X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছিলেন বাংলাদেশের জন্য নতুন ‘রাগ’ করতে: অজয় চক্রবর্তী

রিয়াদ তালুকদার
২৯ মার্চ ২০২১, ১৭:৫৪আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২১, ২২:২৯

‘রাগসংগীত হচ্ছে একটি রং, একেকটি রস, একেকটি গন্ধ। সেই গন্ধে যখন আশ্রয় নিতে হয় সব গানেই আশ্রয় নিয়েছি। পল্লীসংগীত থেকেই রাগসংগীতের জন্ম! তফাৎ কোথায়? খালি মনের ভেতরের ছবিটা দেখার তফাৎ। ধরুন, একটি রাগের রূপকল্পনা করছি- এটাই এক ধরনের ভাব। এই ভাবই রাগসংগীত ও চলচ্চিত্র সংগীত। এই ভাবটাই আসল। ভাবের সঙ্গেই কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করতে হয়’- কথাগুলো বলছিলেন উপমহাদেশের খ্যাতনামা শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ২৫ মার্চ ভারত থেকে বাংলাদেশে আসেন বিখ্যাত এই সংগীতসাধক। নানা ব্যস্ততার মধ্যেই গতকাল (২৮ মার্চ) তার সাময়িক আবাসস্থল রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ঘণ্টা খানেক সময় দেন।

বাংলা ট্রিবিউনের সাথে একান্ত আলাপকালে তিনি তুলে ধরেন রাগসংগীত নিয়ে তার পথচলা ও ভাবনার কথা। জানালেন, বাংলাদেশে রাগসংগীত নিয়ে প্রশিক্ষকের ভূমিকায় যে কোনও ডাকে সাড়া দিতে প্রস্তুত তিনি। নিজের অর্জিত জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে কোনও দ্বিধা নেই তার।

আলাপচারিতায় অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‌‘আমাদের উপমহাদেশে দু’ধরনের সংগীত রয়েছে; একটি হচ্ছে, রাগসংগীত অন্যটি হচ্ছে ভাব সংগীত। আর লোকসংগীত যার সাথে কোনও সংগীত মেলে না। যখন ভাব সংগীত আসে তখন রাগের অঙ্গ থাকলেও ভাবটাই মেন। এজন্য দরকার শিক্ষা, এজন্য দরকার সংস্কার। সেটা আমাদের ভারতবর্ষে হয়নি। এ বিষয়ে মানুষকে বোঝানো হয়নি, জানানো হয়নি। আমরা শুধু টাকার জন্য, নামের জন্য হাহাকার করছি। এটা সাধারণ শিক্ষা থেকে অতি অসাধারণ শিক্ষাগ্রহণের পথ হতে পারে না। রাগসংগীতের যেন সবাই উপভোগ করতে পারেন, ফায়দা নিতে পারেন, লাভ নিতে পারেন কিন্তু মুশকিল কি জানেন, আমাকে প্রথমে বুঝতে হবে যে, এটি খুবই পরিশ্রমের একটি কাজ! ত্যাগ পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে এটি অর্জন করা সম্ভব। আমার ইচ্ছে, যদি সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভব হয়, সপ্তাহে দু'দিন করে হলেও কলকাতা থেকে অনলাইনে ক্লাস আয়োজন করা। যেটা শুধু হবে বাংলাদেশের জন্য।’

পণ্ডিত অজয়
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শেষদিন জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নতুন এক রাগ। কথায় কথায় তুলে ধরেন- এই নতুন রাগ সৃষ্টির পেছনে ঘটনা। বললেন, ‌‌‘রাগ একটা সমুদ্রের মতো। আর সমুদ্রকে একটা গ্লাসে করে পরিবেশন করা যায় না। একটা রাগের পরিচয় প্রচার প্রসার করতে গেলে, তার বিস্তার দেখাতে গেলে, সময়ের প্রয়োজন হয়। রাগের কোনও পরিচয় সেদিন অনুষ্ঠানে দিতে পারিনি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) বলেছিলেন যে, আমি যেন একটা নতুন ‘রাগ’ সৃষ্টি করে বাংলাদেশের জন্য গাই। মনে হয়েছে, আমি গঙ্গার জলে গঙ্গার পূজো করেছি। বাংলাদেশের এই সংগীতপ্রেমী মানুষ তাদের জন্য পরিবেশনা করছি। নাম দিয়েছি ‘মৈত্রী রাগ’। এটি সৃষ্টি করতে একমাস সময় পাই আমি। আমাদের দুই দেশের মধ্যে সবসময় মৈত্রী ছিলো, এখনও আছে। অতিথি পরায়ণতা ভারতবর্ষে বেশি, তবে এতটা ছিল না যেটা বাংলাদেশে আছে। এখানে মানুষের প্রতি অবিশ্বাস্য ভালোবাসা আছে।’

আলাপচারিতায় উঠে আসে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুরের প্রসঙ্গ। তার প্রতি মুগ্ধতার কথাও জানালেন তিনি। তার ভাষ্য, ‘‘শেখ মুজিবুর রহমান জি’র মতো মানুষ ছিলেন বলেই আমার নতুন রাগটি সৃষ্টি হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ রাগ, যাতে নতুন গন্ধ পাওয়া যায়। আমি বহুবার শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতা শুনেছি। তার কণ্ঠ এখনও আমার কানে বাজে। নিশ্চয়ই বাংলাদেশের উন্নতির জন্য তার আত্মা জাগ্রত আছে। আমি চাই, সংগীতে বাংলাদেশ আবার শ্রেষ্ঠ আসন গ্রহণ করুক, উন্নতি করুক। তরুণ ছেলে-মেয়েদের জন্য আমি যদি কিছু করতে পারি; সেটা হবে আমার সব থেকে বড় কাজ।’’

নতুন প্রজন্মকে নিয়ে আশাবাদের কথাই বললেন এই গুরু। নিজের পর্যবেক্ষণও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, ‘পরিশ্রম করার মানসিকতা বাংলাদেশে কমে গেছে। পশ্চিমবঙ্গেও কমে গেছে, ভীষণভাবে কমে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে অনেক সুন্দর সুন্দর কণ্ঠ আছে। আমাদের পরিচিত ছেলে-মেয়েরা আছে, তারাও অনেক ভালো গান করে! কিন্তু তারা জানে না, তারাও শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তাদের অনুষ্ঠান সারাপৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে। আমাদের এখানে (ভারতে) ভয়েস ট্রেনিং কিংবা ভয়েস কালচারের বিষয়টি এখনও গড়ে ওঠেনি। ভয়েসকে ট্রেইন্ড করতে হয়। সবসময় ট্রেনিংয়ের মধ্যে থাকলে সেই ভয়েসটা কালচারালড হতে হতে একটা জায়গায় গিয়ে পৌঁছে।’

বাংলাদেশের সংগীত নিয়ে অজয় চক্রবর্তীর বেশ কিছু ভাবনা রয়েছে। তিনি তার নিজের ইচ্ছে প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ একটা রত্ন খনি। দেখুন, এখানকার বাছা বাছা যদি ১০টি ছেলে-মেয়ে হয়; সেক্ষেত্রে একটি দেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে দশটি আর্টিস্টই যথেষ্ট। লতা মঙ্গেশকর ভারতবর্ষকে রিপ্রেজেন্ট করতে একাই যথেষ্ট। যারা অল্প বয়সী, যাদের বয়স ১২ থেকে ১৮, যাদের মধ্যে সংগীতের বীজ আছে, তাদের যদি একটি শিক্ষা পদ্ধতির ব্যবস্থা করা যায় তাহলে খুবই ভালো হবে। ধরুন, প্রথমে অনলাইনে হলো। পরবর্তী সময়ে বেছে বেছে কয়েকজন ছেলে-মেয়েকে শিক্ষাগ্রহণের জন্য যদি আমার কাছে পাঠানো হয়, এটা খুবই ভালো হবে। সেটা যদি সরকারিভাবে ওপেনলি হয় তাহলে অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন কিংবা ভালো তরুণ কণ্ঠ উঠে আসবে।’ অজয় চক্রবর্তী

অজয় চক্রবর্তী নিজেই মহামূল্যবান রত্ম। পেয়েছেন ভারতের পদ্মভূষণ ও পদ্মশ্রী সম্মান। এছাড়া সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি ও সেরা কণ্ঠশিল্পীর জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাস্ত্রীয় সংগীতেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ করেন। শুধু তিনি নন, তার কন্যা কৌশিকি চক্রবর্তীও বাংলার গর্ব। তিনিও শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী। পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর গড়ে তোলা সংগীত স্কুল শ্রুতিনন্দনে এখনও বহু ছেলেমেয়েকে শাস্ত্রীয় সংগীতের ওপর তালিম দিচ্ছেন তিনি নিজে হাতে। কৌশিকি

রাগসংগীত ছাড়াও এই গুণী শিল্পী কণ্ঠ দিয়েছেন সিনেমার গানে। গেয়েছেন আধুনিক গান। রাগসংগীতের পাশাপাশি ভাবকে সামনে আনতে পারাটা নিজের পরিশ্রমের ফসল হিসেবে মনে করেন বিখ্যাত এই পণ্ডিত।

/এম/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…