিয়ম, যেমন প্রশিক্ষণ না দিয়ে প্রশিক্ষণ ভাতা তুলে নেওয়া, নির্বাচন কমিশনারদের প্রটোকলের বাইরে গিয়ে একাধিক গাড়ি ব্যবহার করা, বিভিন্ন সময় ক্ষমতার অপব্যবহার, নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে এর তদন্তের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি জানিয়ে রাষ্ট্রপতিকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেছেন ৪২ জন, যাদের প্রত্যেকেই দেশের পরিচিত মুখ এবং বিশিষ্টজন হিসেবে পরিচিত। এই ৪২ জনের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান, এম হাফিজউদ্দিন খান, সুলতানা কামাল, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, আইনজীবী শাহদীন মালিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রমুখ।

ঘটনা ২:

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনায় দেশব্যাপী যে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, তার অংশ হিসেবে একটি সমাবেশে অংশ নিয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত একটি বক্তব্য দিয়েছেন। যেখানে তিনি বলেছেন, ‘মৌলবাদীদের এ দেশে দরকার নেই। আমার বাবার জানাজা আমি নিজেই পড়াতে পারবো। আমি চারবার কোরআন খতম করেছি। নিয়মিত নামাজ পড়ি।’ ভাস্কর্য বিরোধিতাকারীদের উদ্দেশে তানভীর আরাফাত বলেন, ‘দেশের সংবিধান মেনেই আপনাকে এ দেশে থাকতে হবে। যদি সংবিধান না মানেন তাহলে আপনাদের জন্য তিনটি অপশন। এক. উল্টাপাল্টা করবেন, হাত-পা ভেঙে দেবো, জেল খাটতে হবে। দুই. একেবারে চুপ করে থাকবেন, দেশের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস নিয়ে কোনও প্রশ্ন করতে পারবেন না। তিন. আপনার যদি বাংলাদেশ পছন্দ না হয়, তাহলে ইউ আর ওয়েলকাম টু গো ইউর পেয়ারা পাকিস্তান।’

পুলিশ সুপারের এই বক্তব্যটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে অনেকে এর সমালোচনা করেন। বিশেষ করে ওয়াজ মাহফিল করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত একাধিক বক্তা পুলিশ সুপারকে পাল্টা হুমকি দেন। এ অবস্থায় ২৭ ডিসেম্বর ১১ জন বিশিষ্ট নাগরিক গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠান— যেখানে তারা বলেন, ‘এই পুলিশ কর্মকর্তা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের পক্ষেই কথা বলেছেন। ভাস্কর্য ইস্যুতে দেওয়া তার বক্তব্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও অস্ত্র হাতে লড়াই করে পাওয়া বাংলাদেশের মৌল চাওয়াগুলোকে আরও একবার স্পষ্ট করেছে। একইভাবে এসপির বক্তব্যের বিরুদ্ধে দেওয়া হেফাজতে ইসলামের বক্তব্য ও বিবৃতি তাদের একাত্তরের চেতনাবিরোধী অবস্থানকে স্পষ্ট করেছে।’ এই বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারোয়ার আলী, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ প্রমুখ।

বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্ট নাগরিক:

সমাজে যারা ‘বিশিষ্ট নাগরিক’ হিসেবে পরিচিত, তাদের অনেক সময় সুশীল সমাজ বা ইংরেজিতে ‘সিভিল সোসাইটি’র সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আবার বাংলায় যেটি সুশীল সমাজ, অনেকে সেটিকে পুরসমাজ, অরাষ্ট্রীয় সমাজ, জনসমাজ, লোকসমাজও বলে থাকেন। তবে হালে বেশি প্রচলিত নাগরিক সমাজ। ২০০৭-০৮ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারে এই নাগরিকদের একটি অংশ যুক্ত ছিলেন। ফলে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে নির্বাচন, গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতাসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে কারও বক্তব্য সরকার বা সরকারি দলের বিরুদ্ধে গেলে তাদের ‘সুশীল’ বলে টিপ্পনি কাটা হয়েছে।

