X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

আমেরিকায় নির্বাচন পরবর্তী বিদ্রোহ-দাঙ্গার আশঙ্কা

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী
১৫ অক্টোবর ২০২০, ১৫:৫০আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২০, ১০:১৪

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী আমেরিকা অভিবাসীদের দেশ। ইউরোপ থেকে লাখ লাখ লোক গিয়ে আমেরিকায় বসতি গড়েছে। ইউরোপ থেকে শ্বেতাঙ্গরা গিয়ে আমেরিকার আদিবাসীদের গণহারে হত্যা করেছে। আমেরিকায় ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গরা বসতি গড়ে তোলার সময় উত্তরের লোকেরা শিল্পকে প্রাধান্য দিয়েছিল আর দক্ষিণের লোকেরা কৃষিকে প্রাধান্য দিয়েছিল। কৃষিতে কাজ করার জন্য লাখ লাখ কালো আফ্রিকানদের কৃষিশ্রমিক হিসেবে এনেছিল। এতো কালো শ্রমিক তখন এনেছিল যে আফ্রিকা আর আমেরিকার মধ্যে জাহাজে শ্রমিক পরিবহনের ব্যবসাটা জমজমাট হয়ে উঠেছিল। ব্রিটেনের রানি প্রথম এলিজাবেথ পর্যন্ত দু’টি জাহাজ কিনে এ ব্যবসায় অংশগ্রহণ করেছিলন।
আমেরিকার অভিবাসীদের মাঝে মূলত এখন ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গ আর আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ—এই দুই মূলধারায় বিভক্ত। অবশ্য এই দুই প্রধান ধারা ছাড়াও মেক্সিকান, এশিয়ান এবং লেতিনোদের তৃতীয় এক ধারার অভিবাসীও রয়েছে। অনুরূপ তিন ধারার লোক নিয়ে প্রজাতন্ত্রটি গঠন করেছিলেন প্রজ্ঞাবান স্থপতিরা। বহু বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য সহজ কথা নয়। শ্বেতাঙ্গরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। প্রজাতন্ত্রটির প্রতিষ্ঠার পর থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে শ্বেতাঙ্গরা।
২০০৮ সালের নির্বাচনে যখন ডেমোক্রেট দলের কৃষ্ণাঙ্গ প্রার্থী বারাক হোসেন ওবামা জিতে যায় তখন সবার এই বিশ্বাস জন্মেছিল যে আমেরিকার সংহতি বিপদ উত্তীর্ণ হয়েছে। কারণ যে কালোদেরকে সময় সময় গাছে ঝুলিয়ে শ্বেতাঙ্গরা অকারণে ফাঁসিতে মেরেছে সে কৃষ্ণাঙ্গের সন্তান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া সহজ কথা নয়। আর শুধু একবার নয় দ্বিতীয় বারও ওবামা নির্বাচিত হন।
ওবামা যখন প্রেসিডেন্ট হন তখন আমেরিকার অর্থনীতি ঘোর মন্দায় আক্রান্ত তবে উচ্চ শিক্ষিত ওবামা খুবই বিজ্ঞতার সঙ্গে মানুষকে ব্যাপক কোনও কষ্ট না দিয়ে ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক মন্দা উত্তীর্ণের চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন এবং অনেকাংশে সফলও হয়েছিলেন। মনে হয় রুজভেল্টের মতো সুযোগ পেলে তিনি তৃতীয়বারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতেন। রুজভেল্টের একমাত্র চারবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকার রেকর্ড আছে। ১৯৪৭ সালে ২২তম সংবিধান সংশোধনীর পর দুই বারের বেশি প্রেসিডেন্ট থাকার সুযোগ আর কারও নেই।

