X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদযাত্রায় ভোগান্তির পূর্বাভাস

শান্তনু চৌধুরী
০৮ আগস্ট ২০১৯, ১৬:০৪আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০১৯, ১৬:০৬

শান্তনু চৌধুরী কথায় বলে, ‘মনিং শোজ দ্য ডে’। দিনের শুরুটাই বলে দেয় পুরোদিন কেমন যাবে। ভয়, আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তা ভরা জীবনের মধ্যে ঈদের মতো উৎসবগুলো হতো এক টুকরো চাঁদের হাসির মতো। কিন্তু এবার সে যাত্রায়ও গুড়েবালি। এবারের ঈদযাত্রা যে ভোগান্তিতে ভরা থাকবে, সেটাই বলে দিয়েছেন খোদ সরকারি কর্মকর্তারা। গেলো ২৬ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে ঈদ উপলক্ষে আগাম বাসের টিকিট বিক্রি, আর ২৯ জুলাই থেকে দেওয়া হয়েছে ট্রেনের টিকিট।
সে হিসেবে বলা যেতে পারে ঈদযাত্রা শুরু হয়ে গেছে। ঈদ কাছেই চলে এসেছে। কিন্তু নগরবাসী এখনও দোটানায় রয়েছেন ঈদে বাড়ি যাবেন কিনা। একদিকে প্রিয়জনের সান্নিধ্যে ঈদ উদযাপন, অন্যদিকে যাত্রাপথের ভোগান্তি, ঝক্কি-ঝামেলা। আর এই ভোগান্তির অন্যতম কারণ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সড়ক ও রেলপথ। এই দুই পথেই বেশিরভাগ লোক বাড়ি যান।
এবারের বন্যার বড় প্রভাব পড়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায়। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রায় ছয়শ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া রেলপথের ক্ষতি হয়েছে ৬০ কিলোমিটার। এমনিতেই দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর একটি বড় অংশই আগে থেকে নাজুক অবস্থায়, এবারের বন্যা এই অস্বস্তি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৭টি জেলার ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের মধ্যে জাতীয় ও আঞ্চলিক সড়কের পাশাপাশি রয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের সড়কও। যদিও সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বরাবরের মতোই আশ্বাস দিয়েছেন ঈদুল আজহার আগেই সড়ক মেরামত হবে। বিভাগের লোকজনও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু আখেরে লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ একদিকে ক্ষতির পরিমাণ যেমন বেশি, তেমনি বারবার বৃষ্টিতেও কাজের বিঘ্ন ঘটছে। তাই দুর্ভোগ যে পিছু ছাড়বে না সেটা নিশ্চিত।

এই ভোগান্তি আরো বাড়িয়ে দেয় যখন কর্তাব্যক্তিরা ‘সবকিছু ঠিক আছে’ বলে মনে করেন। এর মধ্যে অবশ্য কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ছাড়া ঈদের সময়ে ভারী যানবাহন বা পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখা এবং সিএনজি স্টেশনগুলো ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার মতো ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলেই হলো। যদিও বলা হচ্ছে ঈদের আগে সড়ক মেরামতের কাজ শেষ হবে, কিন্তু সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট এবং প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান বলছে তা কোনোমতেই সম্ভব নয়। এমনিতে এখন অনেক সড়কে যানবাহন চলছে জোড়াতালি দিয়ে। এছাড়া বন্যা পুরোপুরি শেষ না হলে সংস্কার কাজ শেষ করা যাবে না। তাই এবার ঈদযাত্রা স্বাভাবিক গতি হারাবে।

