X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

হিরো আলমকে ‘গায়ক’ বানানোর পেছনে কারা?

বিনোদন রিপোর্ট
২৯ ডিসেম্বর ২০২০, ১৮:২০আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২০, ২০:১৯

মম রহমান ও হিরো আলম রাগ আর ক্ষোভ থেকেই নাকি এবার ‘গায়ক’ হিসেবে সামনে এসেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল সমালোচিত হিরো আলম। বছরের শেষ প্রান্তে এসে একের পর এক প্রকাশ করছেন তার গাওয়া ‘গান’! বরাবরের মতোই বিষয়টি নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে।
নির্বাচন, ভিডিও কনটেন্ট, নাটক, সিনেমার পর এবার তার নতুন ক্ষেত্র গান। বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না সংগীতের অনেক সম্মানিত জন।
তবে সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই হিরো আলমের। এরমধ্যে প্রকাশ করেছেন বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় ৯টি গান! যার বেশিরভাগেরই গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক ও প্রমোটার হিসেবে কাজ করেছেন মম রহমান নামের অখ্যাত এক সংগীত পরিচালক। যার পেছনে রয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
কীভাবে শুরু আর কেনইবা শুরু, এমনটা জানতে চাওয়া হয়েছিল হিরো আলমের কাছে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘‘আমি অভিনয়েই থাকতে চাই। শিল্পী (গানের) হওয়ার কোনও ইচ্ছে আমার নাই। আপনারা দেখবেন শখের বসে অভিনয়ের অনেকেই গান গেয়েছেন। ফজলুর রহমান বাবু, নুসরাত ফারিয়া, মাহফুজুর রহমানসহ অনেকেই গেয়েছেন। তাই আমিও ভাবলাম একটা গান গাই। সেখান থেকেই ‘বাবু খাইছো’ গান তৈরি। আমার জীবনের সবকিছুই নেগেটিভ। এটাও হলো নেগেটিভ। লোকজন সমালোচনা করেছেন ও গালি দিয়েছেন। মনের মধ্যে জেদ চেপে গেলো, যখন গান নিয়ে গালি খেয়েছি, আমি গাইবো। আমি গান গেয়ে দেখাবো, আমিও পারি।’’
সঙ্গে এও যোগ করেন, কোনও দায়বদ্ধতা বা শিল্পী হওয়ার জন্য নয়, মূলত বিনোদন দিতেই তার এই গান গাওয়া। তাই শিল্পের জায়গাটা তার ভাবনার বিষয় নয় বলেই মনে করেন তিনি। আর এ কারণেই বিভিন্ন ভাষায় গান তৈরি করে চলেছেন।
এদিকে প্রকাশিত গানগুলোর বেশিরভাগরই সংগীত ও সুর করেছেন মম রহমান। যিনি দীর্ঘদিন ধরেই মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে থিতু হতে চাইছেন। কিন্তু পাননি কোনও সমর্থন। তাই হিরো আলমসহ অনেক পয়সাওয়ালা ‘শিল্পী’কে খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরতে চেয়েছেন।
মম রহমান বলেন, ‘যখন আমার কাছে কেউ গান করাতে আসে আমার কাজ হলো সেটা করে দেওয়া। আমি না করলে হিরো আলম অন্য কারও কাছে যেতেন। ইতোমধ্যে আমি ছাড়াও আরও দু-একজনের সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন। গান তৈরি করাটা আমার পেশা। তাই এটা করতে হবে।’
আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরেই গান করছি, কিন্তু কখনও আলোচনায় আসতে পারিনি। ভালো কাজ করেও প্রশংসা পাইনি। অনেকটা বাধ্য হয়েই সমালোচিত বা টাকাওয়ালাদের কাজ করতে হয় আমাকে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মম রহমান নিজেও একজন কণ্ঠশিল্পী। এরমধ্যে প্রকাশ হয়েছে তার বেশক’টি একক গান। পাশাপাশি দিলশাদ নাহার কণা, ইলিয়াস হোসেনসহ অনেক নতুন শিল্পীকে নিয়েও কাজ করেছেন তিনি।




