X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

দ্বিত্ব শুভ্রার কবিতা

দ্বিত্ব শুভ্রা
০৯ এপ্রিল ২০২১, ১৩:০১আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০২১, ১৩:০৫

পাঠ

চোখের মাঝে দুটো অনিদ্রার বল, ওপরে আতসী কাচ।

স্বপ্নরা মৃত, আকাঙ্ক্ষারা মৃত তবু আমার ভেতর আরো মৃত্যু দেখবার জন্য

নিয়ম করে জেগে থাকে চোখ।

কাউকে নয়, আমাকেই অনুযোগ করি। আমার দেহ আমাকে শোনে না।

 

মাথা তৎপর জাগিয়ে রাখতে, ঠিকঠাক মনে করায় নাড়িভুড়ি উলটে দেওয়া ক্ষতদের।

যখন আমি এক গ্লাস পানির মাঝে শোক খুঁজি না,

গলা শুকিয়ে নেয়া কান্না গেলার জন্য আমি আর এক গ্লাস পানির হাত খুঁজি না,

নির্দিষ্ট বৃত্তে গুটিসুটি হয়ে কেবল একটুখানি ঘুম চাই,

সমস্ত বুঝে নেয়ার অর্থ থেকে কেবল গুম হতে চাই,

তখন আমি কার নামে অনুযোগ করি! আমার দেহই আমাকে শোনে না।

 

উত্তরপাঠ

১.

আমি মৃতদের ভুলে যাই আর অর্ধমৃতরা আমায় জাগিয়ে রাখে সারা রাত।

অনেক লাশবাহী খাট নামিয়ে এসেছি নানা দরজায়; এখন আমাকে যারা টানছে

তারাও নামিয়ে দেবে।

 

আমি ঘরময় পায়চারি করি আর ছেঁড়া ছেঁড়া স্মৃতিরা মাথায়।

সেলাই করার চেষ্টা করি আর ওগুলো বারবার খুলে পড়ে সম্পর্কের মতো।

নিরুপায় যেন, মোনাজাতের মতো মুখ মুছে দুহাত নামিয়ে আনি।

ওখানে কিছু জ্বলজ্বল করে। ওরাই নূর।

 

২.

ঘুম থেকে উঠি আর দিনটাকে উড়িয়ে দেই ঘুড়ির মতো।

সন্ধ্যায় সুতো ছিঁড়ে সে পড়ে যায় দিগন্তের ওপর।

আমার আর ঘুড়ির মাঝে সুতোর মতো সময়

আমি ঘুরে ফিরেছি শূন্যস্থানে।

 

পশ্চিমে লাল সংকেতের মতো সূর্য বলিরেখার মতো তীব্র।

আমার শরীর নেশাগ্রস্ত কচ্ছপের মতো সাগরের দিকে ছুটছে আর ওখানে বসে আছে

শেষ সময়।

আমায় তুলে নিতে আসছে বিশাল পাখনাওয়ালা ধারালো চঞ্চুর পাখি।

আমি পাঠ করতে পারছিলাম নিজেকে।

 

৩.

আনন্দের জন্য দরজা খুলতে হয় আর দুঃখেরটা খোলাই থাকে।

হুড়মুড় করে ঢোকার আগে একবার ভাবুন কি দিয়ে যাবেন অতঃপর।

আমি যথেষ্টই ক্লান্ত দীর্ঘশ্বাসের কাদাটে দাগ মুছতে মুছতে।

 

এইসব দিনরাত্রি 

তাহাদের প্রেম তাহাদের ছেড়ে চলে গেছে প্রতিহিংসার দিকে।

মৃদু মোমবাতি জ্বলে, শিখা কাঁপে তার আক্ষেপে আশ্লেষে।

পুরোনো হয়নি ফটোফ্রেম তবু তারা জীর্ণ ছবির মতো ম্লান

বোতলে ফরাসি সুগন্ধি, সেথা নিভে গেছে মানব মানবীর আঘ্রাণ।

 