বস্তুত বুদ্ধিজীবী তাকেই বলা হয় যিনি দলমত নির্বিশেষে সবার শ্রদ্ধার পাত্র এবং তিনি যখন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কোনও কথা বলেন, সেটি সরকার ও সরকারবিরোধী— উভয় পক্ষই আমলে নেয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এই বুদ্ধিজীবীরা প্রকাশ্য দুটি অংশে বিভক্ত হয়েছেন তথা দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের বলয়ে তারা নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন। একটা সময় পর্যন্ত বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে কোনও রাজনৈতিক দলে সরাসরি অংশগ্রহণে রাখঢাক থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তা বেশ প্রকাশ্য হয়েছে। ফলে এখন বুদ্ধিজীবীদের বিরাট অংশের পত্রিকায় কলাম কিংবা টেলিভিশনের টকশোতে বক্তব্য শুনলেই বোঝা যায় তারা কোন দলের পক্ষে কথা বলছেন। ফলে যে প্রশ্নটি অনেকের মনেই আছে তা হলো, যখন কোনও একজন বিশিষ্ট নাগরিক বা বুদ্ধিজীবী সরাসরি কোনও দলের পক্ষে দাঁড়ান, তখন তাকে আর বুদ্ধিজীবী বলা যায় কিনা? কিংবা বলা গেলেও তাকে ওই দলের থিংকট্যাংক বা ‘দলীয় বুদ্ধিজীবী’ বলাটাই সঙ্গত কিনা?

অনেক দিন আগে একটি দৈনিক সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ‘আমি মনে করি এ মুহূর্তে সিভিল সোসাইটি বলে কিছু নেই। কাউকে দেখতেও পাই না। এর বদলে কিছু ব্যক্তি, সংগঠন ও এনজিও আছে। যারা বিভিন্ন ইস্যুতে বক্তব্য-বিবৃতি দেয়, আন্দোলন করে। সিভিল সোসাইটি বলে ধারণা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এর কোনও ভিত্তি আদৌ দেখি না।’ জনাব চৌধুরী আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোই যেখানে একসঙ্গে থাকতে পারে না, সেখানে সুশীল সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকবে কীভাবে?’

শিক্ষক ও সাংবাদিকের নিরপেক্ষতা:

বলা হয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা সবচেয়ে বেশি স্বাধীন। অর্থাৎ তারা সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেও লেখালেখিতে কিংবা টেলিভিশনের টকশোতে সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করতে পারেন। তারা ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে পারেন— তাতে আইন কোনও বাধা নয়। কিন্তু পরক্ষণে এ প্রশ্নও সামনে আসে যে, যখন একজন শিক্ষক কোনও একটি রাজনৈতিক দলের কোনও পদে আসীন হন, তখন সেটি শিক্ষক হিসেবে তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করে কি না? পাল্টা প্রশ্ন উঠতে পারে যে, একজন শিক্ষকের রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ থাকার প্রয়োজনীয়তাই বা কতটুকু? একইভাবে অন্যান্য পেশা যেমন চিকিৎসক বা প্রকৌশলীদেরও নিরপেক্ষ থাকার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। কিন্তু সাংবাদিকদের বেলায় কি এই একই যুক্তি খাটে? কেননা, জগতের সকল পেশার মানুষ দলীয় পরিচয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেলেও সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে গণমাধ্যম স্বাধীন থাকবে এবং সাংবাদিকরা দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে থাকবেন। কোনও রাজনৈতিক দল বা আদর্শের প্রতি তাদের পক্ষপাত থাকলেও সেটি যাতে সংবাদ ও বিশ্লেষণে প্রতিফলিত না হয়, সেজন্য সাংবাদিকরা কোনও দলীয় পদ গ্রহণ করবেন না— এটিই মানুষ প্রত্যাশা করে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সাংবাদিকদের সরাসরি রাজনৈতিক দলে যুক্ত হওয়া এমনকি দলীয় পদ-পদবি গ্রহণের প্রবণতা যথেষ্ট বেড়েছে এবং দলীয় পদ পেয়ে তারা বেশ শ্লাঘা বোধ করেন। অনেকের কাছে সাংবাদিকতার চেয়েও দলীয় পরিচয়টিই যেন মুখ্য হয়ে উঠছে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচনেও দলীয় প্রভাব এখন স্পষ্ট— বিশেষ করে জাতীয় প্রেসক্লাব, বিএফইউজে, ডিইউজেতে। যে অবস্থা চলছে তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সাংবাদিকদের এসব সংগঠনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও তাতে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না।

চিঠি ও বিবৃতির তাৎপর্য:

প্রশ্ন উঠতে পারে বিশিষ্ট নাগরিক ও বুদ্ধিজীবীদের এই চিঠি ও বিবৃতি কি রাজনৈতিক বা এর কি কোনও রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে কিংবা তারা কি বিশেষ কোনও দলের পক্ষাবলম্বন করছেন? ইসির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনে তা তদন্তের জন্য রাষ্ট্রপতিকে ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিকের চিঠি দেওয়ার পর সরকারি দলের তরফে তাদের ‘বিএনপির লোক’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। যদিও তারা সরাসরি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। তবে যেহেতু তারা সরকারের নানা নীতি ও কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন এবং সরকারের সমালোচনা করলে সেটির সুবিধা বিরোধীদের পক্ষে যায়, সেই বিবেচনায় অনেক সময় সরকারের সমালোচকদের বিএনপি-জামায়াতের লোক বলে অভিহিত করা হয়। বাস্তবতা হলো, এই ৪২ নাগরিকের মধ্যে বামপন্থি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অধ্যাপক ও তাত্ত্বিকও রয়েছেন, যেমন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আনু মুহাম্মদ, রেহনুমা আহমেদ। রয়েছেন মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, স্থপতি মোবাশ্বের হাসান, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন চৌধুরী, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার মতো মানুষ— যারা কোনও দিনই বিএনপির লোক ছিলেন না বা এখনও নন।

কিন্তু যেহেতু তারা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছেন এবং বিএনপিও যেহেতু সব সময় এই কমিশনের সমালোচনা করে—সেই বিবেচনায় ঢালাওভাবে এই ৪২ বিশিষ্ট নাগরিককে বিএনপির লোক বলে মন্তব্য করাটা যুক্তিযুক্ত কিনা— তা ভেবে দেখা দরকার। কারণ, সমাজ ও রাষ্ট্রের যেকোনও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মতামত দেওয়া বা নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করা বিশিষ্ট নাগরিকদের কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। এই ৪২ নাগরিক যদি সেই কর্তব্যের খাতিরে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়ে থাকেন— তাহলে সেটি সাধুবাদযোগ্য। কিন্তু এই চিঠি দেওয়ার পেছনে যদি ভিন্ন কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে বা এই চিঠি দেওয়ার পেছনে যদি বিএনপির ইন্ধন থাকে, তাহলে এটিকে নাগরিক সমাজের কর্তব্য হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই।    

অন্যদিকে ভাস্কর্য ইস্যুতে যে ১১ জন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন, তাদের বিএনপির তরফে আওয়ামী লীগের লোক বলে দাবি করা না হলেও তারা প্রগতিশীল বলয়ের মানুষ হিসেবেই পরিচিত। তার চেয়ে বড় কথা, যে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তারা বিবৃতি দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু ও বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুর— সেই ইস্যুতে কোনও বুদ্ধিজীবী বা বিশিষ্ট নাগরিকের চুপ থাকার সুযোগও নেই। সরকারি কর্মচারী হিসেবে একজন পুলিশ সুপার সমাবেশে অংশ নিয়ে কারও হাত-পা ভেঙে দেওয়া বা পাকিস্তান চলে যাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন কিনা— সেটি নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু ভাস্কর্য ইস্যুতে চুপ থাকা কিংবা ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ অবস্থান গ্রহণও সুবিধাবাদিতার লক্ষণ।

পরিশেষ:

বিষয়টা এমন দাঁড়িয়েছে যে, বিশিষ্ট নাগরিকদের কোনও অংশের বক্তব্য বা অবস্থান যখনই কোনও একটি দলের পক্ষে যায়, তখন বিরোধী শিবির থেকে তাদের ওই দলের লোক বলে অভিহিত করা হয়। তার মানে কি বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্ট নাগরিকরা নিজেদের নিরপেক্ষ জায়গায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন? আবার ‘নিরপেক্ষ জায়গা’ বলতে আসলে কিছু আছে কিনা? কেননা, যেকোনও বক্তব্যই কারও পক্ষে যাবে এবং কারও বিপক্ষে যাবে। তাহলে কি বিশিষ্ট নাগরিক ও বুদ্ধিজীবীরা নিরপেক্ষ থাকার জন্য চুপ থাকবেন? সেটিও নিশ্চয়ই কাঙ্ক্ষিত নয়। কিন্তু গুরুতর অভিযোগ হলো, বিশিষ্ট নাগরিক ও বুদ্ধিজীবীদের বড় অংশই ব্যক্তিগত লাভ ও সুবিধা পাওয়ার স্বার্থে কথা বলেন, বিবৃতি দেন, চিঠি দেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমাজের ‘বাতিঘর’ বলে উল্লেখ করা হয়, তাদের নিয়োগে রাজনৈতিক বিবেচনা এবং উপাচার্য হওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় আনুগত্যের বিষয়গুলো এখন আর গোপন  বিষয় নয়। সুতরাং বুদ্ধিজীবীরা নিজেরাই যেখানে ব্যক্তিস্বার্থে বিভক্ত, সেখানে তারা যদি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কোনও বিষয়ে মতামত দেন, সেটি সাধারণ মানুষের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হয়, সেটিই বড়ই প্রশ্ন।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