প্রসঙ্গটি নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা হয় বেশ কয়েকজন সংগীতশিল্পী ও সংগীত প্রযোজকের। এরমধ্যে সংগীতশিল্পী ফাহমিদা নবী হিরো আলমের নাম নিতেই ঘোর আপত্তি জানালেন। তার মতে, শুধু একজন নয়, অনেকেই সংগীতাঙ্গনকে নাজেহাল করছে। বিশেষ করে কিছু কম্পোজার এগুলোর সঙ্গে যুক্ত।
‘আমি তাকে চিনি না। চিনতেও চাই না। প্রত্যেকটা কাজের একটা ফল আছে। তারা যা করছে তার ফল তারা পাবে। করোনা যেমন মানুষকে গৃহবন্দি করেছে তেমনি তারাও গৃহবন্দি হবে। এমন কাজ করলে তাদেরও ডোবায় ফিরে যেতে হবে। তারা কখনও সাগরের দেখা পাবে না’- বললেন কিংবদন্তি শিল্পী মাহমুদুন্নবীর এই উত্তরসূরি।
২৬ নভেম্বর আসে হিরো আলমের ‘বাবু খাইছো’ গানটি। যার জন্য মামলার আসামিও হয়েছেন হিরো আলম। ২১ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয় হিন্দি ‘আজা ম্যারে পাস’। এটি প্রকাশের পর বিতর্কটি আবার নতুন করে ওঠে। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে শ্রোতারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। গান দুটির মাঝে আরও ৬টি ভিডিও অবমুক্ত হয়েছে। ২৩ ডিসেম্বর এসেছে ইংরেজি নববর্ষকে নিয়ে তার গান। তাহলে কি এই গানের রথ চলতেই থাকবে—এমন জিজ্ঞাসাতে হিরো আলম বললেন, ‘না, আমি গায়ক নই, অভিনেতা। গালি দেওয়াতে গান শুরু করেছি। যেদিন সবাই বলবে আমি ভালো গাই, সেদিন থেকে আর গাইবো না। আরও দুটো গান হাতে আছে। দেখি লোকে কী বলে।’




এদিকে গান প্রকাশ করাটা হিরো আলমের একার পক্ষে সম্ভব নয় বলে মনে করেন অনেক সংগীত প্রযোজক। তাদের মতে, কিছু অসাধু গীতিকার-সুরকার লোভের বশবর্তী হয়ে এ কাজ করছেন। এর ফলে তারাও পরবর্তী সময়ে ক্ষতির মুখে পড়বেন। পাশাপাশি নষ্ট হবে গানের রুচি ও পরিবেশ। উৎসাহ পাবে আরও এমন ‘অ-শিল্পীরা’।
মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমআইবি) প্রেসিডেন্ট এ কে এম আরিফুর রহমান বলেন, ‘হিরো আলম অবিবেচক হতে পারেন কিন্তু যারা তাকে গানের লিরিক্স ও সংগীত দিয়ে সহযোগিতা করছেন তারা তো তা নয়। তাহলে কেন তারা এগুলো করছেন? একজন সচেতন মানুষ তার দায়িত্ববোধের পরিচয় দেবে। তিনি যদি জেনে বুঝেও এমন কাজ করে যান, সেটা অপরাধ। এর শাস্তি হওয়া উচিত। আমি সব সংগঠনকে বলবো সাংগঠনিকভাবে এসব গীতিকার ও সুরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। গানে হয়তো সেন্সর সম্ভব নয়, এটার পক্ষেও আমি নই। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের কাজ করতে হবে।’




গানে নয়, নতুন চলচ্চিত্র নিয়ে হিরো আলম ফিরতে চাচ্ছেন মূল ধারার চলচ্চিত্রে। নিজেকে অভিনেতা হিসেবে দেখতে চান। তবে সেখানেও মূলধারার অনেকের আপত্তি।
হিরো আলমকে নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানসহ অনেকে। তাদের মতে, শিল্পচর্চা করতে দোষ নেই, তবে সেটার জন্য অভিজ্ঞতা, পরিশ্রম ও দক্ষতা অর্জন করা জরুরি। নইলে পেশাদার শিল্পীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এতে ছিটকে যেতে পারে শিল্পের সুনির্মল জায়গাটাও।

/এম/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
চীনে মুক্তি, নতুন ইতিহাস গড়বে ‘টুয়েলভথ ফেল’?
চীনে মুক্তি, নতুন ইতিহাস গড়বে ‘টুয়েলভথ ফেল’?
রেকর্ড স্টোর ডে: এবারও বিশেষ আয়োজন
রেকর্ড স্টোর ডে: এবারও বিশেষ আয়োজন
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন: কোন পদে লড়ছেন কে
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন: কোন পদে লড়ছেন কে
রাজকুমার: ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ এক বিয়োগান্তক ছবি
সিনেমা সমালোচনারাজকুমার: ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ এক বিয়োগান্তক ছবি
হলিউডের ‘ভূত’ আসছে দেশে!
হলিউডের ‘ভূত’ আসছে দেশে!