যাক, ২০১৬ সালের ৫৮তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট দল থেকে হিলারি ক্লিনটন আর রিপাবলিকান থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প মনোনয়ন পেয়ে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ট্রাম্প একজন বৈষয়িক বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যবসায়ী এবং বর্ণবাদী মানুষ। সম্ভবত একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট শ্বেতাঙ্গদের ওপর দীর্ঘ আট বছর ছড়ি ঘুরানোকে অনেক শ্বেতাঙ্গ পছন্দ করেনি। এসব কারণে হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেননি। আবার অভিযোগ আছে রাশিয়া নির্বাচনে ট্রাম্পকে জেতানোর জন্য সাহায্য করেছিলেন। কারণ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন হিলারিকে পছন্দ করতেন না। হিলারি যখন প্রথম ধাপে বারাক ওবামার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তখন তাকে পুতিন জানা বুঝার সুযোগ পেয়েছিল।
ট্রাম্প কিন্তু নির্বাচনি প্রচারে বর্ণবাদকে উসকানি দিয়েছিলেন। ট্রাম্পের কাছে আমেরিকান মানে শ্বেতাঙ্গরা। আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের কথা তিনি প্রচার করেছিলেন। আর এ শ্রেষ্ঠত্ব হচ্ছে শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠত্ব। ট্রাম্প ডানপন্থীদের বর্ণবাদী হিংসার দিকে যেতে উৎসাহিত করেন। তিনি অশ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের প্রতি নানা সময় তাচ্ছিল্যপূর্ণ ও অপমানজনক কথাবার্তা বলেছেন। তিনি মেক্সিকানদের ‘ধর্ষক’ মুসলমানদের ‘সন্ত্রাসী’ এবং লেতিনোদের ‘পশু’ বলে উল্লেখ করেছেন। ট্রাম্প পাষাণ প্রকৃতির লোক। অবৈধ অভিবাসীদের সঙ্গে তিনি অমানবিক ব্যবহার করেছেন। ছোট ছোট শিশুদের তিনি মা-বাবা থেকে বিচ্ছিন্ন করেছেন। মার্কিনের আটক কেন্দ্র ও কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে সেই নৃশংসতার রেশ এখনও রয়ে গেছে।
ট্রাম্প গত চার বছরে সাংবিধানিক ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে আইনি ভারসাম্য নষ্ট করেছেন। তিনি গত চার বছর আইনি বিধি নিয়ে ঠাট্টা মশকারী করেছেন। এখন নির্বাচনি প্রচার চলছে। ট্রাম্প বাদামি চামড়ার আমেরিকানদের ‘দাঙ্গাকারী’ ‘বামপন্থী’ ইত্যাদি বলে ভর্ৎসনা করছেন। বিচার বিভাগের মতো নৈর্ব্যক্তিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে রোগনিয়ন্ত্রণও সুরক্ষা কেন্দ্রের মতো জনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিকরণ করেছেন ট্রাম্প।
আগামী ৩ নভেম্বর ২০২০-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট দলীয় জো বাইডেন। ট্রাম্প তাকে নিয়ে বাজে কথা বলেছেন প্রতিদিন। সর্বশেষ বলেছেন, বাইডেনের মতো এতো নিম্নমানের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মার্কিন ইতিহাসে আর আসেনি। আর এটাই নাকি তাকে চাপ সৃষ্টি করছে সবচেয়ে বেশি। ‘আপনারা যদি এইরকম একটি লোকের কাছে হেরে যান তবে ভাবতে পারেন কেমন (লজ্জার) হবে সেটি?’ ট্রাম্প মঙ্গলবার পেনসিলভেনিয়ার তার সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন। ট্রাম্প সেখানে স্মরণ করেন সম্প্রতি নির্বাচনি বিতর্কে কীভাবে বাইডেন ২০১২ সালের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মিট রোমনির নাম ভুলে গিয়েছিলেন। আর বলেন, ‘এটা অবিশ্বাস্য, জঘন্য, অপমানজনক। তিনি জিতলে র‌্যাডিক্যাল বামপন্থীরা দেশ চালাবে।’
গত চার বছর পদে পদে অসাংবিধানিক কাজ করে প্রজাতন্ত্রটির সাংবিধানিক বৈশিষ্ট্য বিনষ্ট করেছেন ট্রাম্প। তার মনোভাব হচ্ছে হয়তো জিতবো না হয় দেশে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবো। তিনি পোস্টাল ভোটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। পোস্টাল ভোট না মানার কথা বলছেন। নির্বাচনের পরে তিনি হোয়াইট হাউস ছাড়বেন না বলেছেন। ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন বলেছেন অনুরূপ পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে সামরিক বাহিনী ডাকা হবে। তাই যদি হয় তবে তা হবে আমেরিকার ইতিহাসে সম্পূর্ণ নতুন ঘটনা। আর বর্ণবাদীরা যদি মাঠে নামে তবে সেটা হবে আরেক বিপর্যয়ের আলামত।
নির্বাচনের পরে যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কোনও পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তবে কোনও সমাধান সরকার দিতে পারবে না। কারণ সরকার নিজেই তখন একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ৩ নভেম্বর নির্বাচনের পর আমেরিকার সুস্থিতি বিনষ্ট হবে। রিপাবলিকানদের সে রকম একটা প্রস্তুতি আছে।

 

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক

 [email protected]

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
শিশুশিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারপিট, মাদ্রাসাশিক্ষক আটক
শিশুশিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারপিট, মাদ্রাসাশিক্ষক আটক
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