তাহাদের প্রেম তাহাদের ছেড়ে চলে গেছে প্রতিহিংসার দিকে।

যেন কাঁটা কম্পাস, সিদ্ধান্তে স্থির, দুইজন দুইদিকে।

সমুদ্র পারাপার জাহাজ, পেঁচিয়ে গেছে তার সাতখানি পাল

কক্ষের ভেতরে কক্ষ, অন্দরে তালা, উৎকট বেহাল।

 

পাশাপাশি বসে আছে তবু যেন তারা ক্রমাগত দূর।

যতই গোছাতে যায়, জড়িয়ে যায়, সব নিষ্ঠুর ক্রুর ।

অতিথি যেমন বলে 'ভালো থাকবেন', তারা সেরকম ভালো থাকে আজকাল;

তাহাদের হৃদয় জানে, একদিন তাদের খুব কাছে ছিল স্বপ্নের নাগাল।

 

 

রাত

আমি তোমার মাঝে ভ্রমণ করি।

যখন সাফা মারওয়াহ পাহাড়ে ক্লান্তিময় ছোটাছুটি,

আগুনের বালিতে পাথর ফোটে আর ছিটকে নিদ্রাহীন চোখে ঢুকে যায়—

যখন শুষ্ক ঠোঁট থেকে সটকে পড়ে বিশ্বাস,

বিভ্রান্তিরা যেমন খুশি জন্ম নেয়

আর ওগুলো উটের শরীরের মতো অদ্ভুত।

 

লাল টকটকে হয়ে উঠছে—

ইতিমধ্যে যারা আমাকে রেখে গায়েব হয়ে গেছে,

আমাকে ফেলে গেছে কাঁকড়া বিছেদের মাঝে

আর আমি আছি ঝনঝন করা সাপেদের মধ্যেও,

আকাশজোড়া তাদের রক্তের মদ।

 

আমি কোনো বৃষ্টিই আহ্বান করতে পারি না!

 

তখন

আমার তেষ্টা আমাকে বহন করে।

আমি ভ্রমণ করি আমার হৃদয়, ওখানেই অফুরন্ত জমজম।

মরুভূমির অন্ধকার পথে নেমে যাই

এই নামই এক নক্ষত্র যে জীবনকে দিয়েছে নির্দেশনা।

 

কাল, মওসুম

রক্তমাংসের মাঝে চুপ থাকে জুমবীজ

রাতের গূঢ়তম অন্ধকার হতে অঙ্কুরিত হয় ধান ও মাকড়।

শরীর শস্যদানার খেত,

আমারই কর্ষণ, আমারই উর্বরতা।

 

আমি কাঁটার মাঝে উজ্জ্বলতম গোলাপ,

আমি ডানাময় বটগাছ

আমি বিস্তৃত হই, সংকুচিত হই আমারই আকাশের নিচে।

 

অবিরাম বৃষ্টি ও খরা

মৌমাছি অথবা মথ

এ রকমই জীবন, এ রকমই মৃত্যু—

আমারই পেন্ডুলামে আমি শীতের মেহগনি অথবা শিউলি

আমারই আকাশ বিছিয়ে দেয় প্রজাপতি, আমারেই অনন্ত ডাকে পঙ্গপাল।

আমার অনুভবই আমার ঋতু।

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ওরসে ঝগড়া, সেই শত্রুতায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
ওরসে ঝগড়া, সেই শত্রুতায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
ন্যাপ বাস্তবায়নে উন্নত দেশগুলোর প্রতি পর্যাপ্ত সহায়তার আহ্বান
ন্যাপ বাস্তবায়নে উন্নত দেশগুলোর প্রতি পর্যাপ্ত সহায়তার আহ্বান
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মীনা বাজার এখন মিরপুর-১২ নম্বরে
মীনা বাজার এখন মিরপুর-১২ নম্বরে
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা