যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে রেড জোন ও হোটেল কোয়ারেন্টিন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। ৯ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে আসা যাত্রীদের থাকতে হবে বাধ্যতামূলক হোটেল কোয়ারেন্টিনে। ব্রিটিশ সরকারের নির্ধারিত হোটেলে দশ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য গুনতে হবে দুই লক্ষাধিক টাকা। বাংলাদেশেও দেশজুড়ে সপ্তাহব্যাপী লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে অবস্থানরত কয়েক হাজার ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের ব্রিটেনে দ্রুত ফিরে আসা নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা ব্রিটেনের ভিসা পেয়ে ৯ এপ্রিলের পরের টিকিট কেটে লন্ডনে আসার অপেক্ষায় ছিলেন,তারাও এখন আগে আসতে চাইছেন। শুক্রবার রেড জোনের ঘোষণা আসার পর ঢাকা-লন্ডন রুটে বিমানের টিকিট কাটার ধুম পড়ে যায়। যাত্রীরা জানিয়েছেন, শনিবার সকাল থেকে দুই লাখ টাকা দিয়েও মিলছে না ঢাকা-লন্ডন রুটের ওয়ানওয়ে বিমান টিকিট।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ সরকার শুক্রবার ( ২ এপ্রিল) ফিলিপাইন,পাকিস্তান, কেনিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশকেও রেড জোন বা ভ্রমণ বাতিল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দেয়। এর ঘোষণার আওতায় ৯ এপ্রিল ব্রিটেন সময় ভোর চারটার পর ব্রিটিশ নাগরিকসহ যে ব্যক্তিই বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে প্রবেশ করবেন তাদের বাধ্যতামুলকভাবে ন্যূনতম দশ দিনের জন্য এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি হোটেল কোয়ারেন্টিনে যেতে হবে। সরকার নির্ধারিত হোটেলগুলোতে সরকারের ব্যবস্থাপনায় দশ দিনের জন্য যাত্রীপ্রতি খরচ ১ হাজার ৭৫০ পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ লাখ তিন হাজার টাকার বেশি)। দশ দিনের অতিরিক্ত প্রতি দিনের জন্য যাত্রীকে দিতে হবে আরও ১৫২ পাউন্ড করে। পাঁচ থেকে ১২ বছরের শিশুদের জন্য এ খরচ যথাক্রমে ৩২৫ ও ১২ পাউন্ড এবং বারো বছরের বড় শিশুদের জন্য যথাক্রমে ৬৫০ ও ৪১ পাউন্ড নির্ধারন করা হয়েছে।
কোয়ারেন্টিন চলাকালে দ্বিতীয় এবং অষ্টম দিনে প্রত্যেক যাত্রীকে করোনা টেস্ট করতে হবে। আক্রান্ত হলে সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত রাতপ্রতি অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
এছাড়া আগের মতো লন্ডনগামী ফ্লাইটের ক্ষেত্রে যাত্রীদেরকে আকাশযাত্রা শুরুর ৭২ ঘণ্টা বা তার কম সময় বাকি থাকতে নমুনা দিয়ে পিসিআর টেস্ট করিয়ে কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে বোর্ডিং করতে হবে৷ ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলেও করোনা নেগেটিভ সনদ লাগবে। বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রেও অনুরূপ সনদ বিমানবন্দরে প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক।