বন্যা ও বর্ষা বাংলাদেশের বাস্তবতা, আর বন্যা যে শুধু বাংলাদেশে হয় তা নয়। তাই সেটি মোকাবিলার যথাযথ প্রস্তুতি থাকলেই একমাত্র সম্ভব ছিল জনদুর্ভোগ কমানোর। এই যে প্রতিবার ঈদের আগে আগেই আমরা বলি যাত্রাপথের নাজুক অবস্থার কথা। কিন্তু সেগুলো কোনো বছরই ঠিকমতো মেরামত হয় না। বন্যা তো আসবেই, কিন্তু সড়ক কি ঠেকসইভাবে নির্মাণ হচ্ছে? অতিরিক্ত ভারবাহী যানবাহনের চলাচল, নির্মাণকাজে দীর্ঘসূত্রতা এবং নিম্নমানের নির্মাণ ও মেরামতের কারণে সড়ক টিকছে না। ঈদ এলেই তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু কাজের কাজ খুব বেশি হয় না। বরং অর্থের অপচয় হয়। যাও কিছুটা কাজ হয় তা ঈদে সড়কপথের চাপে ভেস্তে যায়। অথচ সারাবছরই যদি সংস্কার কাজ চালু রাখা যেতো, তাহলে এ ধরনের বিপর্যয় ঘটতো না। আবার ঈদের আগে আগে যেনতেনভাবে বা অল্প ইট সুরকি বা বিটুমিন দিয়ে মেরামত করলে আখেরে তা লাভ হয় না। তাছাড়া আমাদের দেশে কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সব সড়ক সংস্কার বা মেরামতের কাজ শুরু হয় বর্ষাকালে। সে কারণে ঠেকসই কাজ করাই মুশকিল। সেটিতে হয়তো প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতদের লাভ হতে পারে, যাত্রীদের কোনও লাভ হয় বলে মনে হয় না। আবার একবার মেরামত, আবার নষ্ট হলে আবার মেরামত এমন চক্র থেকে বের হয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনীয় স্থান চিহ্নিত করে জরুরি ভিত্তিতে কোনও ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় না গিয়ে দ্রুত মেরামত করলেই হয়তো ঈদের সময় মানুষগুলো স্বস্তিতে না হোক ভোগান্তিহীনভাবে বাড়ি ফিরতে পারবে।

সড়কপথের বেহাল দশার কারণে প্রতিবারই চাপ পড়ে রেলপথের ওপর। এবার সেখানেও শনির দশা। রেলপথমন্ত্রী আগেই বলেছেন, শিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। অবশ্য তার এই আশঙ্কা অমূলক নয়। অ্যাপসের ধীরগতি আর নির্ঘুম রাত কাটিয়ে যতোই ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করা হোক না কেন বন্যা এবারে ব্যাপকভাবে ক্ষতি করেছে রেলপথেরও। এবং আগস্টের আগে অনেক পথেই ট্রেন চালানো সম্ভব হবে না বলে জানা গেছে। রেলওয়ের তথ্য বলছে, এবারের বন্যায় ৭টি রুটে ব্যাপকভাবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে রেললাইন তলিয়ে ছিল। কোথাও কোথাও রেল সড়ক বন্যার স্রোতে ভেঙে গেছে। আবার কোথাও কোথাও মাটি ও পাথরসহ রেলপথ দেবে গেছে। এসবেরই প্রভাব পড়বে আসন্ন ঈদে ট্রেনযাত্রাতে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের রেলপথে এই ভোগান্তি বেশি। মাঠে রেলের শ্রমিক, প্রকৌশলীরা কাজ করছেন, কিন্তু রেলপথের সমস্যা হলো পানি পুরোপুরি সরে না গেলে মেরামত স্থায়ীভাবে করা সম্ভব হয় না। সড়কপথের মতো জোড়াতালির মেরামত হলে এখানে দুর্ঘটনা ঠেকানোর উপায় নেই।

বিশেষ করে ঈদের সময় যাত্রীবাহী ট্রেনগুলো থাকে হেভিলোডেড বা ওভার লোডেড। নাজুকপথ দিয়ে এসব ট্রেন চলাচল করতে দেওয়া উচিত হবে না। তাই নানা ঝক্কিঝামেলা মেনে নিয়ে যে সুখে রেলপথের যাত্রীরা এতদিন বাড়ি ফিরছিলেন, এবার তাও হচ্ছে না। কারণ রেলপথে যাত্রা এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে, জয়েন্ট, পাথর আছে কিনা এসব ঠিক না থাকলে সর্পিল ট্রেন মাঝপথে ভেঙে পড়বে। যেমনটি কিছুদিন আগে কুলাউড়ায় পড়েছিল। আস্থা হারানো এই সময়ে তাই কারো কথায় ভরসা নেই। যারাই বলছে ‘সবকিছু সময়ের আগে ঠিক হয়ে যাবে’, তাদের কথা ঠিক বিশ্বাস করা যায় না। কারণ এর আগেও একই বয়ান আশা জাগালেও স্বস্তি দিতে পারেনি সাধারণ মানুষকে। সে কারণে এবার একটু ভাবতে হচ্ছে বৈকি! ঝুঁকি নিয়ে নাগরিক মানুষ বাড়ি ফিরবে নাকি ডেঙ্গু আতঙ্কে মশারিবন্দি হয়ে ঢাকার বাইরে পা না রাখার শপথ নেবেন এই ঈদে, সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এখনই।

লেখক: সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