আত্মার ঔষধি খোঁজে
মাজারে শায়িত সাধুর সমীপে
আত্মাকে বন্ধক দিয়ে মুক্তির পথ খোঁজে
আত্মা জানে না কোথায় কলঙ্কের দাগ
জানে না ভাবুক কে মৃত, কে আছে চোখ বুজে?
আতর-লোবানের গন্ধে ডুবে ভাবে ভাবুক
হরিৎ ভেষজ ডলে হাতের চেটোয়
নাড়ির ভেতরে চালায় ধোঁয়ার চাবুক।
আলো-ছায়ার আঁধারে বুঁদ হয়ে থাকে
আত্মার ঔষধি খোঁজে সাধুর সমীপে
দিনে দিনে ফুরোয় জীবনের দায়-দেনা
ভাবুক জানে না কখনো—সাধুর মোকামে
আত্মার দাওয়াই যায় কি-না কেনা।
জানালাটা খুলে দাও
আবদ্ধ ঘরে পড়ে আছি জন্মান্তর থেকে
দক্ষিণের জানালাটা কিঞ্চিৎ খুলে দাও
এক ফালি আলো আসুক ঘরে
স্নিগ্ধ বাতাসে জুড়াই গা।
আলো নেই? নেই কি স্নিগ্ধ বাতাস?
দুরন্ত আঁধারের নৈরাজ্যে দুর্দম্য আস্ফালন
বিলীন হবে কি তবে মানুষের নিবাস?
ফের বলি, খড়খড়িটা খুলে দাও
রুদ্ধ করো না আলোর পথ
স্বপ্নের মন্দ্রজালসুদ্ধ এই রুদ্ধ ঘর
হবে আলোর সাকিন।
লাটিম
দড়ির বাঁধনে শরীর আবদ্ধ করে
শূন্য থেকে ছুঁড়ে মারে
শাণিত দণ্ডে স্থির হয়ে ঘুরছে
ঘুরছে
ঘুরছে
ঘুরছে
ঝিমধরা লাটিম দেখে ঘুরছে পৃথিবী
ঘুরছে আকাশ, বাতাস, বৃক্ষতরুলতা
ঘরবাড়ি-অরণ্য-খালবিল-নদী-সাগর-পশু-পাখি
ঘুরছে
ঘুরছে
ঘুরছে
মাটির বুকে তীক্ষ্ণ দণ্ডে দাঁড়িয়ে দেখে লাটিম
চারপাশের মানুষগুলো ঘুরছে...
অত্যোৎসাহে যে মানুষটি লাটিম ছুঁড়েছিল
সে শুধু দেখল—
লৌহ-শলাকার ঘর্ষণে মাটির ফোঁড়।
হেমন্তের মাঠ
মাঠে মাঠে সোনা-দানা রয়েছে ছড়িয়ে—যেন বিভা অফুরান
সবুজ পাতার ফাঁকে সোনালি দানার শীষ যেন সোনার আকর
নরম রোদের কণা নাচে ধানের পাতায় উজ্জীবিত প্রাণ
মৃদু-মন্দ শিহরণ—জুড়ায় তাপিত মন হিমেল শীকর।
পরিযায়ী পাখিকুল দূর থেকে আসে ফের, ফিরে যায় নীড়ে
সন্ধ্যা নামিবার আগে। নিঃশব্দে কুয়াশা ধীর লয়ে জাল বোনে
তখন লাজুক চাঁদ বধূ যেন মুখ ঢাকে কুয়াশায় ঘিরে—
নিরিবিলি;—মিটিমিটি হাসে একা একা আকাশের কোণে।
যত দূর চোখ যায় তত দূর কিষানের চোখে স্বপ্ন পাখা
মেলে; দূরের জাহাজ যেন নিয়ে আসে ওই সোনার মোহর
তখন ধানের ঘ্রাণে উছলিত হয় প্রাণ; পল্লবিত শাখা
স্বপ্নে পূর্ণ হয় মণিজাল তারা—দেখে স্বপ্নের জহর।
কুলবধূদের মুখে কলহাস্য ফুটে পুকুরের ঘাটে
ধানের পাতার সাথে স্বপ্নগুলো খেলে হেমন্তের মাঠে।