ঢাকার উত্তরার নিউ ডিসকভারি ট্যুরস অ্যান্ড লজিস্টিকসের ম্যানেজিং পার্টনার শাহেদ চৌধুরী শনিবার বাংলা ট্রিবিউনকে ফোনে জানান, এ রুটে ৯ তারিখের আগে টিকিট পাওয়াই যাচ্ছে না। বিমানের কোনও সিট নেই। অন্য এয়ারলাইন্সের টিকিটেও শর্ত প্রযোজ্য লেখা থাকায় আমরা অনলাইনে বুকিং দিতে পারছি না। এমন অবস্থায় বাংলাদেশে লকডাউন ঘোষণার পর এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইট চালাবে কি না তা নিয়েও কোনও স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না।
মৌলভীবাজার থেকে সাংবাদিক আহমদ বখত চৌধুরী রতন জানান, ৯ তারিখ থেকে ব্রিটেনে হোটেল কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক হওয়ার পর ঢাকা-লন্ডন রুটে টিকিটের দাম বেড়েছে তিন গুণ। তারপরও নেই। প্রায় সময়ই কমবেশি দশ হাজার ব্রিটিশ-বাংলাদেশি বাংলাদেশে অবস্থান করেন। তারা এখন তাদের ব্রিটেনে ফেরা নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বেন নতুন ভিসা পেয়ে যেসব ছাত্র ব্রিটেন যাচ্ছিলেন তারা। বাড়তি হোটেল কোয়ারেন্টিনের জন্য জনপ্রতি ন্যূনতম গুনতে হবে দুই লাখ তিন হাজার টাকা। টিকিট পেলে ৯ এপ্রিলের আগেই ব্রিটেনের যাত্রীদের ফেরা উচিত।
লন্ডনের হিলসাইড ট্রাভেলসের মালিক হেলাল খান বলেন, হঠাৎ করে হোটেল কোয়ারেন্টিন ও বাংলাদেশে লকডাউনের ঘোষণা আসায় দেশে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে লন্ডনের যাত্রীদের দুর্ভোগের সীমা নেই। লন্ডনে ছুটির সময় হওয়াতে এখন কোনও এয়ারলাইন্সের টিকিট পাওয়া কঠিন।
হেলাল আরও জানান, আমরা লন্ডন ও বাংলাদেশের ট্রাভেলস এজেন্টরা মিলে ৯ এপ্রিলের আগে বিমানের দুটো অতিরিক্ত বিশেষ ফ্লাইটে যাত্রীদের লন্ডনে ফিরিয়ে আনতে বিমানের চেয়ারম্যান ও এমডির কাছে আমরা ইতোমধ্যে অনুরোধ করেছি। এছাড়া অন্যান্য কয়েকটি বিদেশি এয়ারলাইন্সের সঙ্গেও আমরা কথা বলছি।
উল্লেখ্য,গত বছরও এপ্রিল ও জুনে করোনা মহামারিতে প্রথম দফায় বাংলাদেশ সরকার বিমানের মাধ্যমে ও ব্রিটিশ সরকার চার্টার্ড ফ্লাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশে আটকে পড়া যাত্রীদের ব্রিটেনে ফিরিয়ে আনে।
রেহানা বেগম নামে একজন আটকে পড়া যাত্রী বাংলাদেশ থেকে শনিবার ফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গত বছর করোনার সময় বাংলাদেশ থেকে যেসব যাত্রীরা বিশেষ ফ্লাইটে ফিরেছিলেন, তাদের নিয়মিত ফ্লাইটের টিকিট এয়ারলাইন্সের কাছে পাওনা ছিল। ওয়ানওয়ে টিকিট নিয়ে এবার যারা বাংলাদেশে গেছেন তারা খুব বিপদে পড়েছেন। ৯ এপ্রিলের আগে দুই লাখ টাকা দিয়েও সিঙ্গেল টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। আর ৯ তারিখের পরে গুনতে হবে হোটেল কোয়ারেন্টিনের দুই লক্ষাধিক টাকা। আবার বাংলাদেশেও লকডাউনের ঘোষণা দেওয়ায় দেশেও প্রবাসীরা ঘরবন্দি হয়ে পড়বেন।
এসব বিষয়ে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনারের বক্তব্য জানতে বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে শনিবার ইমেইল পাঠিয়ে ও ফোনে যোগাযোগ করা হয়। হাইকমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা উত্তরে জানান, তারা এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল ও নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।